Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

মুহূর্তের ঝড়েই লন্ডভন্ড এলাকা

কেউ ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। কেউ কেউ খাওয়া শেষ করে শোওয়ার তোড়জোড় করছিলেন। হঠাৎই গমগম করে উঠল চারপাশ।

তাণ্ডব: ঝড়ে উড়েছে ঘরের চাল। শনিবার বাঁকুড়ার জয়পুরের হাতবাড়ি গ্রামে। ছবি: শুভ্র মিত্র

তাণ্ডব: ঝড়ে উড়েছে ঘরের চাল। শনিবার বাঁকুড়ার জয়পুরের হাতবাড়ি গ্রামে। ছবি: শুভ্র মিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
জয়পুর শেষ আপডেট: ১৪ অক্টোবর ২০১৮ ০২:২১
Share: Save:

কেউ ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। কেউ কেউ খাওয়া শেষ করে শোওয়ার তোড়জোড় করছিলেন। হঠাৎই গমগম করে উঠল চারপাশ। মুহূর্তের মধ্যে গ্রামটার উপরে আছড়ে পড়ল তীব্র ঝড়। টিনের চালা উড়ে গিয়ে পড়ল বাঁশবাগানে, ধানের খেতে। হুড়মুড়িয়ে পড়ে গেল বড় বড় গাছ। এক লহমায় গোটা গ্রাম যেন লন্ডভন্ড হয়ে গেল। শুক্রবার রাত সাড়ে ন’টায় এক পলকের তুমুল ঝড়ের দাপটে বাঁকুড়ার জয়পুরের হাতবাড়ি গ্রামে বিপুল ক্ষতি হয়ে গেল। তবে ঝড়ে কেউ হতাহত হননি।

জয়পুর ব্লকের উত্তরবাড় গ্রাম পঞ্চায়েতের হাতবাড়ি গ্রামের অধিকাংশ বাসিন্দা চাষবাসের উপরে নির্ভরশীল। ওই গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল লতিফ বায়েন বলেন, ‘‘হেলিকপ্টার নামার সময় যেমন শব্দ হয়, অনেকটা সেই শব্দ প্রথমে কানে আসে। তারপরেই ঝড় যেন গিল খেল গ্রামটাকে।’’ গ্রামের সিভিক ভলান্টিয়ার সৈফুদ্দিন শা বলেন, ‘‘রাত তখন সাড়ে ন’টা। খাওয়া-দাওয়া সেরে শুতে যাচ্ছিলাম। হঠাৎই গ্রামের পূর্ব-দক্ষিণ কোণে হরিণাশুলি গ্রামের চুটকি বাঁধের দিক প্রবল শব্দ করে ধেয়ে এল ঝড়। সেই সঙ্গে বৃষ্টি। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই ঝড় থেমে গেল। কিন্তু, ততক্ষণে যা ক্ষতি করার হয়ে গিয়েছে।’’

শনিবার সকালে বৃষ্টির মধ্যে ওই গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, চারটি বাড়ির টিনের চালা উড়ে গিয়েছে। আংশিক ক্ষতি হয়েছে আরও কয়েকটি বাড়ির। কেউ আহত না হলেও ক্ষতি হয়েছে বিঘের পর বিঘের ধান জমি। ঝড়ের দাপটে কাদামাটির উপরে শুয়ে পড়েছে ধানগাছ।

বর্ষাতি গায়ে কাদের বক্স শা মাটির কোঠা বাড়ির উড়ে যাওয়া টিনের জায়গায় পঞ্চায়েত থেকে পাওয়া ত্রিপল টাঙাচ্ছিলেন। তিনি বলেন, ‘‘সবে আলো নিভিয়ে শুয়েছি। ঝড়ের দাপটে চোখ বন্ধ হয়ে যায়। চোখ খুলতেই দেখি মাথার উপরে ছাউনি নেই। খোলা আকাশ। উপর থেকে ঝরঝর করে বৃষ্টি গায়ে পড়ছিল।’’ পাশে থাকা বয়স্কা ডলেনা বিবি বলেন, ‘‘বাকি রাতটা পড়শির ঘরে কাটাই। ঝড়ের আওয়াজে বুক কাঁপছিল ভয়ে। সারা রাত আর চোখের পাতা এক করতে পারিনি।’’ এলাকায় ঘুরে দেখা যায়, কারও টিনের চালা বাঁশবাগানের মাথায় গিয়ে পড়েছে। কারও বা বাড়ি থেকে ২৫-৩০ মিটার দূরে ধানখেতে পড়ে রয়েছে।

হাতবাড়ি গ্রামের মোক্তার মণ্ডল, নবি বক্স শা, ইসরাফিল শা বলেন, ‘‘৪৫০ ঘর বাসিন্দা সবাই খেটে খাই। কেউ দিনমজুর, কেউ ভাগচাষি। দীর্ঘদিন জল না হওয়ায় আমন ধান মরতে বসেছিল। দু’দিনের বৃষ্টি স্বস্তি এনেছিল। কিন্তু, এক পলকের ঝড় সর্বনাশ করে দিল।’’

খবর পেয়ে সেই রাতেই উত্তরবাড় পঞ্চায়েত সদস্য জাকির খান ত্রিপল নিয়ে গ্রামে পৌঁছন। শনিবার সকালে গ্রামে যান এলাকার বিধায়ক তথা পঞ্চায়েত ও গ্রামোদ্যোগ প্রতিমন্ত্রী শ্যামল সাঁতরা। তিনি বলেন, ‘‘ভয়ঙ্কর ঝড় বয়ে গিয়েছে। আমরা বাসিন্দাদের পাশে রয়েছি।’’ বিডিও (জয়পুর) বিট্টু ভৌমিক বলেন, ‘‘রাতেই পঞ্চায়েত প্রতিনিধি, জয়পুর থানার আধিকারিকেরা হাতবাড়ি গ্রামে ত্রিপল নিয়ে যান। শনিবার সকালে আমি নিজে ওই গ্রাম ঘুরে এসেছি। প্রয়োজনীয় ত্রাণ পাঠানোর কাজ শুরু হয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Titli Cyclone তিতলি
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE