গোপালগঞ্জে। নিজস্ব চিত্র
পুজোর লাগবে বলে ঘরের সামনে থেকে যাঁরা মাটি নিয়ে যান, মণ্ডপে চোখাচোখি হলে তাঁদের অনেকেই মুখ ফিরিয়ে চলে যেতেন। প্রতি বছর হত এমনটা। বিষ্ণুপুরের গোপালগঞ্জের যৌনকর্মীরা ঠিক করেন, নিজেরাই পুজো করবেন। সোমবার বিষ্ণুপুরের পুরপ্রধান শ্যাম মুখোপাধ্যায় পঞ্চম বর্ষের সেই পুজোর সূচনা করেছেন।
ষষ্ঠীর সকালে দুর্বার মহিলা সমন্বয় কমিটির মণ্ডপে দাঁড়িয়ে প্রৌঢ়া ছন্দা পাত্র পুরনো বৃত্তান্ত বলছিলেন। আশ্বিনের রোদে এখনও আঁচ মরেনি। নীল আকশে ঘোরাফেরা করছে সাদা মেঘ। ছন্দা বলেন, ‘‘দেড়শো জন দু’মাস ধরে নাওয়াখাওয়া ভুলে প্রস্তুতি নিয়েছি।’’ এখন তল্লাট জুড়ে শুধু বাচ্চাদের হুল্লোড়। খেলনা বন্দুকে ক্যাপ ফাটার শব্দ। রাস্তায় বাহারি আলো।
পুজোর উদ্যোক্তারা জানাচ্ছেন, বছরভর তাঁরা একটু একটু করে পুজোর জন্য টাকা জমান। পাড়ার বাসিন্দারাও চাঁদা দেন। পাশে দাঁড়ান ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর উদয় ভকতও। গত বছর থিম ছিল ‘রাবণকাটা’। এ বারের থিম ‘টুসু’। বাজেট ৩ লক্ষ টাকা। মণ্ডপ হয়েছে টুসুর ভেলার আদলে। সজ্জায় রয়েছে দশাবতার তাস, বালুচরী, কাঁসা, শঙ্খ শিল্পের নানা কিছু। সোমবার শেষ বেলায় মৃৎশিল্পী সাধন দে তুলির হাতে দেখে নিচ্ছিলেন কোথাও কোনও খামতি রয়ে গেল কি না। বললেন, ‘‘দিদিরা ভাবনাটা দিতেই রাজি হয়ে গিয়েছিলাম। বছরভর নিজের চোখেই বালুচরী, কাঁসা, শঙ্খ, দশাবতার শিল্পীদের কাজ করতে দেখি। মডেল তৈরি করতে কোনও অসুবিধাই হয়নি। শেষের দিকে বৃষ্টি কিছুটা ভয় পাইয়ে দিয়েছিল প্যান্ডেলের কারিগর ধনঞ্জয় নন্দীকে। এখন অবশ্য অনেকটাই নিশ্চিন্ত। বলছিলেন, ‘‘সপ্তমীর মধ্যেই কাজ শেষ হয়ে যাবে।’’
আলপনা আর ফুল দিয়ে মণ্ডপ সাজানোয় ব্যস্ত মিতা, মালবী, মালারা জানালেন, সকালের টিফিন করেছেন সবাই মিলে। মুড়ি, বোঁদে, চপ। দুপুরের খাওয়াও হবে একসঙ্গে। এক জায়গায়। যমুনা থেকে ঘটে জল আনা, সিঁদুর খেলা— এখন পাড়ার অন্য বাসিন্দারাও তাঁদের সঙ্গে হাত লাগান পুজোর কাজে।
(যৌনকর্মীদের নাম পরিবর্তিত)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy