Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

আমরুল গ্রামে স্কুলই আকর্ষণ

কোনও পৃষ্ঠপোষণা ছাড়াই ফলে-ফুলে ভরে থাকে স্কুলটি। ক্লাস ঘরের বারান্দায় নানা কিসিমের ফুলের টব।

নবরূপে: বাঘমারি প্রাথমিকে ‘ইনস্টলেশন’। নিজস্ব চিত্র

নবরূপে: বাঘমারি প্রাথমিকে ‘ইনস্টলেশন’। নিজস্ব চিত্র

তারাশঙ্কর গুপ্ত
ইন্দাস শেষ আপডেট: ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০১:৫৫
Share: Save:

ব্লক সদর ইন্দাস থেকে প্রায় ১৪ কিলোমিটার দূরে এ যেন কাশ্যপের আশ্রম।

যে আশ্রমে সহোদরের স্নেহে গাছেদের লালন করত শকুন্তলা। ছেড়ে যাওয়ার সময় এলে বনস্পতিরা কেউ তাকে দিত ক্ষৌম বসন, কেউ পায়ের আলতা, কেউ গায়ের অলঙ্কার। আমরুল পঞ্চায়েতের বাঘমারি প্রাথমিক স্কুলও যেন অনেকটা সেই রকমের। খুদে পড়ুয়া শেখ মনিরুজ্জামান জানাচ্ছে, বাগানে ঘুরে বেড়ানোর টানেই এক দিনও স্কুল কামাই করে না সে। এমনকি, আমরুলের অনেকেই বাড়িতেই আত্মীয়-কুটুম্ব এলে দ্রষ্টব্য বলে ওই স্কুলে ঘুরতে নিয়ে যান।

কোনও পৃষ্ঠপোষণা ছাড়াই ফলে-ফুলে ভরে থাকে স্কুলটি। ক্লাস ঘরের বারান্দায় নানা কিসিমের ফুলের টব। ছাদ থেকে ঝুলছে ফার্ন। লতিয়ে নেমেছে মানিপ্লান্ট। প্রধান শিক্ষক নারায়ণচন্দ্র মেদ্যা জানান, বছর সাত-আট আগে বাগান গড়ার কাজ শুরু হয়েছিল। অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছিলেন শিক্ষক মৃণালকান্তি নন্দী। তাঁর বরাবরের গাছের শখ। স্কুলের চার জন শিক্ষক নিজেরাই চাঁদা দিয়ে পাঁচ কাঠা জমিতে নানা রকমের ফুল-ফলের গাছ লাগান।

মৃণালবাবু দেখান, প্রায় তিরিশ রকমের গোলাপ, পঁচিশ রকমের মরসুমি ফুল ফুটেছে। তারই মধ্যে বাতিল মোটরবাইকের খোলসে বাঁশের বাখারি আর জাল লাগিয়ে তৈরি করা হয়েছে মস্ত প্রজাপতি। শিক্ষকেরা জানালেন, তার মধ্যে লাগানো হবে মহারাষ্ট্র থেকে আনা মালপেজিয়া গাছ। ফেলে দেওয়া নানা কিছু জুড়ে একটা ফোয়ারাও বানানো হয়েছে। অদূরে ফলেছে ড্রাগন ফ্রুট, স্ট্রবেরি। রয়েছে ভেষজ উদ্যান। বায়ো-ডিজেল তৈরি হয় জ্যাথ্রোফা গাছ থেকে। তা-ও আছে।

প্রধান শিক্ষক জানান, ছুটির দিনেও স্কুলে আসেন মৃণালবাবু। আর আসে চতুর্থ শ্রেণীর শেখ হাফিজুদ্দিন, তাজমিনা খাতুনদের মতো অনেক ছাত্রছাত্রী। স্কুলের আগে-পরে আর ছুটিছাটার দিনে হাতে-হাত মিলিয়ে গাছেদের পরিচর্যা চলে। চারা কিনতে অনেক খরচ। স্কুলেই তৈরি করে নেন তাঁরা। মিড-ডে মিলের আনাজ তো আসে স্কুলের বাগান থেকেই। সেই আনাজের খোসা থেকে কম্পোজ়ড সারা বানিয়ে দেওয়া হয় গাছের গোড়ায়।

বিডিও (ইন্দাস) মানসী ভদ্র চক্রবর্তীও স্কুলটি দেখে মুগ্ধ। তিনি বলেন, ‘‘এমন উদাহরণ কমই রয়েছে। ছবির মতো সাজানো পুরো স্কুলটা।’’ আর মৃণালবাবুর কথায়, ‘‘বাচ্চাদের উৎফুল্ল মুখগুলোই এই বাগানের সব থেকে সুন্দর ফুল।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

School Graden
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE