অনুরোধ: দোকানে পুরপ্রধান এবং নাগরিক মঞ্চের প্রতিনিধিরা। নিজস্ব চিত্র
প্লাস্টিক ব্যবহার বন্ধের মতো বিভিন্ন ব্যাপারে পুরসভায় স্মারকলিপি দিতে গিয়েছিল নাগরিক মঞ্চ। পুরপ্রধানের কথায় মঞ্চের সদস্যরা সক্রিয় ভাবে সচেতনতা তৈরির প্রচারে সামিল হলেন।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রঘুনাথপুর শহরের নাগরিক মঞ্চের সদস্যরা পুরপ্রধান ভবেশ চট্টোপাধ্যায় ও পুরসভার কর্মীদের সঙ্গে ঘণ্টা দেখানেক ধরে দোকানে দোকানে ঘুরেছেন। প্লাস্টিকের ব্যাগ ব্যবহার বন্ধ করতে আবেদন করেছেন ব্যবসায়ীদের। বলা হয়েছে দোকানের আর্বজনা রাস্তায় না ফেলতে। পুরপ্রধান বলেন, ‘‘প্লাস্টিক ব্যবহার বন্ধে পুরসভার সঙ্গে শহরের বাসিন্দাদের সামিল হওয়ার ঘটনা অত্যন্ত ইতিবাচক। আমরা সবাই মিলে রঘুনাথপুকে প্লাস্টিকমুক্ত শহর করার চেষ্টা শুরু করেছি।”
এক বছর আগে রঘুনাথপুর শহরে প্লাস্টিক ব্যবহার বন্ধ করতে উদ্যোগী হয়েছিল পুরসভা। মহকুমাপ্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করে কাউন্সিলরদের নিয়ে প্রচার শুরু করেছিলেন পুরপ্রধান। সেই সময়ে কিছু দোকান প্লাস্টিকের ব্যাগ ব্যবহার বন্ধ করেছিল। কিন্তু পরে আবার চেনা ছবিটাই ফিরে এসেছে। হাজার তিরিশেক বাসিন্দার বাস এই শহরে। তেরোটি ওয়ার্ড। ছোট বড় মিলিয়ে দোকানের সংখ্যা প্রায় দুশো। তার পরে রয়েছে রাস্তার পাশে অস্থায়ী অনেক দোকান। এই বিশাল সংখ্যক ব্যবসায়ীকে বুঝিয়ে প্লাস্টিকের ব্যাগ ব্যবহার বন্ধ করা যে রীতিমত কঠিন কাজ, সেটা মেনে নিচ্ছে পুরসভাও। তবে লাগাতার প্রচারের মাধ্যমে সচেতনতা তৈরি হবে বলে আশাবাদী পুরপ্রধান।
বুধবার নাগরিক মঞ্চ স্মারকলিপি দিতে গিয়ে শহর জুড়ে প্লাস্টিকের ব্যগ ব্যাবহার বন্ধে পুরসভাকে সক্রিয় হতে আবেদন জানিয়েছিল। সেই সময়েই পুরপ্রধান মঞ্চের সদস্যদের আবেদন করেন, সবাই মিলে এই বিষয়ে সার্বিক প্রচার করার জন্য। বুধবারের আলোচনাতেই স্থির হয়েছিল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সচেতনতা প্রচারে নামবে পুরসভা। তাতে সামিল হবেন নাগরিক মঞ্চের সদস্যেরা। মঞ্চের অন্যতম কর্মকর্তা কৌশিক সরকার জানান, পুরসভার সঙ্গে তাঁদের জনা কুড়ি সদস্য প্রচারে সামিল হয়েছিলেন। পুরুলিয়া-বরাকর রাস্তার পাশে থানা, পুরসভা ও জীবনবীমা নিগমের কাছে থাকা দোকানগুলির ব্যবসায়ীদের কাছে প্রচার করা হয়েছে। পরে নতুন বাজারে হাটতলা মোড় পর্যন্ত প্রচার হয়েছে।
পুরসভার দীর্ঘদিনের অভিযোগ, ব্যবসায়ীরা দোকানের আর্বজনা রাস্তার মধ্যে যেখানে সেখানে ফেলে দেন। নোংরা জমে স্তূপ হয়ে ওঠে। পুরপ্রধান ও কৌশিকবাবু জানান, তাঁরা ব্যবসায়ীদের এই বিষয়েও সচেতন হওয়ার আবেদন জানিয়েছেন। ভবেশবাবু বলেন, ‘‘আমরা বলেছি দোকানের বাইরে ওয়েস্টবিনে নোংরা ফেলতে। পরে পুরসভার গাড়ি সেখান থেকে আর্বজনা নিয়ে যাবে।”
শহরবাসীর একাংশের মতে, আর্বজনার সমস্যার সুরাহা করতে পারলেও প্লাস্টিক ব্যবহার বন্ধ করতে অনেক কাঠখড় পোড়ানো দরকার। গত বছরের উদ্যোগের ফল যে বিশেষ ফলেনি, সেই কথা মনে করিয়ে কেউ কেউ দাবি করছেন, কড়া ব্যবস্থা না নিলে কাজ হবে না।
অন্য দিকে, কিছু ব্যবসায়ী দাবি করেছেন, তাঁরা প্লাস্টিকের ব্যাগ ব্যবহার বন্ধ করতেই চান। কিন্তু ক্রেতাদের চাপে সেটা করা সম্ভব হয় না। মিষ্টির দোকানের মালিক বৈদ্যনাথ নাগ, ফল বিক্রেতা সম্পদ করেরা বলেন, ‘‘পুরসভা আগে এক বার প্লাস্টিকের ব্যাগ ব্যবহার বন্ধ করতে বলেছিল। সেই সময়ে কাগজের ঠোঙা ব্যবহার শুরু করেছিলাম। কিন্তু ক্রেতারাই প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ চেয়ে চাপাচাপি শুরু করেন।’’ এখনও অনেক ক্রেতাই বাড়ি থেকে ব্যাগ না নিয়ে এসে জিনিস কিনে ক্যারিব্যাগ চান বলে তাঁরা দাবি করেছেন।
প্রচারে কাজ না হলে প্রয়োজনে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার কথা ভাবছেন বলে জানিয়েছে পুরপ্রধান। তিনি বলেন, ‘‘প্রয়োজনে যে সমস্ত দোকান প্লাস্টিকের ব্যাগ ব্যবহার করছে সেগুলিকে চিহ্নিত করে জরিমানা করা হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy