ছবি: সংগৃহীত।
নানুরে লিডের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারল না তৃণমূল। একই অবস্থা লাভপুর, ময়ূরেশ্বরেও।
নির্বাচন কমিশনের হিসেব বলছে, নানুর বিধানসভা কেন্দ্রে তৃণমূলের অসিত মাল নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিজেপির রামপ্রসাদ দাসের চেয়ে ১৭,৭৩১টি ভোট বেশি পেয়েছেন। অসিতবাবু পেয়েছেন ১০৮৭১৭টি ভোট। ৯০৯৮৬টি ভোট পেয়েছেন রামপ্রসাদবাবু। সিপিএমের রামচন্দ্র ডোমের প্রাপ্ত ভোট ১৪১২৯। ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে প্রাপ্ত ভোটের নিরিখে এ বারে নানুরে প্রাপ্ত ভোট তৃণমূলের মুখরক্ষা করলেও আঞ্চলিক স্তর থেকে জেলা সভাপতির লিডের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারেনি। বিজেপির নানুর ব্লক সভাপতি বিনয় ঘোষ মনে করেন, ‘‘সন্ত্রাস না হলে ওই লিডটুকুও ধুয়ে মুছে সাফ হয়ে যেত।’’ তৃণমূলের ব্লক সভাপতি সুব্রত ভট্টাচার্য বলছেন, ‘‘বিজেপির মন্তব্যের প্রেক্ষিতে কিছু বলতে চাই না। তবে কেন এমন হল, তা দলীয় স্তরে পর্যালোচনা করে দেখা হবে।’’
২০১৪ সালের নির্বাচনে বোলপুর লোকসভা কেন্দ্রের নানুর বিধানসভায় প্রায় ৬০ হাজার ভোটের ব্যবধানে জিতেছিল তৃণমূল। ওই নির্বাচনে বোলপুর লোকসভা কেন্দ্রে তৃণমূলের অনুপম হাজরা ৬৩০৬৯৩টি ভোট পান। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী সিপিএমের রামচন্দ্র ডোম পান ৩৯৪৫৮১টি ভোট। বিজেপি প্রার্থী কামিনীমোহন সরকার পান ১৯৭৪৭৪টি ভোট। তার মধ্যে নানুর বিধানসভায় ওই সব প্রার্থীদের প্রাপ্ত ভোট ছিল যথাক্রমে ১১৪৬৩১, ৫২৬৭৩ এবং ২৪৩৬৫টি ভোট। ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে অবশ্য ওই কেন্দ্রেই সিপিএম প্রার্থী শ্যামলী প্রধানের কাছে প্রায় ২৬০০০ ভোটের ব্যবধানে হেরেছিলেন তৃণমূল প্রার্থী তথা দলের বর্তমান জেলা যুব সভাপতি গদাধর হাজরা। ওই নির্বাচনে সিপিএম, তৃণমূল এবং বিজেপি প্রার্থীর প্রাপ্ত ভোট ছিল যথাক্রমে ১০৪৩৭৪, ৭৮৬৪৪ এবং ১৮৫৫২।
একই ঘটনা ঘটেছে লাভপুর, ময়ূরেশ্বরও। গত লোকসভা নির্বাচনে লাভপুর কেন্দ্রে তৃণমূলের প্রাপ্ত ভোট ছিল ৮৩৮৩০। সিপিএম প্রার্থী পেয়েছিলেন ৫৮৭২৩। ব্যবধান ছিল ২৫১০৭। ভোটের আগে বিভিন্ন সভা-সমাবেশে জেলা সভাপতি সহ দলীয় নেতারা দাবি করেছিলেন, এ বারে ব্যবধান ৩৫/৪০ হাজার ছাড়িয়ে যাবে। সেই হিসেবও মেলেনি। প্রাপ্ত ভোট বাড়লেও ব্যবধান বাড়া দূরের কথা। আগের ব্যবধানই ধরে রাখতে পারেনি তৃণমল। এক ধাক্কায় ব্যবধান কমে ৩৮০৩ দাঁড়িয়েছে। তৃণমূল প্রার্থী ৯৪৫১৫ এবং বিজেপি প্রার্থী ৯০৭১২টি ভোট পেয়েছেন।
ময়ূরেশ্বরের অবস্থা আরও শোচনীয়। গত লোকসভা নির্বাচনে ওই কেন্দ্র ৩৮৫৩১ ভোটের লিড ছিল তৃণমূলের। তৃণমূলের অনুপম হাজরা পেয়েছিলেন ৮১৮৫২টি ভোট। ৪৩৩২১টি ভোট পেয়েছিলেন নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী সিপিএমের রামচন্দ্র ডোম। ওই ব্যবধান দেখে এ বারের ভোটের আগে দলের নেতারা ৪৫ হাজার মার্জিন বেঁধে দিয়েছিলেন। সেই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হওয়া দূরের কথা, আগের বারের লিডই ধরে রাখতে পারেনি তৃণমূল। প্রাপ্ত ভোট বাড়লেও তাদেরই ১৭৫৯ ভোটে পিছনে ফেলে দিয়েছে বিজেপি। বিজেপি ৮৭২৬০ এবং তৃণমূল ৮৫৫০১টি ভোট পেয়েছে।
বিজেপির জেলা সভাপতি রামকৃষ্ণ রায় বলছেন, ‘‘অনেক জায়গায় এজেন্ট বসাতে পারিনি। ছাপ্পা, রিগিংও রুখতে পারিনি। পারলে তৃণমূলকে আর খুঁজে পাওয়া যেত না।’’ তৃণমূলের জেলা কমিটির সদস্য তথা জেলা সভাধিপতি বিকাশ রায়চৌধুরী মনে করেন, ‘‘সিপিএমের ভোটে পুষ্ট হয়েছে বিজেপি। তাই বহু জায়গায় আমাদের প্রাপ্ত ভোট বেড়ে গেলেও ব্যবধান ধরে রাখা যায়নি। এটা দু’একটি কেন্দ্রের ব্যাপার নয়। সামগ্রিক ভাবে দলীয় স্তরে পর্যালোচনা করে দেখা হচ্ছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy