ঝুঁকির যাত্রা তবু চলছেই।— নিজস্ব চিত্র
চিত্র ১: বেলা ১২টা। সিউড়ি জেলা প্রশাসন ভবনের কাছাকাছি এক পেট্রোল পাম্প থেকে মোটরবাইকে পেট্রোল ভরছিলেন দুই পুলিশ কর্মী। কারও মাথায় হেলমেট নেই। কাছে গিয়ে দেখা গেল দিব্য তেল দিয়ে দিলেন পাম্প কর্মীরা।
চিত্র ২: হেলমেটের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে চায়ে তুফান উঠেছে শান্তিনিকেতনের ভুবনডাঙার এক চায়ের দোকানে। বিশ্বভারতীর প্রাক্তন ও বর্তমান ছাত্রছাত্রী থেকে শুরু করে বহু অধ্যাপক এবং স্কুল শিক্ষক শিক্ষিকাদের নিত্য ঠেক ওই দোকান। সেখানে বসে শিক্ষকেরা অঙ্গীকার করলেন আর নয়, এ বার হেলমেট কিনে তবেই মোটরবাইকে চড়বেন।
মোটরবাইকে চড়লে হেলমেট জরুরি। সেই জিনিসটাই কার্যত ভুলতে বসেছিলেন মোটরবাইক আরোহীদের একটা বড় অংশ। মুখ্যমন্ত্রীর ‘নো হেলমেট, নো পেট্রোল’ মন্তব্যের পরে প্রশাসনের মধ্যে তৎপরতা শুরু হয়েছে। তার জেরেই উঠে এসেছে উপরের দুই খণ্ডচিত্র।
বুধবার বোলপুর মহকুমাশাসকের সভাগৃহে পুরপ্রধান, ব্যবসায়ী সমিতির কর্তাব্যক্তিদের উপস্থিতিতে এক বৈঠক হয়। সেখানে সিদ্ধান্ত হয়েছে হেলমেট নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে শহর জুড়ে একশোরও বেশি হোর্ডিং লাগানো হবে। বোলপুর ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক সুনীল সিংহ বলেন, “বিভিন্ন ব্যাঙ্ক, স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা এবং ব্যবসায়ী সমিতি শহর জুড়ে ওই হোডিং দেবে বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে। তাতে হেলমেট বিষয়ক সচেতনতার নানা কথা থাকবে।”
বস্তুত, মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণার পর থেকেই মোটরবাইক আরোহীদের কথা ভেবে পরিস্থিতি দ্রুত বদলাতে শুরু করেছে। এ ব্যাপারে এখনও পর্যন্ত কোনও লিখিত নির্দেশিকা অবশ্য এসে পৌঁছয়নি। ডেপুটি পুলিশ সুপার (ডিসিপ্লিন ও ট্রাফিক) প্রদীপকুমার সরকার বলছেন, ‘‘হেলমেট নিয়ে এখনও তেমন কড়াকড়ি শুরু হয়নি ঠিকই কিন্ত দ্রুত এ ব্যাপারে পদক্ষেপ করা হবে। যাঁরা নিয়ম মানছেন না তাঁরা আগামী দিনে বিপদে পড়বেন।’’ প্রশাসনের একটি সূত্রের খবর, পুলিশ কর্মীদের হেলমেট পড়ে মোটরবাইক চালানো বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে।
তবে প্রচারের প্রাথমিক পর্বে এসেই সচেতনতা যে কিছুটা হলেও তৈরি হয়েছে তা জানান দিল বোলপুরের একটি চায়ের দোকানের আলোচনা। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যাবেলা সেখানে গিয়ে দেখা গেল ‘হেলমেট ছাড়া বেরনো উচিত নয়’ সেই মর্মেই রায় দিয়ে ফেলেছেন উপস্থিত লোকজন। বোলপুর কলেজের দর্শনের অধ্যাপক সুজিতকুমার মণ্ডল, বাঁকুড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একই বিষয়ের অধ্যাপক কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়রা স্বীকার করে নিলেন এত দিন তাঁরা বিশেষ কাজ ছাড়া হেলমেট ব্যবহার করতেন না। দূরে কোথাও গেলে কারও থেকে হেলমেট চেয়ে নিতেন। সেই চেনা ছবিটা বদলাতে চান তাঁরা। সিদ্ধান্ত নিয়েছেন হেলমেট ছাড়া আর বেরোবেন না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy