পোড়ো: এই বাড়িতেই মর্গ হওয়ার কথা ছিল। নিজস্ব চিত্র
আগাছায় ঢাকা রঘুনাথপুরের অসমাপ্ত মর্গ। বছর দশেক ধরে তেমনই পড়ে রয়েছে। সে জন্য মোটা টাকার গাড়ি ভাড়া করে উজিয়ে পুরুলিয়ার মর্গেই দেহ নিয়ে যেতে হচ্ছে অপঘাতে মৃতদের পরিবারকে। রঘুনাথপুরে মর্গ তৈরি না হওয়ায় এমনই দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে মহকুমার সাতটা থানার বাসিন্দাদের।
দিন কয়েক আগে গাড়ির ধাক্কায় মারা যান রঘুনাথপুর থানার বিলতোড়া গ্রামের দিনমজুর দুলাল গড়াই। তাঁর দেহ ময়না-তদন্তের জন্য পুরুলিয়ার মর্গে পাঠাতে স্ত্রী মানু গড়াইকে হাজার দেড়েক টাকা ধার করে পিক-আপ ভ্যান ভাড়া করতে হয়েছিল। ভোগান্তি সেখানেই শেষ নয়। পরের দিন মর্গ থেকে দেহ বাড়ি আনতে সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছিল। দাহ শেষ হয়েছিল অনেক রাতে। দাদা বিকাশ মাহাতোর দেহ ৭০ কিলোমিটার দূরে পুরুলিয়া থেকে ময়না-তদন্ত করাতে গিয়ে একই অভিজ্ঞতার কথা শুনিয়েছেন নিতুড়িয়া থানার রায়বাঁধ পঞ্চায়েত এলাকার বাসিন্দা প্রকাশ মাহাতো। পুলিশ সূত্রের খবর, রঘুনাথপুর মহকুমায় বছরে ১৬০ থেকে ১৮০ জনের অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়। সব দেহই পুরুলিয়ার মর্গে পাঠানো হয়।
শুধু বাসিন্দারাই নয়, সমস্যায় রয়েছে পুলিশও। এসডিপিও (রঘুনাথপুর) সত্যব্রত চক্রবর্তী বলেন, ‘‘পুরুলিয়ার মর্গে চাপ বেশি থাকায় সেখান থেকে ময়না-তদন্তের রিপোর্ট পেতে পনেরো-কুড়ি দিন, এমনকি, এক মাসও গড়িয়ে যায়। অথচ, খুনের ক্ষেত্রে তদন্তের গতিপ্রকৃতি কী হবে, তা অনেকাংশে নির্ভর করে ময়না-তদন্তের রিপোর্টের উপরে।’’ তাঁর আশা, রঘুনাথপুরে মর্গ হলে রিপোর্ট অপেক্ষাকৃত দ্রুত পাওয়া যাবে।
মর্গ গড়া আটকে রয়েছে কেন?
জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, রঘুনাথপুর মহকুমা হাসপাতালের এক কোণে বছর দশেক আগে স্বাস্থ্য দফতরের বরাদ্দ টাকায় মর্গের জন্য বাড়ি তৈরি করা হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত অর্থ দফতরের অনুমোদন না মেলায় কাজ আর এগোয়নি। বর্তমানে মহকুমা হাসপাতাল উঠে গিয়ে তৈরি হয়েছে সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল। সেখানে ১২টি দেহ রাখার মতো ‘ফ্রিজার রুম’ তৈরি হয়েছে। বাসিন্দাদের একাংশের বক্তব্য, সেখানেই মর্গ চালু করা হোক। কিন্তু হাসপাতালের ভিতরে মর্গ হলে সেখানে বেওয়ারিশ দেহ জমবে। তা হাসপাতালের পরিবেশের পক্ষে স্বস্তিদায়ক নয় বলেই মত চিকিৎসকদের একাংশের। তা ছাড়া, মর্গের জন্য লাশকাটার ঘর-সহ আরও কিছু ঘরের প্রয়োজন রয়েছে। আবার সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালের বাইরেও মর্গ তৈরির জন্য আলাদা জায়গা নেই বলে জানাচ্ছেন সুপার সোমনাথ দাস।
মহকুমাশাসক (রঘুনাথপুর) আকাঙ্ক্ষা ভাস্করের অবশ্য আশ্বাস, ‘‘জায়গার সমস্যা হবে না। মর্গের জন্য পড়ে থাকা অসমাপ্ত বাড়িটিকেই সংস্কার করে পুরোদস্তুর ময়না-তদন্তের সব রকম পরিকাঠামো গড়ে দেওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। তবে তার আগে দেহ ব্যবচ্ছেদ করার জন্য চিকিৎসকের সহকারী (ডোম) নিয়োগ করা জরুরি।”
সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালের সুপার জানাচ্ছেন, অর্থ দফতরের অনুমতি পাওয়ায় সম্প্রতি দেহ ব্যবচ্ছেদ করার জন্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নিয়োগ করা হয়েছে। পুরোদস্তুর মর্গ তৈরির জন্য কী-কী সরঞ্জাম লাগবে সেই তালিকা তাঁকে তৈরি করতে বলা হয়েছে। তাঁর আশা, ‘‘ধাপে ধাপে মর্গ তৈরির বাকি কাজও এগোবে।’’ মহকুমাশাসক বলেন, ‘‘স্বাস্থ্য সচিবকে রঘুনাথপুরে মর্গের সমস্যার কথা জানিয়েছি। আশা করছি, বেশি দেরি হবে না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy