Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
Coronavirus Lockdown

চাষে ক্ষতি, তবে তাণ্ডব থেকে রক্ষা

ঝড়ের দাপটে বীরভূমে প্রবল ক্ষয়ক্ষতির পূ্র্বাভাস অবশ্য আবহাওয়া দফতরের তরফে ছিল না।

প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

নিজস্ব সংবাদদাতা
সিউড়ি শেষ আপডেট: ২২ মে ২০২০ ০৫:৫৪
Share: Save:

বহু গাছ উপড়ে গিয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কয়েকশো কাঁচা বাড়ি। বিপর্যস্ত বিদ্যুৎ পরিষেবা। তবে ভয়ঙ্কর ঘূর্ণিঝড় আমপান রাজ্যের দক্ষিণভাগের চারটি জেলায় যে তাণ্ডব চালিয়েছে কয়েক ঘণ্টা ধরে, সেই ভয়াল তাণ্ডব থেকে এ যাত্রা রক্ষা পেল বীরভূম।

ঝড়ের দাপটে বীরভূমে প্রবল ক্ষয়ক্ষতির পূ্র্বাভাস অবশ্য আবহাওয়া দফতরের তরফে ছিল না। যদিও ‘আমপানে’-র ধাক্কায় জেলায় ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে ধরে নিয়ে সম্ভাব্য সমস্ত প্রস্তুতি সেরে রেখেছিল জেলা প্রশাসন। বুধবার দিনটা ভালয় ভালয় কেটে যাওয়ায় স্বস্তি প্রশাসনে। তবে ঘূর্ণিঝড়ের দাপটে রাজ্যের ক্ষতিগ্রস্ত জেলাগুলির নিরিখে বীরভূমের অন্য ক্ষতি সেভাবে না হলেও বুধবার সকাল থেকে বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত যথেষ্ট বৃষ্টিপাত ও দমকা হাওয়ায় ফসলের যথেষ্ট ক্ষতি হয়েছে। কৃষি দফতরের হিসেব অনুযায়ী ১৯টি ব্লকে কয়েক হাজার একর বোরো ধান তো বটেই, ক্ষতি হয়েছে আনাজ, ডালশস্য, তৈলবীজ, তিল চাষেও। প্রাথমিক যে রিপোর্ট কৃষি দফতরের কাছে পৌঁছেছে তাতে মোট ফসল ক্ষতির পরিমাণ প্রায় আড়াই লক্ষ মেট্রিক টন। টাকার অঙ্কে ৪৬১ কোটি টাকারও বেশি।

আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস ছিল বুধবার দুপুর থেকে বিকেলের মধ্যেই রাজ্যে ঢুকে পড়তে পারে ওই ভয়ঙ্কর ঘূর্ণিঝড়। উপকূলবর্তী জেলাগুলি, কলকাতা, হাওড়া হুগলির মতো ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা বীরভূমে না থাকলেও প্রশাসনের তরফে প্রস্তুতি নেওয়া হয়। কন্ট্রোল রুমে রাত জাগেন জেলাশাসক, পুলিশ সুপার ও জেলা পরিষদের মেন্টর। যদিও তেমন খারাপ খবর আসেনি তাঁদের কাছে।

বুধবার সকাল থেকেই বীরভূমের আকাশ মেঘলা ছিল। সকাল সাড়ে সাতটার পর থেকেই বৃষ্টি শুরু হয়। বেলা যত গড়িয়েছে দমকা হাওয়ার এবং বৃষ্টির দাপট বেড়েছে। সন্ধ্যার পর সেই দাপট আরও বাড়ে। আবহাওয়া দফতরের হিসেব বলছে, বীরভূমে গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ছিল ৫৬ মিলিমিটার। বিশেষ করে সন্ধের পর থেকে হাওয়ার গতি ছিল ঘণ্টায় কম বেশি ৪০ কিমি।

অন্য অনেক জায়গায় ঝড়ের যে ধ্বাংসাত্মক রূপ প্রত্যক্ষ করেছেন বাসিন্দারা, বীরভূমে সেই তুলনায় ঝড়ের ভয়াল রূপ দেখা যায়নি। তা সত্ত্বেও হাওয়ার শব্দে আতঙ্কিত হয়েছেন জেলার বাসিন্দারা। জেলা জুড়ে বেশ কিছু মাটির বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বহু গাছ উপড়ে যায়। কিছু কিছু এলাকায় যেখানে মাটির বাড়ি ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা ছিল সেই পরিবারগুলিকে চিহ্নিত করে নিরাপদ দূরত্বে সরিয়ে নেওয়া ব্যবস্থা ছিল। কিছু পরিবারগুলিকে বুধবার দুপুরের মধ্যেই সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল। বন দফতরের হিসেবে জঙ্গল ও অন্য এলাকা মিলিয়ে জেলা জুড়ে কয়েকশো গাছ ভেঙেছে।

তবে সব কিছু ছাপিয়ে গিয়েছে ফসলের ক্ষয়ক্ষতি। বিশেষ করে বোরো ধান। কৃষি দফতর সূত্র জানা গিয়েছে, এ বার ৯৮ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো চাষ হয়েছিল। ধানও পেকে গিয়েছিল। কিন্তু করোনা সংক্রমণ রুখতে লকডাউন, মাঝে মধ্যে ঝড় বৃষ্টি, শিলাবৃষ্টি, নরম মাটিতে কম্বাইন হারভেস্টের নামাতে না পারা সহ নানা সমস্যার জন্য অনেক চাষি ফসল ঘরে তুলতে পারেননি। ঘূর্ণিঝড়ের আগাম বার্তা পেয়ে ধান তোলায় জোর দিলেও অনেক মাঠেই ধান পড়েছিল বুধবারও। সেই ধানের মধ্যেই ক্ষতি হয়েছে ৪৪ হাজার ২৫০ একরের। তার মধ্যে ৩৩ শতাংশের বেশি ক্ষতি হয়েছে প্রায় সাড়ে ছয় হাজার একর জমির ধান।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Lockdown Cyclone Amphan Cyclone
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE