Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

ঘরে ফিরলেন অক্ষয়, এলেন সেই দিদিরাও

ঝাড়খণ্ডের শ্বশুরবাড়ি থেকে স্কুলপড়ুয়া সন্তানদের নিয়ে বাপের বাড়ি এসেছিলেন তাঁর দুই দিদি। দু’জনেই বলছেন, ‘‘ভাইয়ের জন্য গর্ব হচ্ছে। আমরা কোনও দিন আমাদের সন্তানের বিয়ে অল্প বয়সে দেব না।’’

পরিবারের সবার সঙ্গে অক্ষয় ভগৎ। নিজস্ব চিত্র

পরিবারের সবার সঙ্গে অক্ষয় ভগৎ। নিজস্ব চিত্র

দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায় 
বাঘমুণ্ডি শেষ আপডেট: ১২ এপ্রিল ২০১৯ ০০:৪১
Share: Save:

বছর পার করে ঘরের ছেলে ফিরে আসছে ঘরে। তাঁর জন্য শ্বশুরবাড়ি থেকে ফিরে এসেছেন দুই দিদি। যে দুই দিদির বিয়ে হয়ে গিয়েছিল অল্প বয়সে। ছেলেটি চেষ্টা করেও রুখতে পারেনি। তার পরে, বড় হয়ে সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পড়েছিল। একের পরে এক রাজ্য ঘুরেছে। নাবালিকা বিয়ে রুখতে গড়ে তুলতে চেয়েছে সচেতনতা।

বুধবার সেই অক্ষয় ভগৎ ফিরে এসেছেন পুরুলিয়ার বাঘমুণ্ডি ব্লকের বুড়দা গ্রামের বাড়িতে। ঝাড়খণ্ডের শ্বশুরবাড়ি থেকে স্কুলপড়ুয়া সন্তানদের নিয়ে বাপের বাড়ি এসেছিলেন তাঁর দুই দিদি। দু’জনেই বলছেন, ‘‘ভাইয়ের জন্য গর্ব হচ্ছে। আমরা কোনও দিন আমাদের সন্তানের বিয়ে অল্প বয়সে দেব না।’’ বাড়িতে রয়েছে ছোট বোন। পুনম। স্থানীয় স্কুলে দশম শ্রেণিতে পড়ে সে। আর ছোটছোট ছেলেমেয়েদের পড়িয়ে সংসার খরচের কিছুটা উপার্জন করে। ছেলে ঘর ছাড়ার পরেই অক্ষয়ের বাবা ভুবনেশ্বরবাবু মেনে নিয়েছিলেন, অল্প বয়সে মেয়ের বিয়ে দেওয়াটা ঠিক হয়নি। অক্ষয় তখন কিশোর ছিল বটে। কিন্তু তার কথাটাই ন্যায্য ছিল। এখন তিনি বলছেন, ‘‘কেউ নাবালিকা মেয়ের বিয়ে দিলে প্রতিবাদ করব।’’

প্রথম থেকেই খুব অভাবের সংসার অক্ষয়দের। বাবা রাঁচীর একটি হোটেলে কাজ করেন। মাধ্যমিকের পরে পড়াশোনায় ইতি টানতে হয়েছে অক্ষয়কে। একটা সময়ে খবরের কাগজ বিক্রি করেছেন। বাজারে বাজারে ঘুরে ঝালমুড়ি বেচেছেন। ২০১৮ সালের ৫ মার্চ একটি সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পড়েছিলেন। সঙ্গে একটি স্মার্ট ফোন, ভারতের ম্যাপ, আর অল্প নগদ টাকা। যাত্রা শুরু হয়েছিল বাঘমুণ্ডির লহরিয়া শিবমন্দির থেকে। বুধবার বিকেলে ফিরে এসে ওই মন্দিরে পুজো দিয়ে সন্ধ্যায় বাড়ি ঢুকেছেন।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

অক্ষয়ের দাবি, ৪০১ দিনে ২৬টি রাজ্যে ঘুরেছেন তিনি। পেরিয়েছেন প্রায় ২৮ হাজার কিলোমিটার পথ। মঙ্গলবার দু’চাকায় এসে পৌঁছেছিলেন পুরুলিয়ায়। সেখানে জগন্নাথ কিশোর কলেজের এনএসএস ইউনিট তাঁকে সংবর্ধনা দেয়। অক্ষয়কে ওই ইউনিটের লাইফ মেম্বার করা হয়েছে বলে কলেজ সূত্রে জানা গিয়েছে। বুধবার ঘরে ফেরার পথেও ছিল সংবর্ধনার আয়োজন। বাঘমুণ্ডির গোবিন্দপুরে পৌঁছয় তাঁর সাইকেল। ছিল ব্যান্ড পার্টি। শুরু হয় আবির খেলা। অক্ষয়কে নিয়ে গ্রাম পরিক্রমা করেন এলাকার তরুণেরা। অক্ষয় বলছেন, ‘‘রাস্তায় অনেক অভিজ্ঞতা হয়েছে। মিলেছে পুরস্কারও। তবে যতদিন মেয়েদের নাবালিকা অবস্থায় বিয়ের থেকে বাঁচাতে না পারছি, ততক্ষণ লড়াইটা চালিয়ে যেতে হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Akshay Bhagat Purulia Child Marriage
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE