পথ নিরাপত্তা বিধি নিয়ে লাগাতার প্রচার, অভিযান যেমন চলছে তেমনই পাল্লা দিয়ে বাড়ছে দুর্ঘটনাও। গত সাত দিনে শুধু রামপুরহাট মহকুমা এলাকাতেই একাধিক দুর্ঘটনায় দশ জনের মৃত্যু হয়েছে। আর শেষ পনেরো দিনের হিসেবে সংখ্যাটা ১২! কেন পরপর এত দুর্ঘটনা ঘটছে, তা জানিয়ে গত বুধবারের সমবায় বৈঠক শেষে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও।
পুলিশের তথ্যই বলছে, শুধু রানীগঞ্জ-মোড়গ্রাম জাতীয় সড়কে গত সাত দিনে মৃত্যু হয়েছে চার জনের। গত ১৫ দিনে সংখ্যাটা ছয়। আর এক মাসের হিসেবে নয়। জাতীয় সড়ক ছাড়া মুরারই-রাজগ্রাম রাজ্য সড়কে তিন জন এবং মুরারই– রঘুনাথগঞ্জ রাজ্য সড়কে দুই মোটরবাইক আরোহী মৃত্যু রয়েছে। রামপুরহাট– পারুলিয়া রাজ্য সড়কেও এক জনের মৃত্যু হয়। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রী সড়ক যোজনা এবং গ্রামের ভিতরে যাওয়া রাস্তায় পথ দুর্ঘটনায় আরও চার জনের মৃত্যু হয়েছে।
এর মধ্যে হেলমেট না থাকার কারণে মৃত্যু হয়েছে ছয় মোটরবাইক আরোহীর। তার মধ্যে চার জন আবার ছাত্র। হেলমেটবিহীন অবস্থায় দুর্ঘটনা ঘটে গত ১৪ জানুয়ারি। রানীগঞ্জ-মোড়গ্রাম জাতীয় সড়কে রামপুরহাট থানার মনসুবার মোড় সংলগ্ন এলাকায়। মৃত্যু হয় দেবজ্যোতি ভাদুড়ি নামে নলহাটি পুরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দার। দেবজ্যোতি মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী ছিল। কুয়াশার জেরেই ওই দুর্ঘটনা বলে অনুমান। ওই ঘটনায় জখম হয় তার বন্ধুও। পর দিনই, ১৫ জানুয়ারি রানীগঞ্জ-মোড়গ্রাম জাতীয় সড়কে সরিফুল শেখ এবং ইসমাইল শেখ নামে দু’জন নাবালক ছাত্র একই ভাবে হেলমেটবিহীন অবস্থায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা ডাম্পারে ধাক্কা মারলে দু’জনেরই মৃত্যু হয়। মঙ্গলবার দুপুরে নলহাটির বানিওড় গ্রামের বছর সতেরোর দেবাশিস মহারাজ হেলমেটহীন অবস্থায় গাছের ধাক্কা মারলে ঘটনাস্থলেই মারা যায়।
একের পর এক দুর্ঘটনার পরেও সচেতনতার বহর দেখে চিন্তায় পুলিশ, প্রশাসন। ‘নো হেলমেট, নো পেট্রোল’ থেকে শুরু করে গোলাপ হাতে ধরিয়ে গাঁধিগিরি— কোনও পথেই ঠেকানো যাচ্ছে না দুর্ঘটনা। পুলিশের তরফ থেকে হেলমেট কিনে দেওয়া হলেও হুঁশ ফেরেনি অনেক বাইক আরোহীর। পুলিশের একটি মহলের আক্ষেপ, নিজের ভাল, পরিবারের ভালর জন্যেই হেলমেট পড়তে বলা। তাতে প্রাণের ঝুঁকি অনেকটা কমে। কিন্তু, একটা অংশ সে সব বুঝলে তো! মঙ্গলবার রাতেও মুরারই-রঘুনাথগঞ্জ রাস্তায় মুরারই থানার কাশেমনগর মোড়ে কালভার্ট পেরোতে গিয়ে দুই বাইক আরোহী বিপরীত দিক থেকে আসা ট্রাকের ধাক্কায় মারা যান। পুলিশ জানাচ্ছে, মৃত অমিত দেবনাথ (৪২) এবং হীরন্ময় সেন (৩৭) কারোর মাথাতেই হেলমেট ছিল না! এ সব ছাড়াও বিচ্ছিন্ন ভাবে
দুর্ঘটনা ঘটেই চলেছে। ২৫ জানুয়ারি রামপুরহাট-পারুলিয়া রোডে মাড়গ্রাম থানার বিষ্ণুপুরে পথ দুর্ঘটনায় এক যুবকের মৃত্যু ঘিরে উত্তেজিত জনতা পুলিশকে লক্ষ্য করে আবার ইট, পাটকেল ছোড়ে। তাতে এক পুলিশ কর্মী জখম হয়।
প্রতিনিয়ত ঘটে চলা এই সব দুর্ঘটনারই খবর পৌঁছেছে মুখ্যমন্ত্রীর কানে। মন্ত্রী তথা রামপুরহাট বিধানসভার বিধায়ক আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বুধবার সমবায় নিয়ে বৈঠক শেষে মুখ্যমন্ত্রী রামপুরহাট মহকুমায় বেড়ে চলা দুর্ঘটনা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। কী ভাবে তার মোকাবিলা করা যায়, তা নিয়ে বৃহস্পতিবার বৈঠকও হয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy