হাতির ভয়ে জীবনযাত্রা বদলে গিয়েছে এলাকায়।
হাতি সমস্যার স্থায়ী সমাধানের আশ্বাস দিয়ে একের পর এক ভোট পার করে দিয়েছেন রাজনৈতিক নেতারা। দেখতে দেখতে আরও একটি লোকসভা ভোট এসে হাজির। অথচ বাঁকুড়ার জঙ্গল সংলগ্ন গ্রামগুলিতে হাতির হানা বন্ধ হয়নি। হাতির হানায় বলিও অব্যাহত। আর কতদিন হাতি-আতঙ্ক নিয়ে বাস করতে হবে— ভোটের মুখে প্রশ্ন তুলেছেন বাসিন্দারা।
রবিবার মাঝরাতে বড়জোড়ার মালিয়াড়ার নপাড়া গ্রামের বাসিন্দা বিমল ভুঁই, পরিমল ভুঁইদের বাড়ির দরজা ভেঙে ভিতরে ঢুকে ক্ষয়ক্ষতি করে হাতি। মঙ্গলবার জমিতে চাষ করতে গিয়ে বেলিয়াতোড়ে হাতির হানায় মৃত্যু হল এক প্রৌঢ়ের। বিমলবাবু, পরিমলবাবুদের আক্ষেপ, “ভোট এলেই বিভিন্ন দলের নেতারা আশ্বাস দিয়ে যান, ক্ষমতায় এলে তাঁরা গ্রামে হাতি ঢোকার সমস্যা মিটিয়ে দেবেন। ভোট পার হয়ে গেলে নেতাদের আর দেখা পাওয়া যায় না। অথচ হাতি ঠিক হানা চালিয়ে যাচ্ছে।’’
এলাকার মানুষজন জানাচ্ছেন, হাতির ভয়ে তাঁদের জীবনযাত্রা বদলে গিয়েছে। সন্ধ্যার পরে অনেকে আর বাড়ির বাইরে থাকেন না। ঘরেও যে স্বস্তিতে থাকেন, তাও নয়। যে কোনও সময়েই দেওয়াল ভেঙে ঢুকে পড়তে পারে হাতি। ভোরে জমিতে চাষ করতে গিয়ে বা গ্রামের পুকুরে শৌচ করতে গিয়েও যে হাতির সামনে পড়তে হবে না, সে নিশ্চয়তাও তাঁদের নেই।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, তৃণমূল সরকারের আমলে হাতির হানায় মৃত্যু বা ক্ষয়ক্ষতির জন্য অর্থের পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে ঠিকই, কিন্তু হাতির হানা বন্ধ না হওয়ায় ক্ষোভ রয়েছে জেলার হাতি উপদ্রুত এলাকার মানুষজনের মধ্যে। হাতি সমস্যার স্থায়ী সমাধানের দাবিতে তৈরি হওয়া ‘সংগ্রামী গণমঞ্চ’-র রাজ্য মুখপাত্র চন্দন প্রামাণিকের আক্ষেপ, “আর কত দিন হাতির ভয় নিয়ে বাঁচতে হবে? এ বার সরকার হয় হাতি সমস্যার স্থায়ী সমাধান করুক, না হলে অন্তত ভোটের মুখে মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দেওয়া বন্ধ করুক।”
কেন হাতিদের জেলায় ঢোকা বন্ধ করা যাচ্ছে না? কেনই বা জেলায় থেকে যাওয়া রেসিডেন্ট হাতিরা যাতে জঙ্গল থেকে লোকালয়ে না ঢুকতে পারে, সে ব্যবস্থা করা হচ্ছে না?
চাপানউতোর শুরু হয়েছেন শাসক ও বিরোধী দলের মধ্যে। বড়জোড়ার বিধায়ক সুজিত চক্রবর্তীর দাবি, ‘‘ময়ূরঝর্না প্রকল্পকে বাস্তবায়িত করে হাতিদের সেখানে আটকে রাখা এবং জেলার জঙ্গলগুলিতে হাতির জন্য পর্যাপ্ত খাবার ও জলের ব্যবস্থা করতে বিধানসভায় দাবি জানিয়েছি। মুখ্যমন্ত্রী ও বনমন্ত্রীকে চিঠিও দিয়েছি। কিন্তু কাজ তো পরের কথা, জবাবটুকুই পাইনি।’’ তাঁর অভিযোগ, রাজ্য সরকার শুধু ক্ষতিপূরণের টাকা বাড়িয়েই দায় ছেড়ে ফেলতে চাইছে। জঙ্গল লাগোয়া এলাকার বাসিন্দাদের সমস্যা মেটানোর বিষয়ে কোনও চিন্তা-ভাবনাই নেই।
বিষ্ণুপুরের বিদায়ী সাংসদ তথা ওই কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী সৌমিত্র খাঁয়ের আবার দাবি, ‘‘২০১৪ সালে সাংসদ হওয়ার পরে বাঁকুড়া উত্তর বনবিভাগের সমস্ত রেঞ্জ অফিসারদের নিয়ে নিয়মিত বৈঠক করতাম। বিষয়টিকে এতটাই গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল যে বাঁকুড়া উত্তর বনবিভাগে হাতির দল ঢোকা অনেকখানি রুখে দেওয়া সম্ভব হয়েছিল। গত ডিসেম্বর থেকে আমি জেলায় নেই। সমস্যাও ফিরে এসেছে।’’
সৌমিত্রের দাবি উড়িয়ে দিয়ে বাঁকুড়া জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ তথা বড়জোড়ার তৃণমূল নেতা সুখেন বিদ দাবি করেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর কড়া নির্দেশেই বন দফতর আগের থেকে তৎপর হয়েছে। তাতেই বাঁকুড়া উত্তর বনবিভাগে হাতি ঢোকা রোখা গিয়েছে। গত কয়েক বছরে জেলায় হাতির হানায় মৃত্যু ও ক্ষয়ক্ষতি কমেছে। হাতিদের আটকাতে সরকার ধারাবাহিক ভাবে কাজ করে যাচ্ছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy