খালি: কীর্ণাহারের একটি দর্জির দোকানে। ছবি: কল্যাণ আচার্য
রমজানের রোজার শেষে আসছে খুশির ইদ। কিন্তু আব্দুল লতিফ, ইসমাইল মিয়াঁদের ইদের খুশি কেড়ে নিয়েছে লকডাউন।
ইসমাইলরা পেশায় দর্জি। লকডাউনের জন্য তাঁদের দোকানে তালা ঝুলছে। এখন কী করে ছেলেমেয়েদের মুখে ইদের হাসি ফোটাবেন, কী করে সারা বছর ভাত-কাপড়ের জোগাড় করবেন ভেবে পাচ্ছেন না তাঁরা। দুশ্চিন্তায় রাতের ঘুম উবে গিয়েছে। শুধু ইসমাইলদেরই নয়, জেলার অধিকাংশ দর্জিদেরই একই অবস্থা। দর্জি দোকানে যাঁরা কাজ করেন, তাঁরাও পড়েছেন চরম সমস্যায়।
দর্জিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে, সারা বছর টুকটাক কাজ চললেও পুজো এবং ইদে তাঁদের দম ফেলার ফুরসত থাকে না। মাস দু’য়েক আগে থেকেই অর্ডার নেওয়ার পাশাপাশি চলে সেলাইয়ের কাজও। ওই দুই মরসুমে সেলাইয়ের কাজ করেই পুজো বা ইদের খরচ-সহ সারা বছরের ভাত কাপড়ের সংস্থান করে নেন দর্জিরা। কিন্তু এ বারে সেই সম্ভাবনায় বাদ সেধেছে লকডাউন। অর্ডার নেওয়ার সময় থেকেই তালা ঝুলছে দোকানে। হাতে আর দিন পনেরো সময় আছে । আইনি ছাড়পত্র নিয়ে দোকান খুলতে কতদিন লাগবে তার কোনও নিশ্চয়তা নেই। তারপর কবেই বা অর্ডার পাবেন, কবেই বা সেলাই করবেন ভেবে পাচ্ছেন না তাঁরা।
৩৫ বছর ধরে দর্জির কাজ করছেন দিন মহম্মদ। তাঁর দোকানে ৪ জন কর্মী কাজ করেন। গত বছর ইদে জামা প্যান্ট সেলাই করে ৪০ হাজার টাকা আয় হয়েছিল। তিনি জানাচ্ছেন, ইদের ১৫ দিন আগেই ২৫ হাজার টাকার জামা প্যান্ট সেলাই হয়ে যায়। এ বারে কোনও অর্ডারই মেলেনি। একই অবস্থা কীর্ণাহারের আব্দুর রহিমেরও। তিনিও ৩০ বছর ধরে সেলাইয়ের কাজ করছেন। তাঁর কথায়, ‘‘এমন অবস্থা কখনও হয়নি। এরপরে দোকান খুললেও আর ইদের বাজার ধরতে পারব না। অন্যবার মাস দু’য়েক আগে থেকে অর্ডার নিয়েও সেলাই করতে হিমশিম খেয়ে যাই। এ বার কাপড়ের দোকান বন্ধ থাকায় অনেকে ছিটই কিনতে পারেননি। অর্ডার পেলেও খুব একটা লাভ হবে না।’’ আমোদপুরের ইসরাইল মিঁয়া, আব্দুল লতিফরা জানান, ইদ আর পুজোর কাজ করেই আমাদের সারা বছরের ভাত কাপড়ের সংস্থান হয়। ইদে স্ত্রী–ছেলেমেয়েদের মুখে হাসি ফোটে। এবারে আর সেই আশা নেই ।
শুধু দর্জিরাই নন, দর্জি দোকানের কর্মীরাও বিপাকে। ময়ূরেশ্বরের শেখ জামাল, লাভপুরের আনোয়ার হোসেনরা বলেন, ‘‘দর্জি দোকানে কাজ করেই আমাদের সংসার চলে। অন্যবার মালিকের কাছে কিছু করে অগ্রিম নিয়ে ইদের বাজার হয়। এ বার দোকান বন্ধ থাকায় সেই সুযোগ নেই। ত্রাণের চাল-ডালে দিন কাটছে। কী করে ছেলেমেয়েদের জামাপ্যান্ট কিনে দেব ভেবে পাচ্ছি না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy