Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
মনোনয়নের প্রথম দিনে বড়জোড়ায় আক্রান্ত বামেরা, বিষ্ণুপুরে লড়াই শাসকদলেই

পুলিশের লাঠি কেড়েই হামলা

পঞ্চায়েত ভোটে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার প্রথম দিনই জেলায় রক্ত ঝরল বিরোধীদের। ব্লক অফিস থেকে বামফ্রন্ট প্রার্থীদের মারধর করে বের করে বেশির ভাগের মনোনয়নপত্র ছিঁড়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠল তৃণমূলের বিরুদ্ধে।

বড়জোড়া থানায় আক্রান্ত কর্মীদের সঙ্গে অমিয় পাত্র। নিজস্ব চিত্র

বড়জোড়া থানায় আক্রান্ত কর্মীদের সঙ্গে অমিয় পাত্র। নিজস্ব চিত্র

রাজদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়
বড়জোড়া শেষ আপডেট: ০৩ এপ্রিল ২০১৮ ০০:০০
Share: Save:

পঞ্চায়েত ভোটে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার প্রথম দিনই জেলায় রক্ত ঝরল বিরোধীদের। ব্লক অফিস থেকে বামফ্রন্ট প্রার্থীদের মারধর করে বের করে বেশির ভাগের মনোনয়নপত্র ছিঁড়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠল তৃণমূলের বিরুদ্ধে। সোমবার বাঁকুড়ার বড়জোড়ার এই ঘটনায় বেশির ভাগ বাম প্রার্থীই মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারেননি। জখমও হয়েছেন কয়েক জন। যদিও শাসক দল হামলা চালানোর অভিযোগ অস্বীকার করেছে। ঝামেলা হয়েছে বলে মানতে নারাজ ব্লক প্রশাসনও।

এ দিন সকালে বড়জোড়া ব্লকের বিভিন্ন গ্রাম পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতির আসনের প্রায় একশো জন বামফ্রন্ট প্রার্থী এক সঙ্গে মনোনয়ন তোলেন ব্লক অফিস থেকে। সিপিএমের অভিযোগ, মনোনয়ন পর্ব বানচাল করার উদ্দেশ্যে শতাধিক তৃণমূল কর্মী রড, লাঠি, টাঙির মতো অস্ত্র নিয়ে আগে থেকেই ব্লক দফতরে ঢুকে ছিল। বাম প্রার্থীরা মনোনয়ন জমা দিতে দফতরে ঢুকতেই অতর্কিতে হামলা চালায় তারা। বেধড়ক্কা মারধর শুরু হয় বাম প্রার্থীদের। হামলার জেরে ছত্রভঙ্গ হয়ে দৌড় লাগান প্রার্থীরা। অনেককেই তাড়া করে পেটানো হয়।

এই পরিস্থিতিতে সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য সুজয় চৌধুরী, বড়জোড়া পঞ্চায়েত সমিতির বিদায়ী বিরোধী দলনেতা শরিফ মণ্ডল বিডিও-র অফিসে ঢুকে মৌখিক ভাবে ঘটনাটি নিয়ে অভিযোগ জানান। এর পরে সুজয়বাবুরা যখন বেরিয়ে আসছিলেন, তখন ব্লক দফতরের মধ্যেই তাঁদের উপরে হামলা হয় বলে অভিযোগ। ঘটনায় মাথায় চোট পান সুজয়বাবু ও শরিফ মণ্ডল। তাঁদের দাবি, কোনও ভাবে বেরিয়ে বড়জোড়া সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা করান তাঁরা। সুজয়বাবু বলেন, “ব্লক অফিসে পুলিশকর্মীদের সামনে তাঁদেরই লাঠি কেড়ে নিয়ে তৃণমূলের লোকজন আমাদের মারল! আমাদের উদ্ধার করার বদলে পুলিশ চুপ করে দাঁড়িয়ে ছিল।’’

এ দিন বিকেলে হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে বড়জোড়া থানায় গিয়ে বাঁকুড়া জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ সুখেন বিদ-সহ স্থানীয় ১০ জন তৃণমূল নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেন সুজয়বাবু। বিকেলেই ঘটনার প্রতিবাদে বামকর্মীরা থানায় বিক্ষোভ দেখান। বড়জোড়া থানায় যান সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অমিয় পাত্র, দলের বাঁকুড়া জেলা সম্পাদক অজিত পতি, জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য প্রতীপ মুখোপাধ্যায়।

কেন এই হামলা?

ঘটনা হল, গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে বড়জোড়া ব্লকের ১১টি পঞ্চায়েতের মধ্যে পাঁচটিতে জিতে সিপিএম তিনটি পঞ্চায়েতে বোর্ড গড়েছিল। পাশাপাশি বড়জোড়া পঞ্চায়েত সমিতির ৩১টি আসনের মধ্যেও ১৩টিতে জয়ী হন সিপিএম প্রার্থীরা। গত বিধানসভা ভোটেও বড়জোড়া কেন্দ্রে তৃণমূলের তারকা প্রার্থী সোহম চক্রবর্তীকে পরাজিত করেন সিপিএমের সুজিত চক্রবর্তী। সুজয়বাবুর দাবি, “বড়জোড়ায় আমাদের সাংগঠনিক ক্ষমতাকে ভয় পায় তৃণমূল। ভোটে লড়তে পারলে এ বারের পঞ্চায়েত নির্বাচনেও আমরা ভাল ফল করব, সেই আশঙ্কাতেই আমাদের প্রার্থীদের ওরা মনোনয়ন জমা দিতে দিচ্ছে না।’’ অমিয়বাবু বলেন, “ভোটের জন্য আমরা প্রস্তুত। জেলা জুড়ে এ দিনই ৪০টি মনোনয়ন জমা দিয়েছেন বামপ্রার্থীরা। বড়জোড়া ব্লকের বেশির ভাগ আসনেও প্রার্থীরা মনোনয়ন জমা দিয়ে দিতেন। তবে পুলিশ, প্রশাসন ও তৃণমূল একজোট হয়ে এই
ঘটনা ঘটাল।’’

অভিযোগ যদিও মানেননি তৃণমূল নেতৃত্ব। দলের বড়জোড়া ব্লক সভাপতি অলক মুখোপাধ্যায়ের দাবি, “সিপিএমের প্রার্থীরা নিজেরাই নিজেদের মধ্যে ঝামেলা করেছেন বলে শুনেছি। ওই ঘটনার সঙ্গে তৃণমূলের কোনও সম্পর্ক নেই।’’ তাঁর আরও বক্তব্য, “আমরা চাই শান্তিপূর্ণ ভাবে ভোট হোক। তৃণমূল সরকারের উন্নয়নের কাছে অন্য কোনও দল দাঁড়াতেই পারবে না বলে আমরা নিশ্চিত।’’ সুখেনবাবু বলেন, “উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে আমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা হচ্ছে।’’

ব্লক প্রশাসনের তরফেও মনোনয়নে বাধা দেওয়ার বা ঝামেলার অভিযোগ উড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। বিডিও (বড়জোড়া) পঙ্কজ কুমার আচার্য জানান, এ দিন বামফ্রন্টের তরফে পঞ্চায়েত সমিতির আসনে এক জন এবং গ্রাম পঞ্চায়েতের আসনে তিন জন প্রার্থী মনোনয়ন পেশ করেছেন। বিজেপির তরফেও পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতির একটি করে আসনে মনোনয়ন জমা হয়েছে। পঙ্কজবাবু বলেন, “ব্লক দফতরে কিছু চিৎকার শোনা যাচ্ছিল। সঙ্গে সঙ্গেই তা থামিয়ে দেওয়া হয়। এ ছাড়া কোনও দলের প্রার্থীদের মনোনয়ন পেশ করতে বাধা দেওয়া বা মারধর করার অভিযোগ শুনিনি।’’

যা শুনে বাম নেতাদের কটাক্ষ, প্রশাসন শাসকদলের সুরেই কথা বলবে, এ আর নতুন কী!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE