Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

ত্রিশঙ্কু বোর্ড কার কপালে?

প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, এখনও পর্যন্ত পুরুলিয়ার ১৭০টি পঞ্চায়েতের মধ্যে ১২৬টিতে বোর্ড গঠন হয়েছে। তার মধ্যে তৃণমূল বোর্ড গড়েছে ৭৬টিতে। বিজেপি ২২টিতে। বামফ্রন্ট বোর্ড গড়েছে ১১টি পঞ্চায়েতে। কংগ্রেসের দখলে রয়েছে ৮টি পঞ্চায়েত। নির্দল প্রধান হয়েছেন, এমন পঞ্চায়েতের সংখ্যা ৯টি।

ত্রিশঙ্কু আসনগুলিতেই নজর রাজনৈতিক দলগুলির।

ত্রিশঙ্কু আসনগুলিতেই নজর রাজনৈতিক দলগুলির।

শুভ্রপ্রকাশ মণ্ডল
রঘুনাথপুর শেষ আপডেট: ০৭ ডিসেম্বর ২০১৮ ০০:৫৯
Share: Save:

বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে প্রশাসন। আগামী ১২ থেকে ১৪ ডিসেম্বর জেলার ১৪টি ব্লকের স্থগিত থাকা ৪৪টি পঞ্চায়েতে পর্যায়ক্রমে বোর্ড গঠন হবে। রাজনৈতিক দলগুলির অন্দরে শুরু হয়েছে তৎপরতা। ওই পঞ্চায়েতগুলির তিন ভাগের এক ভাগ এখনও ত্রিশঙ্কু হয়ে রয়েছে। কার ভাগ্যে ছিঁড়বে শিকে?

সূত্রের খবর, বিভিন্ন দলের নিচুতলার নেতা কর্মীরা যোগাযোগ শুরু করেছেন অন্য দলের নেতা কর্মীদের সঙ্গে। তবে কিছু ক্ষেত্রে চট করে সহজ কোনও হিসাব হওয়ার জো নেই। কয়েকটি পঞ্চায়েতে সিপিএমের সমর্থন ছাড়া বোর্ড গঠন করা কার্যত অসম্ভব তৃণমূল বা বিজেপির পক্ষে। আবার সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য দীননাথ লোধা বলছেন, ‘‘তৃণমূল ও বিজেপি— দুই দলের কাউকেই আমরা সমর্থন করব না। এটাই আমাদের ঘোষিত সিদ্ধান্ত।” তাহলে? তৃণমূল আর বিজেপি এখনও আলাদা আলাদা ভাবে দাবি করে চলেছে, ত্রিশঙ্কু পঞ্চায়েতগুলির অধিকাংশেই তারা বোর্ড গড়ে ফেলবে।

প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, এখনও পর্যন্ত পুরুলিয়ার ১৭০টি পঞ্চায়েতের মধ্যে ১২৬টিতে বোর্ড গঠন হয়েছে। তার মধ্যে তৃণমূল বোর্ড গড়েছে ৭৬টিতে। বিজেপি ২২টিতে। বামফ্রন্ট বোর্ড গড়েছে ১১টি পঞ্চায়েতে। কংগ্রেসের দখলে রয়েছে ৮টি পঞ্চায়েত। নির্দল প্রধান হয়েছেন, এমন পঞ্চায়েতের সংখ্যা ৯টি।

স্থগিত ছিল ৪৪টি পঞ্চায়েতের বোর্ড। প্রশাসন সূত্রের খবর, ওই ৪৪টি পঞ্চায়েতের মধ্যে ১৩টি ত্রিশঙ্কু অবস্থায় রয়েছে। বাকিগুলির মধ্যে অবশ্য পাল্লা ভারী বিজেপির দিকেই। বিজেপির নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে ১৭টি পঞ্চায়েতে। ১১টিতে সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে তৃণমূলের। সংখ্যার নিরিখে কংগ্রেস এগিয়ে দু’টি পঞ্চায়েতে। একটিতে সংখ্যাগরিষ্ঠ বামেরা।

ত্রিশঙ্কু পঞ্চায়েতগুলিতে বোর্ড গঠনের জন্য মরিয়া হয়ে ঝাঁপাতে চাইছে সব দলই। পাড়া, বান্দোয়ান, বাঘমুণ্ডি, পুরুলিয়া ২, ঝালদা ২— মূলত এই ব্লকগুলিতেই এমন পঞ্চায়েতের সংখ্যা বেশি। এখনও পর্যন্ত যা অবস্থান, বোর্ড গড়ার সময়ে সেটা কোথায় গিয়ে ঠেকে, সেই দিকেই তাকিয়ে সবাই। তবে জেলার পুরনো রাজনীতিবিদদের কেউ কেউ মনে করছেন, পঞ্চায়েতের মতো স্থানীয় স্তরে রাজ্য বা কেন্দ্রীয় রাজনীতির বাধ্যবাধকতাটা বিশেষ কাজ করে না। ইতিমধ্যেই পুরুলিয়ার কিছু ক্ষেত্রে তৃণমূলের সমর্থন নিয়ে বামেদের বোর্ড গড়া বা কংগ্রেসের সমর্থন নিয়ে বিজেপির বোর্ড গড়ার উদাহরণ তৈরি হয়ে গিয়েছে। ফলে স্থানীয় সমীকরণ কষা শেষ হলে ভাগাভাগির উত্তরটা কী দাঁড়াবে সেটা নিয়ে জল্পনা বাড়ছে।

বিজেপির জেলা সভাপতি বিদ্যাসাগর চক্রবর্তী দাবি করছেন, তৃণমূলের ‘অপশাসন ও দুর্নীতি’ রুখতে বিরোধীদলগুলির নিচুতলার কর্মীরা একজোট হতে শুরু করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘পুরুলিয়াতে গণতন্ত্রকে বাঁচাতে ও তৃণমূলকে রুখতে নিচুতলার কর্মীরা যে সিদ্ধান্ত নেবে তাতে আমাদের দলের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে।” আবার তৃণমূলের জেলা সভাপতি শান্তিরাম মাহাতো নজির টেনে বলছেন, ‘‘গত কয়েক মাসে বিরোধী দলগুলি থেকে অনেক জেতা সদস্য তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। পঞ্চায়েতগুলিতে আগের হিসেব এখন বদলে গিয়েছে।’’ তাঁর দাবি, অর্ধেকের বেশি পঞ্চায়েতে তৃণমূল এখন সংখ্যাগরিষ্ঠ। শান্তিরামবাবুও বলছেন নিচুতলার কর্মীদের কথা—‘‘সাম্প্রদায়িক শক্তিকে রুখতে অন্য দলের নিচুতলার কর্মীরা ধর্মনিরেপক্ষ শক্তির সঙ্গে হাত মিলিয়ে পঞ্চায়েত গড়তে আগ্রহী হচ্ছেন।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Purulia Hung Panchayat
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE