Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

টানা বৃষ্টিতে ফের ডুবল বহু কজওয়ে

টানা দু’দিনের বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত পুরুলিয়া ও বাঁকুড়া। জেলার বিভিন্ন নদ-নদীতে জল বৃদ্ধি পাওয়ায় বেশ কিছু এলাকায় নিচু রাস্তা ও কজওয়ে জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। এর ফলে বিভিন্ন এলাকার মধ্যে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।

হুড়ায় দেওয়াল ভেঙে আহত দুই।  —নিজস্ব চিত্র

হুড়ায় দেওয়াল ভেঙে আহত দুই। —নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
পুরুলিয়া ও বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০০:৩৪
Share: Save:

টানা দু’দিনের বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত পুরুলিয়া ও বাঁকুড়া। জেলার বিভিন্ন নদ-নদীতে জল বৃদ্ধি পাওয়ায় বেশ কিছু এলাকায় নিচু রাস্তা ও কজওয়ে জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। এর ফলে বিভিন্ন এলাকার মধ্যে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।

বৃষ্টিতে দেওয়াল চাপা পড়ে জখম হয়েছেন তিনজন। দুর্ঘটনাটি ঘটে সোমবার বিকেলে হুড়া থানার লায়েকডি গ্রামে। তাঁদের পুরুলিয়া সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, একটি নির্মীয়মাণ কাঁচা ঘরে উপরে ত্রিপলের ছাউনি দিয়ে এক ব্যক্তি মাংস বিক্রির দোকান চালাতেন। এ দিনও তিনি দোকান খুলেছিলেন। বিক্রিবাট্টা চলছিল। বৃষ্টির মধ্যেই হুড়মুড়িয়ে দেওয়ালটি ভেঙে পড়ে। তিনজন দেওয়ালে চাপা পড়েন। স্থানীয় লোকজনই দোকানদার-সহ তিনজনকে উদ্ধার করে পুরুলিয়া সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন।

পুরুলিয়া জেলা প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে, রবিবার থেকে সোমবার বিকেল পর্যন্ত জেলা সদরে বৃষ্টি হয়েছে ১২৫ মিলিমিটার। রবিবার ভারী বৃষ্টি হয়েছে মূলত রঘুনাথপুর মহকুমা এলাকায়। জেলার অন্যত্র বিচ্ছিন্ন ভাবে বৃষ্টি হয়েছিল। কিন্তু সোমবার সপ্তাহের কাজের প্রথম দিনেই সকাল থেকে গোটা জেলা জুড়েই ভারী বৃষ্টি নামে।

আবহাওয়া দফতরের বাঁকুড়া পরিমাপ কেন্দ্র সূত্রে জানা গিয়েছে, রবিবার দিনভর ও সোমবার দুপুর পর্যন্ত জেলা জুড়ে ভারী বৃষ্টিপাত হয়েছে। রবিবার জেলায় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ছিল ৩২.৮ মিলিমিটার। সোমবার দুপুরের পরে বাঁকুড়া শহর ও লাগোয়া এলাকায় বৃষ্টি কমে যায়। ওই সময় পর্যন্ত ১৩.৯ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে।

বৃষ্টিতে ফুলে ফেঁপে উঠেছে দুই জেলারই বিভিন্ন নদ-নদী, খাল-বিল। সোমবার দুপুরের পর থেকে দক্ষিণ-পূর্ব পুরুলিয়ার বেশ কয়েকটি রাস্তায় কজওয়ে জলের তলায় চলে গিয়েছে। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বান্দোয়ান-ঝিলিমিলি রাস্তায় কুইলাপালের কাছে একটি খালের কজওয়ের উপর দিয়ে প্রবল বেগে জল বইছে। এলাকার মানুষজন ঝুঁকি নিয়েই পারাপার করছেন। মানবাজার-বরাবাজার রাস্তায় নেংসাই নদীর বাল্লার ঘাটের কজওয়ে ফের ডুবে গিয়েছে। ফলে ওই রাস্তায় যাতায়াত বন্ধ হয়ে গিয়েছে। মানবাজার-কদমা রাস্তায় চাকা নদীর জল বাড়ায় জলের তলায় চলে গিয়েছে এই রাস্তার কজওয়েটিও। বোরো-তালপাত রাস্তার একটি কজওয়েতে জল উঠে পড়ায় বন্ধ হয়ে গিয়েছে এই রাস্তার যাতায়াতও।

এ ছাড়া সোমবার বিকেলে কংসাবতীর জল বেড়ে যাওয়ায় পুঞ্চার চাঁদড়া-পায়রাচালি গ্রাম পঞ্চায়েতের গোবরদা গ্রামে জল ঢুকে পড়েছে বলে খবর এসেছে। মুকুটমণিপুর জলাধারের জল বাড়ায় প্লাবিত হয়েছে লাগোয়া মানবাজার ১ ব্লকের বিসরি গ্রাম পঞ্চায়েতের সামদা গ্রাম। এই ব্লকের বিডিও সত্যজিৎ বিশ্বাস জানিয়েছেন, ‘‘জল আর বাড়লে দু’টি গ্রামের বাসিন্দাদেরই সরানোর ভাবনা রয়েছে প্রশাসনের। এই ব্লকে এখনও পর্যন্ত ১৫টি কাঁচা বাড়ি বৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে।’’ অন্যদিকে জেলাশাসক তন্ময় চক্রবর্তী জানিয়েছেন, ‘‘পরিস্থিতির উপর নজর রাখা হয়েছে।’’

টানা দু’দিনের নিম্নচাপে ডুবেছে খাতড়ার বেশ কিছু কজওয়ে। দিনভর যান চলাচল বিপর্যস্ত দক্ষিণ বাঁকুড়ার বিভিন্ন রুটে। যার ফলে খাতড়া মহকুমা শহরের সঙ্গে বিচ্ছিন্ন হয়ে রইল প্রত্যন্ত এলাকাগুলি। তবে এ দিন সন্ধ্যা পর্যন্ত কোনও এলাকা প্লাবিত হওয়ার খবর নেই বলেই জানিয়েছে খাতড়া মহকুমা দফতর। নিম্নচাপের বৃষ্টিতে ফুলে উঠেছে কংসাবতী জলাধার। কংসাবতী সেচ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, সোমবার সকাল থেকেই প্রায় ৬৫০০ কিউসেক হারে জল ছাড়া শুরু হয়েছে মুকুটমণিপুর জলাধার থেকে। এর ফলে খাতড়ার কেচোন্দাঘাট কজওয়ে জলে ডুবে গিয়েছে। এর ফলে খাতড়া-রানিবাঁধ রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে। খাতড়া-রানিবাঁধ সড়কের অম্বিকানগর ডেঞ্জার মোড়েও জল বেড়ে গিয়ে কজওয়ে ডুবে যায় বলে প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে।

রাইপুরে ভৈরববাঁকি কজওয়েতে জল উঠে পড়ায় জেলার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ঝাড়গ্রাম-বাঁকুড়া রাজ্য সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে পড়েছে। খাতড়ার ভারপ্রাপ্ত মহকুমাশাসক হরিহর বালা বলেন, “এই মহকুমার কয়েকটি কজওয়ে ডুবে গিয়ে রাস্তা বন্ধ হয়ে পড়েছে। যানবাহন ঘুরপথে চলাচল করছে। তবে কোনও এলাকা প্লাবিত হওয়ার খবর আসেনি। পুরো পরিস্থিতির উপর আমরা নজর রাখছি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Causeway overflood
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE