Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

বর্ষা এখনও দূরে, বেহাল নিকাশি তবু ভাসাচ্ছে শহর

মার্চের শেষে কয়েক ঘণ্টার হঠাৎ এক পশলা বৃষ্টিতেই জলমগ্ন বোলপুর-শান্তিনিকেতন। জল থই থই শহর দেখে বাসিন্দারা আশঙ্কা করছেন, এখনই এই জল-ছবি হলে, ভরা বর্ষায় কী হাল হবে? বোলপুর শহরে নিকাশির সমস্যা নতুন নয়। গোটা শহরেরই নিকাশি নালা বিপর্যস্ত। তাই অল্প বৃষ্টিতে ভেসে যায় এলাকা। চায়ের দোকান থেকে স্কুল, কলেজ, নানা সরকারি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান- সর্বত্র বোলপুর-শান্তিনিকেতনের বেহাল নিকাশি নিয়েনানা অভিযোগ মেলে।

দিন কয়েক আগে তিন ঘণ্টার বৃষ্টিতেই জলমগ্ন হয়েছিল বোলপুরের শ্রীনিকেতন রোড। ফাইল চিত্র।

দিন কয়েক আগে তিন ঘণ্টার বৃষ্টিতেই জলমগ্ন হয়েছিল বোলপুরের শ্রীনিকেতন রোড। ফাইল চিত্র।

মহেন্দ্র জেনা
বোলপুর শেষ আপডেট: ০৩ এপ্রিল ২০১৫ ০২:৩৮
Share: Save:

মার্চের শেষে কয়েক ঘণ্টার হঠাৎ এক পশলা বৃষ্টিতেই জলমগ্ন বোলপুর-শান্তিনিকেতন। জল থই থই শহর দেখে বাসিন্দারা আশঙ্কা করছেন, এখনই এই জল-ছবি হলে, ভরা বর্ষায় কী হাল হবে?

বোলপুর শহরে নিকাশির সমস্যা নতুন নয়। গোটা শহরেরই নিকাশি নালা বিপর্যস্ত। তাই অল্প বৃষ্টিতে ভেসে যায় এলাকা। চায়ের দোকান থেকে স্কুল, কলেজ, নানা সরকারি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান- সর্বত্র বোলপুর-শান্তিনিকেতনের বেহাল নিকাশি নিয়েনানা অভিযোগ মেলে। দৃশ্যতই শহরের নিকাশি নিয়ে চিন্তিত স্থানীয় বাসিন্দারা।

গত সপ্তাহের অল্প বৃষ্টিতেই জল জমায়, ফের আর একবার বেআব্রু হয়ে পড়ল পুরসভার উদাসীনতা। পুরভোটের মুখে, শহরের একাধিক এলাকায় জল জমার এই ছবিতে স্বাভাবিক কারণে সিঁদুরে মেঘ দেখছেন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা কাউন্সিলররা। বাসিন্দাদের ক্ষোভের আঁচ যাতে আসন্ন পুরভোটে না পড়ে, তার জন্য শাসকদল তৃণমূলের পাশাপাশি বিরোধীরাও মাঠে নেমেছেন। আসলে কোমর বেঁধে মাঠে না নামলে, পুরভোটের ফল যে বিরুদ্ধে যেতে পারে, তা বুঝেছেন তাঁরা। পরিস্থিতি এমনই, এই ভোট বাজারে শাসক এবং বিরোধী উভয়ের কাছেই নিকাশি কার্যত বড় ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বোলপুর পুরসভায় ক্ষমতায় রাজ্যের শাসক দল, তৃণমূলের বোর্ড। একাধিক ওয়ার্ডে অন্য দল থেকেও জন প্রতিনিধিরা নির্বাচিত হয়েছেন। জল নিকাশি ব্যবস্থা বিপর্যস্তের ছবিটা অবশ্য শুধু শাসক দলের কাউন্সিলরদের ওয়ার্ডেই আটকে নেই। কম বেশি একই চিত্রর সাক্ষী থাকছে বিরোধীদলের কাউন্সিলরদের ওয়ার্ডেও। তাই শাসক ও বিরোধী উভয়দলের ওয়ার্ডে কম বেশি জল জমেছে।

এ দিকে ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে এবং দলীয় স্বার্থের’ জন্য পুরভোটের মরসুমে কার্যত শাসক দল তৃণমূল, বিরোধী বাম ও কংগ্রেস একে অপরকে জল নিকাশি অব্যবস্থার জন্য অভিযুক্ত করছেন। তবে অন্যান্য রাজনৈতিক দলের থেকে এহেন প্রতিযোগিতার আসরে বিজেপি নেই। কারণ এই প্রথম পুরভোটে বোলপুরে ২০টি ওয়ার্ডে প্রার্থী দিয়ে মনোনয়ন করেছে তাদের দল। তাই শহরের বিপর্যস্ত জল নিকাশি ব্যবস্থা আসন্ন পুরভোটের প্রচারের অন্যতম মুখ্য নির্বাচনী হাতিয়ার বিজেপি প্রার্থীদেরও!

ঘটনা হল, গোটা শহরের নিকাশি ব্যবস্থা কার্যত বিপর্যস্ত হওয়ায়, একাধিক ওয়ার্ডে জল জমেছে কয়েক ঘন্টার বৃষ্টিতে। বাসিন্দাদের অভিযোগ, কোনও কোনও জায়গায় নিকাশি নালার সংস্কারের কাজ নিম্ন মানের তো, কোথাও আবার এতটা গভীর করা হয়েছে, যে নোংরা জল গড়িয়ে যেতে কার্যত অসমর্থ। ফলে নিকাশি নালা না থেকেও যে সমস্যা ছিল, সংস্কারের পর ওই সমস্যাগুলি আরও তীব্র হয়েছে। যার জেরে পুর এলাকার একাধিক ওয়ার্ডের নিকাশি ব্যবস্থা কার্যত বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। অভিযোগ, ভরা গ্রীষ্মে যদি এই হাল তাহলে, বর্ষা কালে ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে নিকাশি সমস্যা কি ভয়ঙ্কর হবে। সার্বিক ভাবে এই সমস্যা দূর করার দাবি পুর বাসিন্দাদের দীর্ঘ দিনের।

তৃণমূল পরিচালিত বোলপুর পুরসভার ২০ টি ওয়ার্ডের মধ্যে একাধিক ওয়ার্ডে পুর পরিষেবা নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে বাসিন্দাদের। বোলপুরের এক নম্বার ওয়ার্ডের মকরমপুর এলাকা যেমন। এই এলাকায় কোথাও নিকাশি নালার গভীরতা বেশি তো, কোথাও আবার কম। ফলে জল জমার প্রবণতা দেখা দিয়েছে ওই এলাকায়। আবার তিন নম্বার ওয়ার্ড লাগোয়া চিত্রা মোড়ে নিকাশি নালার উপযুক্ত এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না থাকার কারণে একটু বৃষ্টি হলেই জল জমে যায়। ফুটপাথে গজিয়ে ওঠা দোকানদারদের ব্যবহারের জল ফেলার পরই কার্যত হাঁটাচলা করা অসম্ভব এবং অযোগ্য হয়ে দাঁড়ায়। পুরসভার নয় নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা এবং স্থায়ী দোকানদারদের নিকাশি নালার কাজ নিয়ে ক্ষোভ দীর্ঘ দিনের। এমনিতে ওই রাস্তায় ফুটপাথ দখল হওয়ায় পথ সঙ্কীর্ণ। তার ওপর এই নিকাশি নালার অবস্থা। শ্রীনিকেতন রাস্তার ওপর একাধিক জায়গায় হালকা বৃষ্টিতে এমন জল জমে যে, বোঝা দায় রাস্তা নাকি ছোট পুকুর!

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, এই নিকাশি নালা সমস্যা নিয়ে বহু বার আবেদন জানানো হয়েছে সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের। আর্জি জমা পড়েছে খোদ পুরপ্রধানের কাছেও। এহেন সমস্যা নিয়ে সকল স্তরে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলেও, কোনও কোনও জায়গায় নালা তৈরি করতে গিয়ে প্রয়োজনীয় বিধি না মানায় সমস্যা তো, কোথাউ আবার আজ হচ্ছে কাল হচ্ছে করে, নিকাশি নালা সংস্কারের কাজ কিন্তু অবহেলিত হয়ে থেকেগিয়েছে।

স্টেশন রোড থেকে শান্তিনিকেতন রোড পর্যন্ত এবং চৌরাস্তা থেকে চিত্রা মোড়, ভুবনডাঙা, কাছারিপট্টি, হাটতলা মুখ্য বাজার প্রভৃতি এলাকায় বিপর্যস্ত হছে জল নিকাশির ব্যাবস্থা। শহরের বাইপাস এবং আশেপাশের বেশ কিছু এলাকায় নেই রাস্তা ঘাটের উপযুক্ত ব্যবস্থাও। ফলে ওই সমস্ত এলাকাগুলিতে জল জমা স্বাভাবিক কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তা নিয়েও বিস্তর ক্ষোভ রয়েছে পুর বাসিন্দাদের। কংগ্রেসের রাকেশ লালা, বিজেপির শিবেষ চৌধুরী এবং সিপিআই-এর তুহিন হোম চৌধুরীদের অভিযোগ, ‘‘প্রয়োজনীয় বিধি না মেনে, উপযুক্ত পরিকল্পনা মাফিক নিকাশি নালা না করায় মুখ্য রাস্তায় জল জমেছে হাঁটুর উপর। প্রয়োজন মোতাবেক কোথাও নিকাশি নালার গভীরতা কম, তো কোথাও বেশি হওয়ায়, অল্প বৃষ্টিতে জল জমে ওই সব এলাকায়।’’

তৃণমূলের বিদায়ী পুরপ্রধান সুশান্ত ভকত বলেন, “জল নিকাশি ব্যাবস্থা ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে প্রয়োজনীয় নিয়ম নীতি মেনে করা হয়েছে। ক্ষমতায় ফিরলে প্রাথমিক এবং প্রধান গুরুত্ব দিয়ে কাজ করা হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE