সেই বাস। নিজস্ব চিত্র
কেউ বলছেন প্রচারের অভাব, আবার অনেকের মতে গলদ রয়েছে গোড়াতেই। দক্ষিণবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগমের (এসবিএসটিসি) পুজো পরিক্রমা প্যাকেজ বাঁকুড়ায় কার্যত ‘ফ্লপ’ হল। সাধারণ মানুষের সাড়া মিলল না কেন, তা নিয়ে এখন বিভিন্ন মহলে চলছে কাটাছেঁড়া।
ষষ্ঠী থেকে নবমী পর্যন্ত বাসে চড়ে ঠাকুর দেখতে যাওয়ার বিশেষ প্যাকেজ তৈরি করেছিল এসবিএসটিসি। বাঁকুড়া জেলাতেও ওই প্যাকেজের ব্যবস্থা ছিল। ষষ্টী থেকে নবমী জন প্রতি ৩৫০ টাকা ভাড়ায় বাঁকুড়া শহর-সহ ওন্দা, রামসাগর ও বিষ্ণুপুর শহরে ঠাকুর দেখানোর ওই প্যাকেজে দুপুরের খাওয়া ও পানীয় জলের ব্যবস্থাও যাত্রীদের জন্য ছিল। সূত্রের খবর, যাত্রীর অভাবে ষষ্ঠী থেকে অষ্টমী পর্যন্ত বাস ছাড়াই যায়নি। নবমীর দিনে হাতে গোনা জনা দশেক যাত্রী নিয়ে বাঁকুড়া ডিপো থেকে ছেড়েছিল বাস।
কিন্তু, তাও খুব সুখের হয়নি বলে যাত্রীদের অভিযোগ। যাত্রীদের ক্ষোভ, প্যাকেজে বাঁকুড়া শহরে ঠাকুর দেখানো হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছিল। কিন্তু আদপে বাঁকুড়া শহরে ঠাকুর দেখানোর কোনও ব্যবস্থাই ছিল না। ডিপো থেকে নন-এসি বাস বেরিয়ে বাইপাস রাস্তা ধরে শহর ছেড়ে বেরিয়ে যায়। ফলে শহরের প্রতিমা-দর্শন করানো হয়নি। রাস্তায় ধলডাঙা, ওন্দা ও রামসাগরে কিছুক্ষণের জন্য থামে। রাস্তার পাশেই কয়েকটি পুজো মণ্ডপ দেখে বেরিয়ে যেতে হয় যাত্রীদের। এরপর বিষ্ণুপুর বাসস্ট্যান্ডে এসে থামে বাস। সেখানে যাত্রীরা নিজেরাই একটি গাড়ি ভাড়া করে ঘণ্টাখানেক বিষ্ণুপুর শহরের কয়েকটি ঠাকুর দেখেন। দুপুরের খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছিল বাসস্ট্যান্ডেরই একটি হোটেলে। ফেরার সময় ক্ষুব্ধ যাত্রীরা বাঁকুড়া শহর সংলগ্ন পোয়াবাগান সর্বজনীনের পুজো দেখাতে হবে বলে দাবি তোলেন। সেই দাবি মেনে বাস কর্মীরা ওই পুজো কমিটির সামনে বাস থামান।
পুজো পরিক্রমায় গিয়েছিলেন বাঁকুড়া শহর সংলগ্ন মিথিলা এলাকার একটি আবাসনের বাসিন্দা দম্পতি পূর্ণেন্দুশেখর মুখোপাধ্যায় ও চম্পা মুখোপাধ্যায়। তাঁদের অভিযোগ, “পুজো পরিক্রমার বদলে একে কেবল বাঁকুড়া থেকে বিষ্ণুপুর বাস ভ্রমণ বলাই ভাল। শহরের ভিতরে ঠাকুর দেখানোর কোনও ব্যবস্থাই ছিল না। অতি নিম্নমানের একটি হোটেলে খাওয়ানোর ব্যবস্থা করা হয়েছিল।” তাঁদের আক্ষেপ, “যে টাকায় বাস ভ্রমণ করলাম, তার থেকে অনেক কম টাকা খরচ করে ওই সব এলাকার পুজো দেখে আসতে পারতাম। অনেক আশা নিয়ে গিয়েছিলাম।’’
এসবিএসটিসির কর্মীদের কেউ কেউ বলছেন, পুজো পরিক্রমার প্রচারই ভাল ভাবে করা হয়নি। আবার কেউ প্রশ্ন তুলছেন প্যাকেজের পরিকল্পনা নিয়েই। তাঁদের কথায়, জয়রামবাটি বা জেলার দূরদূরান্তের ঐতিহ্যবাহী পুজোগুলি দেখতে নিয়ে যাওয়া হলে সাধারণ মানুষের ভাল সাড়া মিলত।
দক্ষিণবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহন সংস্থার ট্রাফিক ম্যানেজার শুভেন্দু মুখোপাধ্যায় দাবি করেন, “পুজো পরিক্রমায় সিউড়িতে আমরা ব্যাপক সাড়া পেয়েছি। পুরুলিয়াতেও বাসে বেশ ভিড় হয়েছিল। বাঁকুড়ার ক্ষেত্রে কেন এমন হল, তা আমরা খতিয়ে দেখছি।” তিনি জানাচ্ছেন, খাবারের মান খারাপ ও পর্যাপ্ত জল না দেওয়ার যে অভিযোগ যাত্রীরা তুলেছেন, তা খতিয়ে দেখবে সংস্থা। শুভেন্দুবাবু বলেন, “যাত্রীদের যা অভিযোগ রয়েছে সেগুলি আমরা গুরুত্ব দিয়ে দেখব। আগামী পুজোয় কোনও ত্রুটি যেন না থাকে, তা নিশ্চিত করাই আমাদের লক্ষ।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy