Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
লাইনে থার্মোমিটার বসিয়ে পরীক্ষা কর্মীদের

ইস্পাতের তাপমাত্রা পঞ্চাশে, নজরদারি রেলের

রেল সূত্রে খবর, গরমকালে তাপের প্রভাবে রেল ট্র্যাক বেঁকে যাওয়া লক্ষ্য করা যায়।

উর্ধ্বমুখী: রোদের তাপে চড়চড়িয়ে বাড়ছে লাইনে রাখা থার্মোমিটারের পারদ। তারই পরীক্ষায় রেলকর্মীরা। শনিবার দুবরাজপুরে। নিজস্ব চিত্র

উর্ধ্বমুখী: রোদের তাপে চড়চড়িয়ে বাড়ছে লাইনে রাখা থার্মোমিটারের পারদ। তারই পরীক্ষায় রেলকর্মীরা। শনিবার দুবরাজপুরে। নিজস্ব চিত্র

দয়াল সেনগুপ্ত
দুবরাজপুর শেষ আপডেট: ১২ মে ২০১৯ ০০:৩১
Share: Save:

চুম্বক লাগানো থার্মোমিটারটা তপ্ত রেল লাইনে দাঁড় করানো। ঠা ঠা রোদে একটু তফাতে থার্মোমিটারের দিকে তাকিয়ে অপেক্ষায় গ্যাংম্যানদের হেড ‘মেট’ গিরিধর বাউড়ি।

শনিবার সকাল ১১টা। পূর্ব রেলের অণ্ডাল সাঁইথিয়া শাখার দুবরাজপুর—চিনপাই স্টেশনের মাঝে ১৫-সি লেভেল ক্রসিং-এর কাছে রেল কর্মীদের এই পারদ মাপার কারণ সূর্যের প্রখর তাপ প্রভাব ফেলে ইস্পাতের রেল লাইনে। মিনিট পাঁচ সাতেকের মধ্যেই থার্মোমিটারের পারদ ছুঁয়ে গেল প্রায় ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। মাথা ঝাঁকিয়ে অভিজ্ঞ মেট বলেন, ‘‘সকাল ১১টা বাজতে বাজতেই ৫০ ডিগ্রি ছুঁয়ে গেলে, বেলা ১২টা থেকে ২টোর মধ্যে তাপমাত্রা ৫২-৫৩ ডিগ্রিতে পৌঁছে যাবে। ভয়টা তো এই সময়েই। যে হারে প্রতি বছর তাপ বেড়েই চলেছে তাতে নজরদারি রাখতেই হয়।’’ একটানা দাবদাহে সাময়িক ছেদ টেনেছিল ঘূর্ণিঝড় ফণী। তার প্রভাব তেমন না পড়ায় চলতি মাসে মাত্র দু’দিন আবহাওয়া কিছুটা পরিবর্তন হলেও তারপর থেকেই জেলায় ফের পাল্লা ভারী প্রখর তাপের। গত মঙ্গলবার থেকে বীরভূমের তাপমাত্রা ঘোরাফেরা করছে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের উপরে। দুঃশ্চিন্তা আরও বাড়িয়ে তাপপ্রবাহের সতর্কতা দিয়েছে হাওয়া অফিস। সূর্যের প্রখর তাপে ক্রমশ তাপ বাড়ছে রেল লাইনেরও।

রেলের ইঞ্জিনিয়ারেরা জানান, সূর্যের তাপ শুধু মানুষ পশুপাখির উপরেই প্রভাব ফেলে না। প্রচন্ড তাপে রেল লাইনের তাপমাত্রা ওই অঞ্চলের তাপমাত্রার থেকে ১০ ডিগ্রি বা তারও বেশি হতে পারে। প্রখর তাপে লাইন আয়তনে বেড়ে যায়। এতে তা বেঁকে যাওয়ার সম্ভাবনাও তৈরি হয়। সেক্ষেত্রে বড়সড় দুর্ঘটনারও আশঙ্কা থাকে। রেল ট্র্যাকের তাপমাত্রা ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলেই সেই সম্ভাবনা জোরালো হয়। সেই কারণেই গ্রীষ্মকালে রেল কর্মীদের অনেক বেশি সজাগ থাকতে হয়। গ্যাংম্যানদের নজরদারি বাড়ানোর নির্দেশ দেন রেল কর্তৃপক্ষ। পাঁচ থেকে সাত কিলোমিটার পর্যন্ত রেল পথের দায়িত্বে থাকেন চারজন করে গ্যাংম্যান। দলের হেডকে বলা হয় মেট বা সখা। ঘন্টায় ঘন্টায় তাপমাত্রা মাপা এবং রেললাইন ধরে নজরদারি চালান ওই রেল কর্মীরা। মূলত তাঁদের চোখ আর অভিজ্ঞতার উপরেই অধিকাংশ সময়ে ভরসা করে ট্রেন চলে। রেল লাইনে কোনও বিচ্যুতি ধরা পড়লেই খবর যায় পিডব্লিউআই (পার্মানেন্ট ওয়ে ইন্সপেক্টর)-এর কাছে। সমস্যা অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করেন পিডব্লিউআই।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

রেল সূত্রে খবর, গরমকালে তাপের প্রভাবে রেল ট্র্যাক বেঁকে যাওয়া লক্ষ্য করা যায়। গত বছর মুম্বই ও তার আশপাশ এলাকায় তাপপ্রবাহ চলতে থাকায়, বদলাপুর ও আম্বরনাথ স্টেশনগুলির মধ্যে রেলপথের একটি অংশে এমন সমস্যা তৈরি হয়েছিল।

অণ্ডাল – সাঁইথিয়া শাখায় দুবরাজপুর থেকে চিনপাই স্টেশনের মাঝে গিরিধারী বাউড়ি মেট হিসেবে কাজ করছেন ৪০ বছর। ওই শাখায় অভিজ্ঞ এই রেল কর্মী বলেন, ‘‘বছর দুই পরে অবসর নেব। এত বছর ধরে শুধু রেল পথটুকু চেনার কাজ করেছি। রেল লাইনে সামান্য বিচ্যুতি হলেই সেটা এখন খালি চোখে ধরা পড়ে। লাইনে এই ধরনের সমস্যা হলে রেল লাইন ঠান্ডা করতে কাদামাটি বা গাছের পাতা ঢাকা দিয়ে তাপমাত্রা কমিয়ে কাজ করতে হয়।

রেল আধিকারিকেরা বলেন, আগে যে ভাবে ১৩ মিটার পর পর রেললাইনে ফাঁক রেখে জোড়ার ব্যবস্থা ছিল এখন সেটা হয় না। আধুনিক ব্যবস্থায় যে রেল লাইন পাতা হয় তাতে অন্যান্য সমস্যা কম হলেও প্রকৃত্র হাত থেকে রেহাই নেই। তাপ বাড়লে বেঁকে যাওয়া ও বিপদের আশঙ্কা থেকেই রোদে পুড়ে এই নজরদারি চালাতে হবে বৃষ্টি না হওয়া পর্যন্ত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Weather Indian Railways
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE