Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
গা ঢাকা দিয়েছেন ১৩২ জন কারবারি

বালির অবৈধ মজুত নিয়ে কঠোর প্রশাসন

জেলা স্যান্ড ওনার্স অ্যাসোসিয়েশেনের ক্ষোভ, সরকারকে মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে নদী থেকে বালি তোলার অনুমতি মিলেছে। বর্ষায় বালি মজুতের অনুমতিও নেওয়া হয়েছিল। তার জন্য কোটি কোটি টাকার চালান কাটানো হয়েছে।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

দয়াল সেনগুপ্ত
সিউড়ি শেষ আপডেট: ৩০ জুলাই ২০১৯ ০২:১২
Share: Save:

বর্ষায় বালি মজুতের ক্ষেত্রে সরকারি নির্দেশিকা মানেননি বালির কারবারিরা। এই অভিযোগে জেলার ১৩২ জন ‘লিজ হোল্ডার’ বা লেসির প্রত্যেকের বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা করল বীরভূম জেলা প্রশাসন। এঁদের মধ্যে এক জনকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। গ্রেফতারি এড়াতে বাকিরা পালিয়ে বেড়াচ্ছেন বলেও খবর। এমন আবহে জেলায় বালি ব্যবসায় অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে।

জেলা স্যান্ড ওনার্স অ্যাসোসিয়েশেনের ক্ষোভ, সরকারকে মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে নদী থেকে বালি তোলার অনুমতি মিলেছে। বর্ষায় বালি মজুতের অনুমতিও নেওয়া হয়েছিল। তার জন্য কোটি কোটি টাকার চালান কাটানো হয়েছে। এক সদস্যের কথায়, ‘‘কিছু ক্ষেত্রে বিচ্যুতি হয়েছে ঠিক। তাঁদের বিরুদ্ধে প্রশাসন ব্যবস্থা নিতেই পরে। প্রয়োজনে স্যান্ড ব্লকের লিজ বাতিল করতে পারে। কিন্তু, সময়টুকু না দিয়ে প্রশাসনের পক্ষ থেকে যে ভাবে জেলার সব লেসিকে চোর তকমা সেঁটে মামলা করা করেছে তা অত্যন্ত অসম্মানের।’’

সরকারি নির্দেশিকা অনুযায়ী, ১৫ জুন থেকে ১৫ অক্টোবর, চার মাস নদী থেকে বালি তোলা বন্ধ। এই সময় প্রশাসনের অনুমতি সাপেক্ষে এবং সরকারি নির্দেশ মেনে বালি মজুত করে রাখতে পারেন বালি কারবারিরা। সেই নির্দেশ মতো বালি মজুত করা হচ্ছে কিনা দেখতে বৃহস্পতিবার জেলাশাসক ও জেলা পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে অভিযান চালান প্রশাসনের কর্তারা। তাতে নজরে আসে বালি কারবারিদের একাংশ পাহাড় প্রমাণ উঁচু করে রাস্তার দু’দিকে বালি জড়ো করে রেখেছেন। তার পরেই এই আইনানুগ ব্যবস্থা।

প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, যে সব বালি ব্যবসায়ী নিময় মানেননি তাঁদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে স্থানীয় থানায় ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের পক্ষ থেকে লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়েছে। বালি ব্যবসায়ীদের কথায়, ‘‘প্রত্যেক লেসির বাড়িতে তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ। সেই ভয়েই ঘরছাড়া।’’ এমন অবস্থার জন্য জেলা প্রশাসনের দু’মুখো নীতিকে দায়ী করছেন জেলা স্যান্ড ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যরা। অতিরিক্ত জেলাশাসক (ভূমি ও ভূমি সংস্কার) পূর্ণেন্দু মাজি অবশ্য দাবি করেছেন, ‘‘সকলের বিরুদ্ধে মামলা হয়নি। যাঁরা বালি মজুতের নিয়ম ভেঙেছেন এবং চালান অতিরিক্ত বালি মজুত করেছিলেন তাঁদের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’’

জাতীয় পরিবেশ আদালতের নির্দেশে নদী থেকে ইচ্ছেমতো বালি তোলায় ২০১৬ সালে নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে। বর্তমানে ই-অকশনের মাধ্যমে বড় অঙ্কের টাকা দিয়ে বালি তোলার অধিকার অর্জন করেন লিজপ্রাপ্তেরা। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, নদী থেকে বালি উত্তোলন মাইনর মিনারেল এর আওতায় পড়ে। ২০০২ সালের একটি আইন (প্রিভেনশন অফ ইললিগ্যাল মাইনিং ট্রান্সপোটেশন অ্যান্ড স্টোরেজ মাইনর মিনারেল অ্যাক্ট) অনুযায়ী লিজপ্রাপ্তদের বালি মজুতের লিজ নিতে হয়। তাতে এক জন লিজ হোল্ডার কোথায় বালি মজুত করবেন (নিজের না অন্যের জায়গায়) সেটা জানাতে হয়। অন্যের জমি হলে নো অবজেকশন সার্টিফিটেট দিতে হয় জমির মালিক বা সংস্থার পক্ষ থেকে। স্টকের অনুমতি পাওয়া গেলে সেই বালির জন্য রয়্যালটি বা চালান কাটতে হয়। যে কোনও মুহূর্তে আধিকারিকরা সেই স্টক ও বৈধ কাগজ খতিয়ে দেখতে পারেন। কাগজে-কলমে বালি মজুত করে রাখার উচ্চতা ৫ ফুটের বেশি হওয়া উচিত নয়। মজুত বালির চারদিক বেড়া দিয়ে ঘিরতে হয়। লাগাতে হয় সিসি ক্যামেরা। প্রশাসনের কর্তাদের দাবি, সেই সব নিয়মের অধিকাংশ মানা হয়নি। তাই এই ব্যবস্থা।

জেলা স্যান্ড ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যদের দাবি, বালি মজুতের অনুমতি দেওয়া থেকে মজুত বালি মেপে চালান ইস্যু করা— সবই প্রশাসনের চোখের সামনে হয়েছে। সেই সময় যাঁদের সমস্যা ছিল, তাঁদের জরিমানাও করেছে প্রশাসন। তা হলে অনুমতি দিয়ে যাঁদের চালান দেওয়া হল, প্রশাসন তখন কী করছিল। এই অবস্থায় বালি ব্যবসা বন্ধ রেখে প্রশাসনের নীতির বিরুদ্ধে আইনের সাহায্য নেওয়ার কথাও ভাবছে সংগঠন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Birbhum Sand FIR
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE