Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Natural Calamity

বাজ নিয়ে সতর্ক করতে অডিয়ো ক্লিপ

জেলা বিপর্যয় ব্যবস্থাপনা দফতর ও প্রশাসন সূত্রে খবর, এ পর্যন্ত বজ্রাঘাতে মৃতের সংখ্যা ১০।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

দয়াল সেনগুপ্ত
সিউড়ি শেষ আপডেট: ২৭ মে ২০২০ ০৬:২৮
Share: Save:

সোমবার বিকেলে আকাশ ছেয়ে গিয়েছিল কালো মেঘে। দুই সঙ্গীর সঙ্গে দুবরাজপুরের বেলসাড়া মাধ্যমিক শিক্ষাকেন্দ্রের বারান্দায় আশ্রয় নিয়েছিল বছর ষোলোর কিশোর পথিক দাস। ঠিক সেই এমএসকে ছুঁয়ে পড়ল বাজ। দুই সঙ্গী প্রাণে বাঁচলেও বজ্রাঘাতে মৃত্যু হয় ওই কিশোরের।

চলতি মাসের ১৪ তারিখ বিকেলে মল্লারপুরে একটি মাঠ ফুটবল খেলার প্রস্তুতি চলছিল। বৃষ্টি শুরু হলে মাঠের ধারে একটি বাঁধানো বটগাছের নীচে গিয়ে বসেছিলেন কয়েক জন যুবক। পাশের তালগাছ ছুঁয়ে বাজ পড়লে ঘটনাস্থলেই মারা যান চার যুবক।

জেলা বিপর্যয় ব্যবস্থাপনা দফতর ও প্রশাসন সূত্রে খবর, এ পর্যন্ত বজ্রাঘাতে মৃতের সংখ্যা ১০। বর্ষাকাল শেষ হওয়া পর্যন্ত আরও কত জনের প্রাণ কাড়বে বাজ, সেটাই চিন্তায় রেখেছে দফতরকে। সে জন্য বজ্রাঘাত থেকে বাঁচতে কী কী করা উচিত আর কী কী নয়, সে ব্যাপারে ব্লকে ব্লকে মাইকিং করানোর পরিকল্পনা নিয়েছে জেলা প্রশাসন। বীরভূমের জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসু বলেন, ‘‘বজ্রাঘাতে মৃত্যুর ঘটনা উদ্বেগজনক। কী ধরনের সতর্কতা নেওয়া উচিত বাজের হাত থেকে বাঁচতে, তা নিয়ে একটি অডিয়ো ক্লিপ তৈরি করানো হবে। করোনা সতর্কতা প্রচারের পাশাপাশি সেই রেকর্ডিংও বাজানো হবে। সব বিডিও-কে নির্দেশ দিচ্ছি।’’

যেহেতু এই সময়টায় চাষের কাজে গ্রাম বাংলার প্রচুর সংখ্যক মানুষ খোলা আকাশের নীচে থাকতে বাধ্য হন, ঝড়-বৃষ্টি হলেই যেন নিয়ম করে ঘটছে প্রাণহানির ঘটনা। ব্যতিক্রম নয় বীরভূমও। আধিকারিকদের চিন্তার কারণ, জেলায় অন্যান্য প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের দরুণ যত মানুষ মারা যান, বাজ পড়ে মৃত্যুর ঘটনা বেশ কয়েকগুণ বেশি। তাই সতর্কতা প্রচারের এই ভাবনা। আবহবিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, বজ্রপাত বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে বায়ুদূষণের মাত্রা বৃদ্ধির সম্পর্ক আছে। লম্বা গাছ বাজ টেনে নেয়। গাছ কমে যাওয়াটাও বজ্রপাত বৃদ্ধির কারণ হতে পারে। কিন্তু লকডাউনের ফলে এ বার তুলনামূলক ভাবে দূষণ অনেক কম। কিন্তু বাজ পড়ায় কোনও ঘাটতি দেখা যায়নি। বেড়ে চলেছে মৃত্যুও।

বিপর্যয় ব্যবস্থাপনা দফতরের এক আধিকারিক মনে করাচ্ছেন, সবার ক্ষেত্রে হয়তো সম্ভব নয়, তবে বাজ পড়ার সময় কিছু পরামর্শ মেনে চললেই মৃত্যু কমবে। এই মর্মে বছর দুই আগে একটি ভিডিয়ো ক্লিপ প্রকাশিত হয়েছিল। সেখানে বেশ কিছু সতর্কতা নেওয়ার কথা বলা হয়েছিল। যেমন বাজ পড়ার সময় বাইরে থাকা উচিত নয়। কিন্তু একান্ত প্রয়োজনে বাইরে থাকতেই হয়, তাহলে বেশ কিছু সতর্কতা মেনে চলা যায়।

১) বাইরে থাকলে কান চাপা দিয়ে গোড়ালি জড়ো করে বসতে হবে।

২) ইলেকট্রিক খুঁটি, গাছের নীচে দাঁড়ানো নয়। পুকুর থেকেও দূরে।

৩) বাড়ির ভিতরে থাকলেও বাজ পডার সময়ে কোনও তার যুক্ত ফোন, বৈদ্যুতিন সামগ্রীর ব্যবহার, হাত ধোয়া, স্নান করা, নৌকা চালানো বা সাঁতার কাটা চলবে না।

৪) নলকূপে বা ছাতার ধাতব হাতল ছোঁয়া যাবে না। এমনকি কংক্রিটের দেওয়ালে হেলান দিয়ে দাঁড়ানো বা মেঝেতে শুয়ে থাকাও নিষেধ।

ভিজিয়োর বদলে অডিয়ো কেন? জেলাশাসক বলছেন, ‘‘ভিডিয়ো ক্লিপ ছড়ালে সেটা দেখার জন্য ভিড় হবে। করোনা সংক্রমণ রোখার লড়াইয়ে যেটা বাঞ্ছনীয় নয়। তাই আপাতত অডিয়ো ক্লিপ দিয়ে সতর্কতার প্রচার চলবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Natural Calamity Lightning
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE