Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

একশো দিনের প্রকল্পে এ বার ছাই-ইট

বেসরকারি উদ্যোগে ‘অ্যাশ ব্রিক’ বা ছাই-ইট তৈরি হচ্ছিল। এ বার একশো দিনের প্রকল্পে বাঁকুড়ার কেঞ্জাকুড়ায় ডিভিসির পরিত্যক্ত ছাই দিয়ে ইট তৈরির কাজ শুরু হল। রাজ্য পঞ্চায়েত দফতরের কমিশনার দিব্যেন্দু সরকার বলেন, “বাঁকুড়া গোটা রাজ্যকে পথ দেখাচ্ছে। আমি নিশ্চিত ইটভাটা তৈরির যে প্রকল্প বাঁকুড়ায় শুরু হয়েছে, তার সাফল্য দেখে আগামী দিনে অন্যান্য জেলাগুলিও এই প্রকল্প গড়তে এগিয়ে আসবে।” জেলা সফরে ‌আসা মুখমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতে মঙ্গলবার তেমনই আরও পাঁচটি প্রকল্পের শিলান্যাস হতে চলেছে।

কেঞ্জাকুড়ার ছাই ইটের কারখানা। ছবি: অভিজিৎ সিংহ।

কেঞ্জাকুড়ার ছাই ইটের কারখানা। ছবি: অভিজিৎ সিংহ।

রাজদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ১১ মে ২০১৫ ০০:৪৭
Share: Save:

বেসরকারি উদ্যোগে ‘অ্যাশ ব্রিক’ বা ছাই-ইট তৈরি হচ্ছিল। এ বার একশো দিনের প্রকল্পে বাঁকুড়ার কেঞ্জাকুড়ায় ডিভিসির পরিত্যক্ত ছাই দিয়ে ইট তৈরির কাজ শুরু হল।

রাজ্য পঞ্চায়েত দফতরের কমিশনার দিব্যেন্দু সরকার বলেন, “বাঁকুড়া গোটা রাজ্যকে পথ দেখাচ্ছে। আমি নিশ্চিত ইটভাটা তৈরির যে প্রকল্প বাঁকুড়ায় শুরু হয়েছে, তার সাফল্য দেখে আগামী দিনে অন্যান্য জেলাগুলিও এই প্রকল্প গড়তে এগিয়ে আসবে।” জেলা সফরে ‌আসা মুখমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতে মঙ্গলবার তেমনই আরও পাঁচটি প্রকল্পের শিলান্যাস হতে চলেছে।

ইতিমধ্যেই বাঁকুড়া ১ ব্লকের কেঞ্জাকুড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের পচিরডাঙা এলাকায় প্রায় ৫ বিঘা জমির উপরে ছাই-ইট তৈরির কারখানা চালু হয়েছে। একশো দিনের কাজের প্রকল্প ও কেঞ্জাকুড়া গ্রাম পঞ্চায়েত যৌথ ভাবে এই কাজে নেমেছে। ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ২০ লক্ষ টাকা। এই কারখানায় দৈনিক ৪০টি পরিবার কাজ করছে। শ্রমিকদের একশো দিনের প্রকল্পে মজুরি দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি ইট বিক্রির লভ্যাংশেরও ভাগ দেওয়া হবে শ্রমিকদের।

কেঞ্জাকুড়ার এই কারখানা থেকে বছরে ৩০০ কর্ম দিবসে ৩৬ লক্ষ ইট তৈরি হওয়ার কথা। বাজারে এই ইটের দাম প্রাথমিক ভাবে প্রতিটি ৪ টাকা করে স্থির করেছে জেলা প্রশাসন। উৎপাদিত ইটের অর্ধেক একশো দিনের প্রকল্পের কাজের জন্য নেওয়া হবে বিনামূল্যে। বাকি ইট বাজারে বিক্রি করা হবে। ইট বিক্রি করে যে লভ্যাংশ উঠে আসবে তার ৭৫ শতাংশ শ্রমিক সোসাইটির ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে জমা পড়বে। প্রত্যেকটি শ্রমিক পরিবার সমান ভাবে সেই টাকার ভাগ পাবেন। বাকি ২৫ শতাংশ লভ্যাংশের টাকা চলে যাবে গ্রাম পঞ্চায়েতের তহবিলে। বাঁকুড়া ১ বিডিও সুপ্রভাত চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, “আমরা হিসেব করে দেখেছি ইট ভাটার সঙ্গে যুক্ত প্রত্যেকটি পরিবার বছরে অন্তত ৭০ হাজার টাকা লভ্যাংশ থেকে পেতে পারেন।”

ইটভাটার শ্রমিক কার্তিক বাউরি, বিশ্বনাথ বাউড়ি বলেন, ‘‘প্রথম থেকেই আমরা ইট ভাটা তৈরির কাজের সঙ্গে যুক্ত। কয়েক সপ্তাহ মাটি কেটে ভাটা তৈরি করেছি। ১ বৈশাখ থেকে ছাই দিয়ে ইট তৈরি করেছি। প্রথম একমাসের টাকা পেয়েছি। লাভ থেকেও আরও পাব বলে শুনেছি।’’ তাঁরা জানান, আগে ১০০ দিনের কাজ যৎসামান্য পেতেন। পেটের ধান্দায় তাই পুবে খাটতে যাওয়া তাঁরা ছাড়তে পারেননি। ফলে এই ইটভাটার দিকেই তাঁরা এখন ভরসা করে রয়েছেন। তাঁরা বলেন, ‘‘মাঝে মধ্যেই কমিটির বৈঠক হচ্ছে। আমরা কিছু বললে গুরুত্ব দিয়ে শোনাও হচ্ছে। সব কিছু ঠিকঠাক চললে আর সংসার চালানোর ভাবনা থাকবে না।’’

সরকারি কাজে ছাই-ইটের ব্যবহারের নির্দেশ আগে থেকেই ছিল। কিন্তু সরকারি কাজে ঠিকাদাররা তাদের ইট কিনছেন না বলে মাসখানেক আগে জেলাশাসকের দ্বারস্থ হয়েছিল বাঁকুড়া জেলার ছাই-ইট উৎপাদকদের সংগঠন। এই পরিস্থিতিতে এই প্রকল্প কতটা লাভজনক? একশো দিনের কাজ প্রকল্পের জেলা আধিকারিক বাবুলাল মাহাতো বলেন, “মাটির ইটের চেয়েও ছাই দিয়ে তৈরি এই ইট অনেক বেশি শক্ত-পোক্ত।’’ তাঁর আশা, ‘‘আগামী দিনে এই ইটের চাহিদা আরও বাড়বে জেলায়। মাটির ইটের তুলনায় ছাই ইটের দামও কিছুটা কম।” কাজেই বাজার ধরতে বিশেষ একটা অসুবিধা হবে না বলেই মনে করছেন তিনি।

ইটভাটার কাজ পরিচালনার জন্য বিডিওর নেতৃত্বে একটি কমিটি গড়া হয়েছে। কমিটিতে গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রতিনিধি, শ্রমিকদের নিয়ে গড়া স্বনির্ভর দলের কয়েক জন সদস্য ও জেলাশাসকের প্রতিনিধিরা রয়েছেন। গ্রাম পঞ্চায়েতের তহবিল থেকে ইট তৈরির মেশিনের দাম, বিদ্যুৎ খরচ ও কারখানায় পানীয় জলের ব্যবস্থার জন্য খরচের টাকা নেওয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসনের নির্দেশে এখানে কর্মরত ৪০টি পরিবারকে নিয়ে একটি সোসাইটি গড়া হয়েছে। ইট ভাটা চালু করার জন্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের ছাড়পত্রও পেয়েছে জেলা প্রশাসন। জেলাশাসক বিজয় ভারতী বলেন, “দু’ভাবে আমরা এই প্রকল্পের লাভ পাব। একদিকে এখানকার ইট একশো দিনের প্রকল্পের বিভিন্ন নির্মাণ কাজে ব্যবহার হবে। সে ক্ষেত্রে বিনামূল্যেই ইট মিলবে এখান থেকে। অন্যদিকে গ্রামীণ অর্থনীতিও বদলে যাবে।”

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, কেঞ্জাকুড়ার পাশাপাশি বাঁকুড়া ১ ব্লকের আঁধারথোল ও জগদল্লা ২ গ্রাম পঞ্চায়েত, গঙ্গাজলঘাটির লটিয়াবনি গ্রাম পঞ্চায়েত, ছাতনার ঝুঁজকা ও শালডিহা গ্রাম পঞ্চায়েতেও ছাই-ইট তৈরির কারখানা গড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জেলা প্রশাসন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জেলা সফরে এসে এই পাঁচটি ইটভাটার ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন। এ ছাড়াও পাত্রসায়র, রাইপুর, ইন্দাস ও ওন্দা ব্লকেও ছাই-ইট তৈরির কারখানা গড়ার বিষয়ে আলোচনা চলছে।

একশো দিনের প্রকল্পে স্থায়ী সম্পদ গড়ে ইতিমধ্যেই নজর কেড়েছে বাঁকুড়া জেলা প্রশাসন। জেলা জুড়ে গড়ে তোলা হয়েছে ২৫৩টি আম বাগান। যা থেকে প্রতি বছর প্রত্যক্ষ ভাবে লাভবান হচ্ছে প্রায় ৫০০টি স্বনির্ভর গোষ্ঠী। এ বার ছাই-ইট নিয়েও প্রবল আশায় শ্রমিকদের পাশে জেলা প্রশাসন।

ছাইয়ে লুকিয়ে বিষ, আশঙ্কা চিকিৎসকদের
নিজস্ব সংবাদদাতা • বাঁকুড়া

তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের পরিত্যক্ত ছাই মানুষের শরীরে ঢুকে নানা রোগের সৃষ্টি করতে পারে বলে সতর্ক করছেন চিকিৎসকেরা। এ বিষয়ে শ্রমিকদের সতর্ক করা আবশ্যক বলেও মনে করছেন অনেকে। বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সুপার পঞ্চানন কুণ্ডুর মতে, “ছাই শ্বাসের মাধ্যমে শরীরে ঢুকে শ্বাস-প্রশ্বাসের গতিকে ব্যাহত করতে পারে। শ্বাসকষ্টের মতো রোগ হওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে।” বিষয়টি তাঁদের নজরে রয়েছে বলেও জানাচ্ছেন প্রশাসনিক আধিকারিকেরা। বাবুলালবাবু বলেন, “বিপদ এড়াতে শ্রমিকদের আমরা মাস্ক ও গ্লাভস দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।” যদিও পচিরডাঙার ইটভাটায় গিয়ে দেখা গেল কর্মীরা কোনও রকম নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা ছাড়াই কাজ করছেন। খালি হাতেই ছাই তুলে কড়াইয়ে মজুত করছেন। আবার কাঁচা ইট হাতে করে তুলে রোদে শুকোতে দিচ্ছেন। কেন এখনও তাঁদের নিরাপত্তা সামগ্রী দেওয়া হয়নি? একশো দিনের জেলা প্রকল্প আধিকারিক বাবুলাল মাহাতোর দাবি, “ওই সব জিনিস কেনার জন্য আমরা টেন্ডার ডাকার প্রক্রিয়া শুরু করেছি। কিছু দিনের মধ্যেই শ্রমিকদের হাতে ওই সব সামগ্রী তুলে দেওয়া হবে।” নতুন রোজগারের আশায় থাকা রাসু বাউড়ি, লাল্টু বাউড়িরাও বলছেন, ‘‘ছাই নাকে ঢুকলে রোগ হতে পারে বলে শুনেছি। কিন্তু এখনও আমাদের তেমন কোনও সমস্যা হয়নি। তবে আধিকারিকরা জানিয়েছেন, শীঘ্রই আমাদের মুখের ঢাকা ও গ্লাভস দেবেন। তাহলে আর ভয় কীসের?’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE