প্রতীকী ছবি
শহর ছাড়িয়ে মফস্সলেও বাড়ছে বেসরকারি স্কুলের সংখ্যা। ছাত্রছাত্রী ভর্তিও কম হচ্ছে না। কিন্তু এই সব স্কুল সম্পর্কে তেমন কোনও তথ্য নেই জেলা প্রশাসনের কাছে। তাই বাঁকুড়া জেলার সমস্ত বেসরকারি স্কুল কর্তৃপক্ষকে তাদের যাবতীয় তথ্য ও পরিকাঠামোগত হাল সম্পর্কে জানিয়ে জেলা স্কুল শিক্ষা দফতরের কাছে ছাড়পত্র নিতে নির্দেশ দিয়েছেন জেলাশাসক। দু’মাস আগে সেই নির্দেশ দেওয়া হলেও বেসরকারি স্কুলগুলির তরফে তেমন সাড়া পাওয়া যায়নি বলে দাবি জেলা স্কুল শিক্ষা দফতরের।
বাঁকুড়া জেলা স্কুল শিক্ষা দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার পর্যন্ত জেলার দু’টি বেসরকারি হাইস্কুল ছাড়া আর কেউই ছাড়পত্র চেয়ে আবেদনপত্র জমা করেনি। এমনকি, কোনও বেসরকারি প্রাইমারি স্কুলও ছাড়পত্র চেয়ে আবেদন জমা করতে এগিয়ে আসেনি।
এই পরিস্থিতিতে জেলাশাসক উমাশঙ্কর এস জানিয়েছেন, বিষয়টি মোটেই লঘু করে দেখা হচ্ছে না।
তিনি বলেন, ‘‘জেলার প্রত্যেকটি বেসরকারি স্কুলকে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে জেলা স্কুল শিক্ষা দফতরে ছাড়পত্রের জন্য আবেদন করতে হবে। পরিকাঠামোগত কোনও সমস্যা থাকলে ডিসেম্বরের মধ্যে তা শুধরে নিতে বলা হয়েছে। কোনও স্কুল ছাড়পত্র চেয়ে আবেদন না করলে তা চালানো যাবে না।’’
গত অগস্ট মাসে বাঁকুড়া শহর লাগোয়া একটি বেসরকারি স্কুলের এক ছাত্রের রহস্যজনক মৃত্যুতে ওই স্কুল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ ওঠে। প্রশাসনিক তদন্তেও ওই স্কুলের বিরুদ্ধে নানা গাফিলতির দাবি তোলা হয়।
এর পরেই অভিভাবকদের একাংশ জেলার অন্য বেসরকারি স্কুলগুলির অবস্থা খতিয়ে দেখার দাবি তোলেন। অগস্ট মাসেই বেসরকারি স্কুল কর্তৃপক্ষকে নিয়ে বৈঠকে বসে নভেম্বরের মধ্যে ছাড়পত্রের আবেদন জমা করার নির্দেশ দেন জেলাশাসক।
বাঁকুড়া শহরের বাসিন্দা দুই অভিভাবক বলেন, “মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে ছেলেমেয়েদের নামজাদা বেসরকারি স্কুলে ভর্তি করিয়েছি। কিন্তু স্কুলের পরিকাঠামোগত সমস্যা থাকলে খোঁজ নিতে পারি না। অনেক সময় বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন করতে গেলে স্কুল কর্তৃপক্ষ তা ভাল চোখে দেখেন না। প্রশাসনের উচিত সরকারি স্কুলের মতো বেসরকারি স্কুলের উপরেও নজর রাখা।’’
‘বাঁকুড়া জেলা প্রাইভেট স্কুল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন’-এর তরফে দাবি করা হচ্ছে, জেলায় এই মুর্হূতে ৩৫০টির বেশি বেসরকারি স্কুল চলছে। ওই সংগঠনের সম্পাদক চন্দন সিংহ বলেন, “প্রশাসনের নির্দেশ আমরা মানতে প্রস্তুত। তবে ছাড়পত্র পেতে গেলে যে পরিকাঠামো দরকার, তা জেলার ৯০ শতাংশের বেশি বেসরকারি স্কুলেই নেই।”
পরিকাঠামো না থাকার জন্যই বেশির ভাগ স্কুল জেলাশাসকের নির্দেশ মেনে ছাড়পত্রের জন্য আবেদন করতে এগোচ্ছে না বলেই দাবি করেছেন তিনি। এই পরিস্থিতিতে বহু স্কুলই ছাড়পত্র না পেলে বন্ধ হয়ে যাবে, এমন আশঙ্কাও দানা বেঁধেছে।
জেলা স্কুল শিক্ষা দফতরের আধিকারিকেরা জানাচ্ছেন, বেসরকারি স্কুলকে অনুমতি দেওয়ার আগে ভবনটি নিজস্ব জায়গায় না কি লিজ নেওয়া জায়গায় রয়েছে তা দেখা হয়। সেই সঙ্গে দমকল বিভাগের ছাড়পত্র, স্কুলের শিশুদের খেলাধুলোর জায়গা, পাঠাগার ও শারীরিক চিকিৎসার ব্যবস্থা আছে কি না, স্কুলে ছাত্র-শিক্ষক অনুপাত-সহ আরও বিভিন্ন বিষয় খতিয়ে দেখা হয়।
চন্দনবাবুর আশঙ্কা, “জেলার বেশির ভাগ স্কুলই চলে ভাড়া বাড়িতে। ছাড়পত্রের প্রথম শর্তেই তো বাতিল হয়ে যাবে এই সব স্কুল।” যদিও জেলাশাসক বলেন, “স্কুল বন্ধ করা নয়, আমাদের মূল লক্ষ্য স্কুলের পরিকাঠামো খতিয়ে দেখা। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে যদি কোনও বেসরকারি স্কুল ছাড়পত্রের আবেদন জমা না করে, তাহলে প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে।”
জেলা স্কুল শিক্ষা দফতরের আধিকারিকেরা জানাচ্ছেন, ছাড়পত্রের জন্য আবেদন করেও প্রাথমিক অনুমতি নিয়ে স্কুল চালানো যায়। তা ছাড়া, পরিকাঠামোগত কোনও সমস্যা থাকলে তা সংশোধনের ব্যবস্থাও করা যেতে পারে। তবে জেলায় কতগুলি বেসরকারি স্কুল চলছে, সেই তথ্য প্রশাসনের কাছে থাকাটা দরকার।
চন্দনবাবু জানান, ছাড়পত্র মিলবে কি না তা নিয়ে আশঙ্কা দানা বেঁধেছে সবার মধ্যেই। তবে জেলাশাসকের নির্দেশ মেনে স্কুলগুলি শীঘ্রই আবেদন জমা করবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy