Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

খোয়া টাকা ফিরে এল কিছু ক্ষেত্রে

ব্যাঙ্কের প্রতিনিধি বলে ভুয়ো পরিচয়ে গ্রাহকের থেকে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের তথ্য হাতিয়ে টাকা লোপাটের অভিযোগ প্রায়ই শোনা যায় পুরুলিয়ার বিভিন্ন জায়গা থেকে।

প্রতীকী চিত্র।

প্রতীকী চিত্র।

শুভ্রপ্রকাশ মণ্ডল
রঘুনাথপুর শেষ আপডেট: ৩০ নভেম্বর ২০১৯ ০৬:২৯
Share: Save:

বয়স মোটে মাস তিনেক। এরই মধ্যে তদন্ত করে প্রতারিতদের টাকা ফেরানো শুরু করেছে পুরুলিয়ার সাইবার ক্রাইম থানা। পুলিশের দাবি, ইতিমধ্যেই প্রায় দেড় লক্ষ টাকা প্রতারিতদের ফেরত দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে নভেম্বরে মাসেই ফেরানো হয়েছে এক লক্ষ দশ হাজার টাকা। পুলিশ কর্তাদের একাংশের মতে, সাইবার ক্রাইম থানার ব্যাপারে এখনও ওয়াকিবহাল নন অনেকে। তাই অভিযোগ কিছুটা কম আসছে। জেলা পুলিশের তরফে সাইবার ক্রাইম সংক্রান্ত বিষয়টি যিনি দেখভাল করেন, সেই ডিএসপি (অপারেশন) সুপ্রকাশ দাস জানান, তাঁদের কাছে দ্রুত অভিযোগ এলে পদক্ষেপ করতে সুবিধা হয়। কিন্তু অনেকে প্রতারিত হওয়ার অনেক পরে, থানায় যান। ফলে, কিছুটা মুশকিল হচ্ছে।

ব্যাঙ্কের প্রতিনিধি বলে ভুয়ো পরিচয়ে গ্রাহকের থেকে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের তথ্য হাতিয়ে টাকা লোপাটের অভিযোগ প্রায়ই শোনা যায় পুরুলিয়ার বিভিন্ন জায়গা থেকে। ব্যাঙ্ক বিভিন্ন ভাবে প্রচার করে— কোনও প্রতিনিধিই গ্রাহকের থেকে অ্যাকাউন্টের তথ্য ফোনে জানতে চান না। এ ধরনের ফোন এলে সবাই যেন সতর্ক থাকেন। তার পরেও হামেশাই প্রতারিত হওয়ার ঘটনা ঘটে। জেলা পুলিশের একটি সূত্রের দাবি, পুরুলিয়ায় মাসে গড়ে ১২ থেকে ১৫ লক্ষ টাকা এ ভাবে প্রতারণা করা হয়। আগে থানাগুলিই এই সমস্ত অভিযোগের তদন্ত করত। কিন্তু অপরাধের সংখ্যা ক্রমশ বেড়েই চলেছে দেখে জেলায় আলাদা করে সাইবার ক্রাইম থানা চালু করে রাজ্য স্বরাষ্ট্র দফতর। মাস তিনেক আগে পুরুলিয়া শহরে চালু হয়েছে ওই থানা। ইনস্পেক্টর পদমর্যাদার এক আধিকারিক হয়েছেন ওসি। এ ছাড়া, আছেন দুই সাব ইনস্পেক্টর ও এক জন এএসআই।

কেউ কেউ নিজে থেকেই আসছেন। আবার কেউ প্রতারিত হয়ে যাচ্ছেন স্থানীয় থানায়। সেখান থেকে পাঠানো হচ্ছে সাইবার ক্রাইম থানায়। যেমন গিয়েছিলেন পাড়া থানার বাগতবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা গৌতম মাজি। গৌতমবাবু পার্শ্বশিক্ষক। কৌশলে তাঁর এটিএম সংক্রান্ত তথ্য জেনে কয়েক দফায় অ্যাকাউন্ট থেকে প্রায় পঁচাত্তর হাজার টাকা লোপাট করেছিল দুষ্কৃতীরা। অভিযোগ জানানোর কয়েকদিন পরেই প্রায় ২৯ হাজার টাকা তাঁকে ফেরত দিতে পেরেছে সাইবার ক্রাইম থানা। গৌতমবাবুর কথায়, ‘‘ব্যাঙ্কের সর্তকবার্তা মাথায় থাকলেও এমন ভাবে দুষ্কৃতীরা ফোন করেছিল, যে ভুল করে এটিএমের তথ্য দিয়ে ফেলেছিলাম। টাকা ফেরত পাব, ভাবতে পারিনি।’’

কী ভাবে ফেরানো হচ্ছে টাকা? পুলিশ জানাচ্ছে, দুষ্কৃতীরা এক অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা সরিয়ে নেওয়ার পরে অন্য কোনও জায়গায় সেটা রাখে। কোনও কোনও ক্ষেত্রে গ্রাহকের অ্যাকাউন্টের তথ্য দিয়ে কেনাকাটা করে নেয়। কখনও কোনও ‘ই-ওয়ালেটে’ টাকা সরিয়ে রাখে। ডিএসপি (অপারেশন) সুপ্রকাশবাবু জানান, তদন্তে নেমে তাঁরা এমন বারো-তেরোটি ওয়ালেটে টাকা রাখতে দেখেছেন প্রতারকদের। ব্যাঙ্কের তুলনায় ওই সমস্ত ই-ওয়ালেটে অ্যাকাউন্ট খোলা বেশ কিছুটা সহজ। সুপ্রকাশবাবু বলেন, ‘‘দ্রুত অভিযোগ পেলে তখনই ব্যাঙ্ক আর ই-ওয়ালেট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে ঘটনাটি জানাই। যে ওয়ালেটে টাকা রাখা হয়েছে, সেটি ‘ফ্রিজ’ করানোর ব্যবস্থা করি। পরে গ্রাহককে টাকা ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়।”

তবে দেরি হলেই মুশকিল। সুপ্রকাশবাবু বলেন, ‘‘আমরা এই বিষয়ে সার্বিক প্রচার শুরু করার কথা ভাবছি। যাতে কেউ প্রতারিত হলে সঙ্গে সঙ্গে সাইবার ক্রাইম থানায় অন্তত ফোন করে অভিযোগ জানাতে পারেন।’’ কারণ, যদি সরিয়ে নেওয়া টাকা খরচ হয়ে যায়, তা হলে ফিরে পাওয়ার ঝকমারি অনেক বাড়ে। জেলা পুলিশ সূত্রে জানা যাচ্ছে, গ্রাহকদের টাকা ফেরানো গেলেও এখনও পর্যন্ত প্রতারণার ঘটনাগুলিতে গ্রেফতার করা যায়নি কাউকে। সুপ্রকাশবাবু বলেন, ‘‘এ ধরনের অপরাধের সঙ্গে একাধিক লোকজন জড়িত থাকে। তাদের কয়েকজনকে আমরা চিহ্নিত করেছি। দ্রুত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Cyber Crime Crime Internet Cyber Crime Department
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE