Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
ব্ল্যাকবোর্ডের ক্লাসকে পাল্টেছে জ্ঞানযান

স্কুলে শুরু ই ক্লাস, মজে পড়ুয়া-শিক্ষক

গ্রামের স্কুলগুলির চিরাচরিত চক-ডাস্টার ও ব্ল্যাকবোর্ডের ক্লাসরুমকে এ বার এ ভাবেই বদলে দিতে চলেছে ‘জ্ঞানযান’। যার পোশাকি নাম ‘কে-ইয়ান’ বা নলেজ ইয়ান। বিভিন্ন জেলার গ্রামাঞ্চলের স্কুলগুলিতে স্মার্ট ক্লাস চালু করতে রাজ্য শিক্ষা দফতর হাতিয়ার করছে অত্যাধুনিক এই ‘জ্ঞানযান’ যন্ত্রকেই।

প্রযুক্তি: স্কুলের বোর্ড পাল্টে গিয়েছে ই-স্ক্রিনে। সিউড়িতে। নিজস্ব চিত্র

প্রযুক্তি: স্কুলের বোর্ড পাল্টে গিয়েছে ই-স্ক্রিনে। সিউড়িতে। নিজস্ব চিত্র

দয়াল সেনগুপ্ত
সিউড়ি শেষ আপডেট: ৩০ জুলাই ২০১৮ ০৭:০০
Share: Save:

প্রোজেক্টর বা কোনও ই-স্ক্রিন নয়। স্কুলের দেওয়ালই যেন বোর্ড। সেখানে রং পাল্টে যাচ্ছে ঘন ঘন। শিক্ষকের হাতে থাকা ম্যাজিক পেনের মাধ্যমে রং-বে-রং এর কালিতে ফুটে উঠছে পড়ানোর বিষয়বস্তু। কখনওবা সেই দেওয়ালেই পাঠ্যবইয়ের নীরস ও জটিল বিষয়গুলি অডিও বা ভিডিওর মাধ্যমে জীবন্ত ভাবে ফুটে উঠছে। তাতে বুঁদ হয়ে আছে পড়ুয়ারা।

গ্রামের স্কুলগুলির চিরাচরিত চক-ডাস্টার ও ব্ল্যাকবোর্ডের ক্লাসরুমকে এ বার এ ভাবেই বদলে দিতে চলেছে ‘জ্ঞানযান’। যার পোশাকি নাম ‘কে-ইয়ান’ বা নলেজ ইয়ান। বিভিন্ন জেলার গ্রামাঞ্চলের স্কুলগুলিতে স্মার্ট ক্লাস চালু করতে রাজ্য শিক্ষা দফতর হাতিয়ার করছে অত্যাধুনিক এই ‘জ্ঞানযান’ যন্ত্রকেই। সরকারি প্রকল্প আইসিটি-তে (ইনফরমেশন কমিউনিকেশন টেকনোলজি অ্যাট স্কুল) পড়ুয়াদের কাছে ক্লাসরুমের পঠনপাঠনকে আরও আকর্ষণীয় ও প্রাণবন্ত করে তুলতেই এই উদ্যোগ নিয়েছে শিক্ষা দফতর।

আইসিটি-র জেলা কো-অর্ডিনেটর উত্তমকুমার হাজরা বলেন, ‘‘বড় রেডিওর মতো দেখতে ‘কে-ইয়ান’ যন্ত্রটি আসলে একটি অত্যাধুনিক কমিউনিটি কম্পিউটার। এটি সহজে বয়ে নিয়ে যাওয়া যায়। শিক্ষকরা যখন ক্লাসে যাবেন, তখন সুটকেশের মতো হাতে করে ঝুলিয়ে এটি নিয়ে যেতে পারবেন। এক একটি মেশিনের দাম প্রায় ১ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা।’’ উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কম্পিউটার, অত্যাধুনিক প্রজেক্টর, প্রিন্টার, ম্যাজিক পেন, ডিভিডি প্লেয়ার ও অডিও সিস্টেমের মতো ছ’টি বিভিন্ন ধরনের যন্ত্রকে এক সঙ্গে মিলিয়ে কে-ইয়ান যন্ত্রের মডেল তৈরি করেছে মুম্বই আইআইটি।

বীরভূম জেলার ৮৬টি মাধ্যমিক স্কুলে কয়েক মাস আগেই পৌঁছে গিয়েছে জ্ঞানযন্ত্র। স্কুলগুলিতে স্মার্ট ক্লাস চালু করতে প্রতিটি স্কুলের প্রধান শিক্ষিক, শিক্ষিকাকে আগেই এ ব্যাপারে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল। সদ্য প্রাক্তন জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক (মাধ্যামিক) রেজাউল হক জানিয়েছেন, প্রথম দফায় ৮৬টি স্কুলে স্মার্ট ক্লাস চালু হচ্ছে। ধাপে ধাপে সরকার পোষিত অন্য স্কুলেও পৌঁছবে ‘কে-ইয়ান’। মূলত, গ্রামের স্কুলগুলিতে স্মার্ট ক্লাস চালু করার উপরে জোর দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যেই কিছু স্কুলে স্মার্ট ক্লাস শুরু করে হয়েছে।

জেলা শিক্ষা দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, বইয়ের নীরস ও জটিল বিষয়গুলিকে জীবন্ত ভাবে উপস্থাপন করে পড়ুয়াদের আগ্রহ বাড়ানো এবং পড়াশোনায় মনোযোগী করে তোলাই স্মার্ট ক্লাসের উদ্দেশ্য। তবে শুধু পড়ুয়ারা নয়, স্মার্ট ক্লাসের প্রশিক্ষণ নেওয়া এবং ‘কে-ইয়ান’ যন্ত্রের প্রয়োগের শিখে শিক্ষকদেরও পড়ানোর উৎসাহ বেড়ে যাবে। জেলা শিক্ষা দফতরের লক্ষ্য, মাধ্যমিকে ও উচ্চ মাধ্যমিকে পাশের হারে বীরভূম রাজ্যের মধ্যে উপরের দিকে থাকলেও, স্মার্ট ক্লাসের প্রয়োগ ঘটিয়ে পাশের হার আরও উন্নত করা।

প্রশিক্ষণ নিয়েছেন এমন শিক্ষক, শিক্ষিকা ও প্রশিক্ষকরা বলছেন, ‘‘স্মার্ট ক্লাসের জন্য আলাদা কোনও পরিকাঠামোর দরকার নেই। জ্ঞানযান মেশিনের সাহায্যে সাদা দেওয়ালের উপরেই ছবি দেখানো যাচ্ছে। সেই বোর্ডে ডিজিট্যাল পেন ব্যবহার করে শিক্ষক পড়াবেন।’’ এত দিন বিজ্ঞানের ক্লাসে মডেলের সাহায্যে পড়ানো হতো। এটি
অনেক সময় ও ব্যয় সাধ্য ব্যাপার ছিল। এক সঙ্গে এত মডেল জোগাড় করাও সম্ভব হত না। বিশেষ করে গ্রামের স্কুলগুলিতে। স্মার্ট ক্লাসের সুবিধা হল, রক্ত সংবহণ, হৃদযন্ত্রের কার্যকলাপ, যে কোনও বিক্রিয়া, হিমবাহের মতো নানা বিষয় ক্লাসেই পড়ুয়াদের সামনে তুলে ধরা যাবে।

তবে একটা অসুবিধার কথা সকলেই বলছেন। তাঁদের বক্তব্য, এখন শুধু ইংরেজি ও বিজ্ঞানের বিষয়গুলি রয়েছে কে–ইয়ানে। সব বিষয় থাকলে সুবিধা হত। এ
বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সংস্থার তরফে ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে, ইন্টারনেটের সঙ্গে যুক্ত করে আরও নতুন বিষয় যুক্ত করতেই পারেন শিক্ষক, শিক্ষিকারা। প্রশাসনিক সূত্রে খবর, ইতিমধ্যেই ই-লার্নিং ক্লাস শুরু হয়েছে সিউড়ি বীরভূম জেলা স্কুলে। প্রধান শিক্ষক চন্দন সাহা বলছেন,
‘‘আমাদের দুটি আলাদা ঘর ও পরিকাঠামো তৈরিই ছিল। আমার প্রশিক্ষণ হয়েছিল আগেই। বেশ কয়েক মাস হল চলছে স্মার্ট ক্লাস। কে-ইয়ান যন্ত্রের ব্যবহারে অডিও ভিজ্যুয়ালে একেবারে ভিন্ন স্বাদে শেখা ও শেখানোর উৎসাহিত শিক্ষক, পড়ুয়া সকলেই।’’
সিউড়ির আড্ডা সত্যপ্রসন্ন উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক চন্দন ভট্টাচার্য মনে করেন, ই-ক্লাসে পড়ুয়ারা মনোযোগী হতে পারে। সব মিলিয়ে ক্লাস আরও আকর্ষক হয়েছে, মানছেন রাজনগরের মাধাইপুর পল্লিমঙ্গল বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুদীপকুমার চক্রবর্তী।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

E Class Student School
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE