Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

গায়ে রক্তমাখা জামা, পথে আটক অভিযুক্ত

সোমবার সকালে ৬টা নাগাদ বাঁকুড়া সদর থানার মগরা তেমাথা মোড়ে খুন হয়েছেন স্থানীয় গাজাড়্যা গ্রামের লিচু রায় (৭৪) এবং অজিত চৌধুরী (৫৬)। অভিযোগ, তাঁদের কুড়ুল দিয়ে কুপিয়ে খুন করেছে ওই এলাকারই বছর তিরিশের যুবক অরূপ চৌধুরী।

ঘটনাস্থলে: এখানেই খুন হয়েছিলেন লিচুদেবী। পড়ে রয়েছে তাঁর গ্লাস ও চটি। ছবি: অভিজিৎ সিংহ

ঘটনাস্থলে: এখানেই খুন হয়েছিলেন লিচুদেবী। পড়ে রয়েছে তাঁর গ্লাস ও চটি। ছবি: অভিজিৎ সিংহ

নিজস্ব সংবাদদাতা
বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ০৫ নভেম্বর ২০১৯ ০০:৩০
Share: Save:

সবে সকাল হয়েছে। গ্রামের রাস্তা দিয়ে রক্তমাখা জামা পরা এক যুবক হেঁটে যাচ্ছে। ওই রাস্তা ধরেই গাড়িতে চেপে আসছিলেন এক পুলিশ আধিকারিক। যুবকের জামায় রক্তের দাগ দেখে সন্দেহ হয় তাঁর। গাড়ি থেকে নেমে কথা বলা শুরু করেন তিনি। পুলিশের দাবি, জিজ্ঞাসাবাদের সময় ওই পুলিশ আধিকারিকের কাছে যুবক মেনে নেয়, কিছুক্ষণ আগে সে কুড়ুলের কোপে খুন করেছে দু’জনকে!

সোমবার সকালে ৬টা নাগাদ বাঁকুড়া সদর থানার মগরা তেমাথা মোড়ে খুন হয়েছেন স্থানীয় গাজাড়্যা গ্রামের লিচু রায় (৭৪) এবং অজিত চৌধুরী (৫৬)। অভিযোগ, তাঁদের কুড়ুল দিয়ে কুপিয়ে খুন করেছে ওই এলাকারই বছর তিরিশের যুবক অরূপ চৌধুরী। ঘটনাস্থলে এ দিন সকালে গিয়ে দেখা যায়, তেমাথা মোড়ে চায়ের দোকানের সামনে রক্ত তখনও শুকিয়ে যায়নি। কয়েকফুট দুরে রাস্তার পাশে পড়ে রয়েছে রক্তমাখা একটি স্টিলের গ্লাস ও এক জোড়া জুতো। স্থানীয় এক বাসিন্দা জানালেন, জুতো জোড়া লিচুদেবীর। তবে রক্তমাখা গ্লাসটি কী করে সেখানে এল, তা জানাতে পারেননি কেউ। ঘটনার আকস্মিকতায় কার্যত বাক্‌রুদ্ধ এলাকাবাসী। অভিযুক্ত যুবকের শাস্তির দাবিতে সরব হয়েছেন তাঁরা। পুলিশের দাবি, ঘটনার পরেই বাড়িতে ফিরে গিয়েছিল ওই যুবক। কুড়ুলটি লুকিয়ে রেখেছিল সেখানে। তার পরেই চম্পট দেওয়ার মতলব এঁটেছিল। ততক্ষণে জোড়া খুনের খবর চলে গিয়েছিল বাঁকুড়া সদর থানায়। ঘটনাস্থলের উদ্দেশে রওনা দিয়েছিলেন বাঁকুড়া সদর থানার আইসি অশোককুমার মিশ্র।

পুলিশ সূত্রের খবর, গ্রামে যাওয়ার পথে রক্তমাখা জামা পরে এক যুবককে হেঁটে যেতে দেখেন অশোকবাবু। জামায় রক্তের দাগ দেখে সন্দেহ হয় তাঁর। গাড়ি থেকে নেমে তিনি আটক করেন ওই যুবককে। সেখানেই তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। সূত্রের দাবি, অশোকবাবুর কাছে ওই যুবক মেনে নেয়, কিছুক্ষণ আগে সে খুন করেছে দু’জনকে। তারপরেই তাকে থানায় নিয়ে আসা হয়। সেখানে ফের এক প্রস্ত জিজ্ঞাসাবাদ সেরে গ্রেফতার করা হয় ওই যুবককে। পরে পুলিশ তার বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে রক্তমাখা কুড়ুলটি উদ্ধার করে।

কান্নায় ভেঙে পড়েছেন নিহত অজিতবাবুর স্ত্রী (বাঁ দিকে) লিচুদেবীর শোকার্ত পরিজনেরা। নিজস্ব চিত্র

অরূপ ‘মানসিক রোগে’ আক্রান্ত বলে দাবি তার পরিবারের। ধৃতের এক আত্মীয়ের দাবি, চিকিৎসা চলছে ওই যুবকের। তবে গ্রামবাসীর একাংশের দাবি, ওই যুবক খুবই উগ্র স্বভাবের। প্রায়ই গ্রামের লোকজনকে মারধর করত। তার বাড়ির লোকের কাছে এ নিয়ে বহু বার নালিশও করা হয়েছিল।

জোড়া খুনের ঘটনার প্রকাশ্যে আসার পরেই, ধৃতের বাড়িতে হামলা চালানোর অভিযোগ ওঠে গ্রামবাসীর একাংশের বিরুদ্ধে। অরূপের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, দোতলা বাড়ির সদর দরজার সামনে দুমড়েমুচড়ে পড়ে রয়েছে একটি মোটর বাইক। মাথার উপরের অ্যাসবেসটসের ছাউনি ভাঙা। ইতিউতি ছড়িয়ে রয়েছে জিনিসপত্র। বাড়িতে কেউ নেই। স্থানীয় কয়েকজন জানান, পরিবারের সদস্যদের উদ্ধার করে নিয়ে গিয়েছে পুলিশ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Crime Murder Police
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE