Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
তৃণমূলের কর্মিসভায় পরামর্শ জেলা সভাপতির

উন্নয়নের কথাই অস্ত্র ভোট-যুদ্ধে: অনুব্রত

শনিবার হাসন বিধানসভার রামপুরহাট-২ ব্লকের কর্মিসভায় বুথ স্তরের নেতা কর্মীদের কাছে রীতিমতো সমীক্ষা দিয়ে কৈফিয়ৎ চান কেন হার আর জেতার লক্ষ্যে কি পদক্ষেপ?

হাসিমুখে: কর্মিসভায় অনুব্রত মণ্ডল। নিজস্ব চিত্র

হাসিমুখে: কর্মিসভায় অনুব্রত মণ্ডল। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
রামপুরহাট শেষ আপডেট: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০২:৩০
Share: Save:

ভোট কথার অর্থ তাঁর কাছে উৎসবের আবহে কৌশল আর অঙ্কের হিসেব নিকেশ। ভুল হলে হার, নইলে জয় অনিবার্য। গত নির্বাচনগুলির তুলনায় এবারে কৌশলে আর অঙ্কে নিখুঁত আর নির্ভুল থাকার প্রস্তুতি নিয়েছেন তিনি। তাই বিরোধীরা যখন শাসক দলের সমালোচনা নিয়েই ব্যস্ত বীরভূমের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল ঘুঁটি সাজাচ্ছেন নিজের জেলার হেরে যাওয়া বুথগুলিতে। দলনেত্রী তথা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বলা উন্নয়নের কথাই এবার তাঁর ভোট যুদ্ধের হাতিয়ার।

শনিবার হাসন বিধানসভার রামপুরহাট-২ ব্লকের কর্মিসভায় বুথ স্তরের নেতা কর্মীদের কাছে রীতিমতো সমীক্ষা দিয়ে কৈফিয়ৎ চান কেন হার আর জেতার লক্ষ্যে কি পদক্ষেপ? প্রত্যেকেই কারণ দর্শালেও জেলা সভাপতির একটাই কথা, ‘‘রাজ্যে তথা জেলায় যে উন্নয়ন হয়েছে তা মানুষের সামনে তুলে ধরতে হবে।’’ এ দিন কর্মিসভাটি হয় তারাপীঠের তারা উদ্যানে। ৯টি অঞ্চলের ১৫৮ টি বুথের বুথ সভাপতি, অঞ্চল সভাপতি ও স্থানীয় নেতাদের নিয়ে বুথ ভিত্তিক আলোচনা করেন অনুব্রতবাবু। হাসন বিধানসভায় ৯টি অঞ্চলে ১৫৪টি বুথের মধ্যে ১০৬টি বুথে গত নির্বাচনে হেরেছিল তৃণমূল। হাসন বিধানসভা কেন্দ্রে দলের পরাজয় নিয়ে দলীয় নেতৃত্বকেই এ দিন দুষলেন অঞ্চল সভাপতিরা। অনেকের দাবি, ‘‘ভোট দেবেন বলেও কথা রাখেননি কিছু মানুষ, তাতেই আমাদের হার হয়েছে।’’

যদিও অনুব্রতবাবু স্পষ্ট জানিয়ে দেন আগামী লোকসভা নির্বাচনে ২৫ হাজার ভোটে লিড দিতে হবে রামপুরহাট-২ ব্লককে। শনিবার বিকেলে এই কর্মিসভায় মৎস্যমন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ, জেলা পরিষদের সভাধিপতি বিকাশ রায়চৌধুরী, দলের জেলা সহ সভাপতি রানা সিংহ-সহ বহু নেতাকেই উপস্থিত থাকতে দেখা যায়। সভার শুরুতেই ডাক পড়ে দুনিগ্রাম অঞ্চলের সভাপতি মহম্মদ মবিনকে। ওই অঞ্চলে গত বিধানসভা নির্বাচনে ২৮৭৮ ভোটে পিছিয়ে ছিল তৃণমূল।

কারণ হিসেবে মবিন বলেন, “মানুষ আমাদের সঙ্গে ছিল। কিন্তু ভোটের সময় ভোটটা দেয়নি। তাছাড়া জোটের জন্য ফল খারাপ হয়েছে। তবে লোকসভা নির্বাচনে বিরোধীরা একশো ভোটও পাবে না। আমরা তিন হাজার ভোটে এগিয়ে থাকব।’’ এরপরেই হাসন-১ অঞ্চলের সভাপতি কুদ্দুস আলিকে ডেকে জানতে চাওয়া হয় কেন ১৫৬৮ ভোটে পরাজয়? উত্তরে তিনি বলেন, “নেতৃত্বের ব্যর্থতার জন্যই এই পরাজয়।’’ শুভ্র মিত্র নামে এক বুথ সভাপতি বলেন, “হাসন বিধানসভায় কংগ্রেসের সমর্থন অনেক বেশি ছিল। তাই পরাজয় হয়েছে।’’ কালুহার অঞ্চল সভাপতি মোজ্জামেল শেখ বলেন, “নিজেদের ভুল ত্রুটির জন্য হেরেছি। আর হবে না।” ওই অঞ্চলের ১৩৩ নম্বর বুথের সভাপতি মনিরুল শেখ বলেন, “লোকসভায় এগিয়ে থাকতে না পারলে পদ থেকে সরে দাঁড়াব।” হাঁসন-২ এর অঞ্চল সভাপতি টোকন সরকার বলেন, “ওই এলাকায় কংগ্রেস বিধায়ক মিল্টন রসিদের শ্বশুরবাড়ি। তাই আমরা পারিনি।’’ মাড়গ্রাম-১ অঞ্চলে ২৪৭৭ ভোটে পরাজিত হয় তৃণমূল। ওই অঞ্চলের সভাপতি উজ্জ্বল শেখ জানান সব বুথেই তিনি হেরেছেন। ১৭০ নম্বর বুথে সব থেকে বেশি ভোটে হেরেছেন। বুথ সভাপতি বলেন, “তখন কংগ্রেসের অবস্থা ভাল ছিল। তাছাড়া মাড়গ্রাম কংগ্রেসের মাটি।’’

অনুব্রতবাবু বলেন, “মাড়গ্রাম অসিত মালের ঘাঁটি ছিল। তারপরেও এত দুর্দশা কেন?’’ এ প্রশ্নের কোনও উত্তর মেলেনি নেতাদের কাছ থেকে। এ নিয়ে ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে ব্লক সভাপতি সুকুমার মুখোপাধ্যায় বলেন, “বিজেপি, সিপিএম ও কংগ্রেস যৌথভাবে আমাদের প্রার্থীকে পরাজিত করেছে। অসিত মালকে চক্রান্ত করা হারান হয়েছে। বিজেপি জোটকে ভোট দিয়েছে। তবে এবার আমরা ২০ হাজার ভোটে জয়ী হব”। সভা শেষে অনুব্রতবাবু বলেন, “লোকসভা নির্বাচনে আমরা এই ব্লকে ২৫ হাজার ভোটে এগিয়ে থাকব। ভোট মানেই অঙ্ক, কৌশল, উৎসব। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় উন্নয়ন করেছেন। এবার ভোটে বাড়ি থেকে বেরিয়ে উন্নয়ন দেখতে পাবেন।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE