মন্ত্রীর পাশে দশরথ সিং সর্দার। নিজস্ব চিত্র
শিশুরা খেলতে-খেলতে পড়া শিখবে। সে জন্য গ্রামে শিশু আলয়ের জমি খোঁজা হচ্ছে শুনে এগিয়ে গিয়েছিলেন এক চাষি। তাঁর জমিতেই গড়ে উঠল শিশু আলয়। মঙ্গলবার মানবাজারের গোপালনগরের বনডি গ্রামের সেই চাষি দশরথ সিং সর্দারের হাতেই উদ্বোধন হল শিশু আলয়ের। সঙ্গে ছিলেন রাজ্যের নারী ও শিশু বিকাশ এবং সমাজকল্যাণ দফতরের মন্ত্রী শশী পাঁজা।
রাজ্য সরকার অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রগুলি এখন শিশুদের মনোগ্রাহী করতে শিশু আলয় তৈরি করছে। অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের ভিতরে শিক্ষা উপযোগী নানা উপকরণ দিয়ে প্রাক্ প্রাথমিক শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু, এখনও বহু জায়গাতেই স্থায়ী অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র নেই। বহু কেন্দ্র প্রাইমারি স্কুল বা মন্দিরের বারান্দায় কিংবা আটচালায় চলছে। বনডির কেন্দ্রও এত দিন অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের কর্মীর বাড়ির বারান্দায় চলত।
গোপালনগর পঞ্চায়েতের প্রধান কিশোর মাহাতো বলেন, ‘‘আমরা শিশু আলয় নির্মাণের জন্যে দশরথবাবুর কাছে জমি চেয়েছিলাম। তিনি এক কথায় রাজি হয়ে যান।’’ দশরথবাবু বলেন, ‘‘আমার দান করা জমিতে শিশুরা খেলাধূলা করবে, লেখাপড়া শিখবে— এর থেকে আনন্দের আর কিছু হয় না। ওই জমি পড়েই ছিল। একটা ভাল কাজে লেগেছে এই ভেবে ভাল লাগছে।’’
এ দিন বনডি গ্রাম থেকে কিছু দূরে মেট্যালা গ্রামের সভায় মন্ত্রী বলেন, ‘‘রাজ্যে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রগুলিতে প্রত্যেক মাসের তৃতীয় সোমবার ‘শিশু আলয় দিবস’ পালন করা হবে।’’ দফতর সূত্রে খবর, ওই বিশেষ দিনে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রগুলিতে শিশুদের শিশু আলয়ের মতো খেলার সঙ্গে পড়ানোর চেষ্টা করা হবে।
দফতরের সচিব সঙ্ঘমিত্রা ঘোষ বলেন, ‘‘আমাদের রাজ্যে প্রায় ১ লক্ষ ১৫ হাজার অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র রয়েছে। তা শুধু খিচুড়ি আর ডিম খাওয়ার কেন্দ্র নয়। শিশুদের মানসিক ও শারীরিক বিকাশের লক্ষ্যে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রতিটি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রকে শিশু আলয়ে পরিণত করার পরিকল্পনা নিয়েছেন। প্রত্যেকটি কেন্দ্রের শিশুরা যাতে শিশু আলয়ের সুবিধা পায়, আমরা সেই লক্ষে এগোচ্ছি।’’ এ দিন বৈদ্যুতিন মাধ্যমের সাহায্যে মন্ত্রী রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় ১৪ হাজার হাজার শিশু আলয়ের উদ্বোধন করেন।
শিশু আলয়ে কী শেখানো হচ্ছে?
দফতরের কর্তারা জানাচ্ছেন, এখানে শিশুদের পুষ্টির পাশাপাশি খেলার ছলে শিক্ষার নানা উপকরণ রাখা থাকছে। শিশুদের রং চেনানো, জ্যামিতিক আকার সম্পর্কে ধারণা দেওয়া, খেলার উপকরণের সাহায্যে অক্ষর ও সংখ্যার সঙ্গে তাদের পরিচয় ঘটানোর কাজ হয়। অর্থাৎ, শিশুরা খেলতে খেলতে শিক্ষাপ্রাপ্ত হবে।
দফতরের কর্তাদের কথায়, ‘‘প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত কর্মীরা শিশুদের সঙ্গে এমন ভাবে মিশবেন, যাতে প্রত্যেক শিশু যেন শিশু আলয়কে নিজেদের দ্বিতীয় বাড়ি হিসাবে চেনে।’’
দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৫ সালে রাজ্যে এক হাজার শিশু আলয় নির্মিত হয়েছিল। ২০১৬ সালে ১,৪০৪টি, ২০১৭ সালে ১০ হাজার তৈরি হয়। রাজ্যে ৫২ হাজার ১১৩টি কেন্দ্রের নিজস্ব ভবন রয়েছে। ধীরে ধীরে রাজ্যের সমস্ত অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রকে শিশু আলয়ে পরিণত করার ভাবনা রয়েছে দফতরের।
এ দিন অনুষ্ঠানে পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদ মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতো, অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ বিভাগের রাষ্ট্রমন্ত্রী সন্ধ্যারানি টুডু, সভাধিপতি সুজয় বন্দোপাধ্যায়, সহ-সভাধিপতি প্রতিমা সোরেন, জেলাশাসক অলকেশ প্রসাদ রায়, বান্দোয়ানের বিধায়ক রাজীব সোরেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy