ইলামবাজারে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী
বৈশাখের শেষ দুপুরে পারদ চড়েছে ৪২। ইলামবাজার রাইস মিল ফুটবল মাঠে তৃণমূলের মঞ্চে মাইক্রোফোন হাতে দলের যুব সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘ধর্মনিরপেক্ষ, প্রগতিশীল ভারত গড়তে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ৪২-এ ৪২টা আসন এনে দিন। ২০১৪ সালের আগে মোদীকে কখনও কেটলি হাতে চা বিক্রি করতে দেখিনি। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আজও কালিঘাটে টালির ঘরে থেকে ১০কোটি মানুষের সেবা করতে দেখি। মানুষ এই ভাঁওতা ধরে ফেলেছে।’’
সোমবার বীরভূমের মহম্মদবাজারের গণপুরে বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহের নির্বাচনী জনসভা ছিল। সেই সভাকে চ্যালেঞ্জ করেই একই দিনে ইলামবাজারে সভার প্রস্তুতি নিয়েছিল তৃণমূল। খোদ জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল এই সভায় যাতে কোনও ত্রুটি না থাকে তার জন্য কড়া নজর রেখেছিলেন। বাসে করে লোক আনা থেকে দলের যুব সভাপতির পৌঁছতে অনেকটা দেরি হওয়ায় কর্মী, সমর্থকদের ধৈর্য ধরে বসিয়ে রাখা পর্যন্ত একাই সামলেছেন অনুব্রত। রানাঘাটে নির্বাচনী সভা সেরে ইলামবাজারে বোলপুর লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী অসিত মালের সমর্থনে সভায় পৌঁছতে অভিষেকের দেরি হয়। গণপুরে তখন অমিত শাহের সভা চলছে, মঞ্চে উঠেই অভিষেক বিজেপিকে তীব্র ভাষায় আক্রমণ করেন। ২৫ মিনিটের বক্তব্যে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বিজেপিকে তুলোধোনা করেন। তিনি বলেন, ‘‘দেশকে লুটতে চলে এসেছে চৌকিদার। এই ছদ্দবেশী চৌকিদারদের কড়ায় গন্ডায় বুঝিয়ে দিতে হবে। আগে চোর চুরি করলে জেলে যেতো, ডাকাত ডাকাতি করলে জেলে যেতো, এখন চোরেরা বিজেপিতে যাচ্ছে। সাধু হয়ে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী ধর্মের নামে, সেনাদের নামে ভোট চাইছেন, দাঙ্গা করে ভোট চাইছেন, ওদের কি ভোট দেওয়া উচিৎ আপনারাই বলুন!’’ মুল্যবৃদ্ধি নিয়েও এদিন সরব হন অভিষেক। তিনি বলেন, ‘‘এরা জয় শ্রী রাম বলে। মানুষ বলছে, গ্যাসের কেন এত দাম? কেরোসিনের কেন এত দাম? নিত্য প্রয়োজনীয় সবকিছুর দাম বেড়েছে পাঁচ বছরে।’’
জেলা তৃণমূল সূত্রে খবর, এ দিনের সভা ভরানোর জন্য ৪০ হাজার কর্মী, সমর্থক আনার লক্ষ্যমাত্রা ছিল। কিন্তু এমনিতেই লোক কম এসেছিল সভাতে। তার উপরে ভর দুপুরে রোদ আর প্রবল গরমে বসার জায়গায় পাখার ব্যবস্থা না থাকায় অনেকেই সভাস্থলে পৌঁছেও বাড়ির পথে পা বাড়ান। রানাঘাটের সভা সেরে হেলিকপ্টারে পারুলডাঙার মাঠে পৌঁছে সেখান থেকে আবার সভাস্থল পর্যন্ত ছ-কিলোমিটার রাস্তা পৌঁছতে তৃণমূলের যুব সভাপতির প্রায় চারটে বেজে যায়। অনুব্রত তখন দর্শকদের কাছে গিয়ে ধৈর্য ধরে বসার কথা বলছেন। অভিষেক মঞ্চে উঠে প্রার্থী অসিত মাল-সহ অন্য নেতাদের হাত তুলে ধরে উন্নয়নের লক্ষ্যে তৃণমূলকে লোকসভা নির্বাচনে ভোট দেওয়ার কথা বলেন। বীরভূমের সংস্কৃতির কথা মনে করিয়ে দিয়ে বলেন, ‘‘এই বাংলা নব জাগরণের পথ দেখিয়েছে, স্বাধীনতা আন্দোলনের পথ দেখিয়েছে। এই বাংলাই নেতাই, নন্দীগ্রাম, সিঙ্গুরের বাংলা। এই বাংলায় যখন ব্রিটিশরা বিভাজন করতে চেয়েছিল, কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সকলের হাতে রাখি বেঁধে বলেছিলেন, বাংলার জল, বাংলার বায়ু, বাংলার ফল--. পুণ্য হউক, পুণ্য হউক, পুণ্য হউক হে ভগবান। এই মাটি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শক্ত ঘাঁটি। বীরভূমের মাটি তৃণমূলের শক্ত ঘাঁটি।’’
কর্মীদের তিনি বলেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, তুমি আমাকে ৪২ এ ৪২ দাও, আমি তোমাদের ধর্ম নিরপেক্ষ প্রগতিশীল ভারত দেব। এদের কন্যাশ্রী দেওয়ার সময় টাকা নেই। কিন্তু দিল্লিতে ১২০০ কোটি ব্যয়ে পার্টি অফিস করার টাকা আছে। জাতীয় সড়কের জন্য টাকা নেই, কিন্তু গুজরাতে তিন হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে মূর্তি বানানোর জন্য টাকা আছে। ভোট প্রচারে ৫ হাজার কোটি টাকা খরচ করছে বিজ্ঞাপনে। ২০১৪ সালে যে গরু মোদীকে দুধ দিয়েছিল, সেই গরুই এবার গোবর লেপে দেবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy