চলছে প্রতিমা গড়া। নিজস্ব চিত্র
বংশে একটি কন্যাসন্তান আসুক— সাধ ছিল রাজারাম মিশ্রের। ঠিক করেছিলেন, বারাণসী যাবেন। অন্নপূর্ণা মন্দিরে। তোড়জোড় যখন চলছে, হঠাৎ স্বপ্নে দেখলেন ফুটফুটে একটি মেয়েকে। লালপাড় শাড়ি। বলছে, গ্রামে দুর্গাপুজো করতে। আড়ড়া গ্রামের মিশ্র পরিবারের তিনশো বছরেরও বেশি পুরনো দুর্গাপুজোর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে এমনই জনশ্রুতি। এখনও সেখানে পুজোর সমস্ত দায়িত্ব কাঁধে নেন বাড়ির মেয়েরাই।
রেলশহর আদ্রার পাশেই আড়রা গ্রাম। জেলার ইতিহাসবিদের একাংশ মনে করেন, নিদেন পক্ষে সাড়ে তিনশো বছরের পুরনো এই গ্রামের নাম মুখে মুখে বদলে রেলশহর পরিচিত হয়েছে আদ্রা বলে। রেল এসেছে ব্রিটিশ আমলে। মিশ্ররা এসেছিলেন তারও অনেক আগে। বাড়ির বর্তমান প্রজন্মের সদস্য প্রদীপ মিশ্র বলেন, ‘‘১৬৫০ নাগাদ মুঘলদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে কনৌজ থেকে আড়ড়ায় চলে এসেছিলেন ধরাধর মিশ্র। দুর্গাপুজো অবশ্য শুরু করেছিলেন পরের প্রজন্মের রাজারাম মিশ্র।’’ তিনি জানান, পুজো করার কয়েক বছর পরেই পরিবারে আসে ইন্দুবতী। রামবিষ্ণু মিশ্রের কন্যা।
সেই সময়ে চাইলেই পুজো শুরু করে দেওয়া যেত না। অনুমতি নিতে হত রাজার থেকে। মিশ্র পরিবার কন্যাসন্তান চেয়ে পুজো করবে শুনে পঞ্চকোটের রাজা জগতদেও সিংহদেও অনুমতি তো দিয়েছিলেনই, সঙ্গে দান করেছিলেন ৬৮ বিঘা জমি। জমির আয় থেকেই ধুমধাম করে পুজো চলেছে অনেক দিন। ইতিকথা বলে যান প্রদীপবাবু। সেই জমি তাঁদের নেই, অনেক দিন হল। পুজোর খরচ দেন পরিবারের লোকজনই। প্রদীপবাবু জানান, এখন পুজো করছেন চার কাকা সুভাষ মিশ্র, আশিস মিশ্র, অসীম মিশ্র, আবেশ মিশ্র এবং তিনি।
এই পুজোর আরও কিছু নিজস্ব রীতিনীতি রয়েছে। দেবীর সঙ্গে পুজো করা হয় পরিবারের দু’টি তরোয়ালের। এখনকার প্রজন্মের সদস্যরা জানাচ্ছেন, একটি তরোয়াল কনৌজ থেকে এনেছিলেন ধরাধর। অন্যটি মিশ্র পরিবার পেয়েছিল পঞ্চকোট রাজবংশ থেকে। মিশ্র পরিবারে রয়েছে রামচরিত ও চণ্ডীর পুঁথই। হরিতকী পুড়িয়ে, কালি তৈরি করে, সম্ভবত একশো বছরেরও বেশি সময় আগে লেখা হয়েছিল সেগুলি। এখনও ওই পুঁথি অনুযায়ীই পুজো চলে আসছে।
প্রদীপবাবু বলছিলেন, ‘‘আমরা সমস্ত আচার-অনুষ্ঠান বছর বছর পালন করে যাই। কিন্তু সেই সময়ে গৃহস্থ থেকে রাজবাড়ি— সর্বত্র মেয়েদের যে মর্যাদা ছিল, সেটা কি সবাই ধরে রাখতে পারছি? এই প্রশ্নটাই মাঝে মাঝে মনে হয়!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy