Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Coronavirus

করোনা রুখতে বাঁশের ব্যারিকেড 

পুরুলিয়ার একাধিক গ্রামে বাঁশের ব্যারিকেড গড়ে রাস্তা আটকেছেন বাসিন্দারা।

বান্দোয়ানের পারগেলা গ্রামে (বাঁ দিকে)। ইঁদপুরের ধরমপুর গ্রামে। নিজস্ব চিত্র

বান্দোয়ানের পারগেলা গ্রামে (বাঁ দিকে)। ইঁদপুরের ধরমপুর গ্রামে। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব প্রতিবেদন
বান্দোয়ান শেষ আপডেট: ২৫ মার্চ ২০২০ ০১:৫৩
Share: Save:

করোনা-সংক্রমণ ঠেকাতে কোথাও বাঁশের ব্যারিকেড গড়ে রাস্তা বন্ধ করেছেন গ্রামবাসী। কোথাও আবার ‘লকডাউন’ না থাকা জায়গাতেও স্বেচ্ছায় ঘরবন্দি থাকলেন মানুষজন। মঙ্গলবার দুপুরে রাজ্য জুড়ে ‘লকডাউন’ ঘোষণার আগে এমনই ছবি দেখা গেলে দুই জেলায়।

এ দিন পুরুলিয়ার একাধিক গ্রামে বাঁশের ব্যারিকেড গড়ে রাস্তা আটকেছেন বাসিন্দারা। নিজের গ্রামের রাস্তায় ঢুকতে গিয়ে ব্যারিকেডে আটকেছেন জেলা পরিষদের জনস্বাস্থ্য বিভাগের কর্মাধ্যক্ষ সৌমেন বেলথরিয়াও। হুড়া ব্লকের বাঘাটাঁড় গ্রামের রাস্তায় বাঁশের ব্যারিকেড তৈরি করে সেখানে ‘লকডাউন’ লেখা বোর্ড ঝুলিয়ে দেন বাসিন্দারা। স্থানীয় সত্যনারায়ণ মাহাতোর কথায়, ‘‘এই সময়ে সবার বাড়িতে থাকা দরকার। তাই আমরা সবাইকে জানিয়ে দিয়েছি, কেউ নেহাত দরকার না পড়লে বাইরে যাবেন না। বাইরে থেকে কেউ যাতে গ্রামে না ঢোকেন, তাই রাস্তা বন্ধ।’’

বান্দোয়ান ব্লকের পারগেলা গ্রাম, পুরুলিয়া ২ ব্লকের সিন্দুরপুর ও হুড়ার অর্জুনজোড়া গ্রামেও এক ছবি। হুড়ার আলোকডি গ্রামে ঢোকার দু’টি পথও একই ভাবে বন্ধ। কার্ডবোর্ডে লেখা, ‘বাড়িতে থাকুন, সুস্থ থাকুন’। গ্রামের বাসিন্দা রমেশ মাহাতো বলেন, ‘‘গ্রামবাসীর কাছে আবেদন করছি, আতঙ্ক ছড়াবেন না। যাঁরা অন্য রাজ্য থেকে ফিরেছেন, তাঁরা অসুস্থ বোধ করলে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যান। না হলে ১৪ দিন বাড়িতে থাকুন।’’

কাশীপুরের রঞ্জনডিতে নিজের গ্রামের রাস্তায় আটকে পড়েন জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ সৌমেনবাবু। তিনি বলেন, ‘‘গ্রামের সবাই মিলে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। গ্রামে ঢোকার মুখে সাবান জলে হাত ধুয়ে তবেই বাড়ি ফিরতে পেরেছি। এটা সচেতনতার পরিচয়। তবে জরুরি প্রয়োজনে কেউ যাতে আটকে না পরেন, সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে।’’

গ্রামে অপরিচিত কেউ যাতে ঢুকতে না পারেন, সে জন্য মানবাজার, পুঞ্চা ও বরাবাজার থানার কিছু জায়গায় বাঁশ ও গাছের গুঁড়ি ফেলে রাস্তা আটকাতে দেখা গিয়েছে। বরাবাজারের আইসি সৌগত ঘোষ বলেন, ‘‘বরাবাজারের বেড়াদা পঞ্চায়েত এলাকায় গিয়ে যুবকদের বুঝিয়ে তোলা হয়েছে। না বলে জরুরি প্রয়োজনে মানুষের বাইরে যাওয়া আটকে যাবে। বরং ভিন্‌ রাজ্য বা বিদেশ থেকে কারা আসছেন জেনে পুলিশকে তা জানাতে বলা হয়েছে।’’ মানবাজারের ভালুবাসা পঞ্চায়েত এলাকার একটি গ্রামের রাস্তা আটকে দেওয়া হয়েছিল। পুঞ্চার বারমেশিয়া-রামনগর ও লাখরা পঞ্চায়েত এলাকাতেও গিয়ে পুলিশ সে সব সরায়।

আবার বাঁকুড়া জেলার কয়েকটি এলাকায় বাসিন্দাদের নিজেদের স্বেচ্ছায় ‘গৃহবন্দি’ থাকতে দেখা গিয়েছে। এ দিন সকালে পাত্রসায়রের আনাজ বাজারগুলিতে অল্প সংখ্যক ক্রেতা এসেছিলেন। বেলা গড়াতেই সুনসান হয়ে যায় রাস্তাঘাট। কাঁকরডাঙা মোড়ের এক মিষ্টি বিক্রেতা বলেন, ‘‘দোকানের ঝাঁপ অর্ধেক বন্ধ রাখা ছিল। এক জনের বেশি দোকানে ঢুকতে দেওয়া হয়নি।’’

ইন্দাসের প্রণবকুমার দাঁ জানান, ‘‘সকালে আনাজ বাজারে লোকজন দেখা গেলেও বেলা বাড়তেই সব সুনসান হয়ে যায়। মানুষ খুব প্রয়োজন ছাড়া বেরোচ্ছেন না।’’ ইঁদপুর গ্রাম ষোলোআনার উদ্যোগে গ্রামে মাইক নিয়ে সচেতনতা প্রচার করা হয় এ দিন। ইঁদপুরের ধরমপুর গ্রামে প্রবেশের মুখে ব্যারিকেড তৈরি করেন গ্রামবাসী। ছাতনা ব্লকেও ওষুধ ও মুদির দোকান ছাড়া অন্য দোকান খোলা নেই। ওন্দা, মেজিয়া, গঙ্গাজলঘাটি ব্লকের ও চিত্রটা ছিল একই রকম।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE