মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সামনেই সিউড়ির পুরপ্রধান কথা দিয়েছিলেন দিন কয়েকের মধ্যে পুরশহরে জলসঙ্কট মিটবে। কিন্তু, তা মেটেনি আজও। শহরবাসীর প্রশ্ন, ঠিক কত দিন পরে পরিস্রুত পানীয় জল সরবরাহ স্বাভাবিক হবে?
গত বছরের ২১ মার্চ বোলপুরের প্রশাসনিক বৈঠকে সিউড়ি শহরের জলপ্রকল্প নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর প্রশ্নের উত্তরে সিউড়ির পুরপ্রধান উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায় বলেছিলেন, ‘‘পুরশহরে জলসঙ্কট ঘুচতে চলেছে এ মাসেই।’’ তার পরে কেটে গিয়েছে ৯ মাস। চলতি মাসের ২ জানুয়ারি বোলপুরের প্রশাসনিক বৈঠক থেকে মুখ্যমন্ত্রী যখন শহরের জল সরবরাহ নিয়ে জানতে চান, পুরপ্রধান উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায় তাঁকে বলেন, ‘‘দিদি, ৯৮ শতাংশ কাজ শেষ। দিন কয়েকের মধ্যেই কাজ শেষ হবে।’’
শতাব্দী প্রাচীন পুরসভা তথা জেলা সদর সিউড়ি শহরের অন্যতম প্রধান সমস্যা পুর এলাকার সব কটি ওয়ার্ডে পরিস্রুত পানীয় জল পৌঁছতে না পারা। পুরসভা সূত্রে খবর, আগে যে জল প্রকল্প ছিল তাকে সম্প্রসারিত করতে বেশ কয়েক কোটি টাকা বরাদ্দ হলেও জল-সঙ্কট মেটেনি। ১৯ ওয়ার্ড বিশিষ্ট পুরসভার অন্তত সাতটি ওয়ার্ডে ঠিক মতো জল পৌঁছতো না। তথ্য বলছে, সিউড়ি শহরে প্রতিদিন ২০ লক্ষ গ্যালন জলের প্রয়োজন। জলপ্রকল্পে টাকা ঢেলেও ৭ লক্ষ গ্যালনের বেশি জল সরবরাহ করা যাচ্ছিল না। ফলে সমস্যা ছিলই।
এই কারণে গত পুর নির্বাচনে তৃণমূলশাসিত পুর কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে জলসমস্যাই ছিল বিরোধীদের মূল বিষয়। নির্বাচনে জয়ী হলে, শহরের জলকষ্ট দূর করবেন তখনই আশ্বাস দিয়েছিলেন পুরমন্ত্রী তথা পরিদর্শক ফিরহাদ হাকিম। কথা রেখেছেন তিনি। তৃণমূল ফের পুরসভার
ক্ষমতা দখলের পরই শহরের জলকষ্ট মেটাতে প্রায় ১৪ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়। কাজের দায়িত্ব পায় পুর কারিগরি দফতর। সেই প্রকল্পই ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে শুরু হয়ে গত বছরের মার্চেই কাজ শেষ করার কথা ছিল। শহরবাসীর জিজ্ঞাসা, যে জল প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন গত মার্চেই হওয়ার কথা, সেটা এখনও হল না কেন? আসলে সত্যিটা কী?
পুরসভা ও দায়িত্বপ্রাপ্ত পুর কারিগরি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, বরাদ্দ হয়েছিল মোট ১৩ কোটি ৯০ লক্ষ টাকা। সিউড়ি পুরসভায় যে জলপ্রকল্প ছিল, সেটিকে সম্প্রসারিত করে সমস্ত ওয়ার্ডে জল পৌঁছনোই মূল উদ্দেশ্য ছিল
প্রকল্পটির। সিউড়ির দুর্গাপুর আদিবাসী পাড়া লাগোয়া মযূরাক্ষী নদী বক্ষে তিনটি গভীর নলকূপ বসিয়ে জল তোলার ব্যবস্থা হয়েছিল। সেই জল তুলে পরিস্রুত করে জমা করে রাখার জন্য ফের ৫.৪ কিমি দূরত্বে সিউড়ি শহরের দত্তপুকুরে একটা ১২ লক্ষ জলধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন ওভারহেড জলাধার তৈরি হয়। এমইডির আধিকারিকরা জানিয়েছিলেন, ৪৪ কিমি পাইপ লাইন দিয়ে সেই জলসঙ্কটে থাকা পুরসভার ৬, ৭, ১০, ১১, ১২, ১৩ ,১৪ নম্বর ওয়ার্ডে জল পৌঁছে দেওয়া হবে। গত মার্চ থেকেই বাড়ি বাড়ি সংযোগ দেওয়ার কাজ চলছিল। এখনও সে
কাজ সম্পন্ন হল না কেন, তার সদুত্তর দিতে রাজি হননি দায়িত্ব প্রাপ্ত সংস্থার আধিকারিকরা।
পুরসভা ও এমইডি সূত্রে খবর, জল সরবরাহ শুরু হলেও বাড়ি বাড়ি সংযোগ দেওয়ার কাজও ১০০ শতাংশ হয়নি। শুধু তাই নয়, আগে যে ওয়ার্ডগুলিতে জলসঙ্কট ছিল না, সেই ওয়ার্ডগুলির মধ্যে ২, ৮ নম্বর ওয়ার্ডে জল সরবরাহ ঠিক ভাবে হচ্ছে না। পরিস্রুত পানীয় জল পেতে সমস্যা রয়েছে আংশিক ভাবে ১৭ ও ১৯ ওয়ার্ডে। ‘‘এই অবস্থায় কি ভাবে জল সরবরাহ স্বাভাবিক বলা যায়’’, বলছেন অনেকেই।
পুরপ্রধান উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায় অবশ্য দাবি করছেন, ‘‘নতুন প্রকল্পের কাজ শেষ। সাতটি ওয়ার্ডে জল পেতেও সমস্যা থাকার কথা নয়। এমইডির কাছ থেকে প্রকল্প হস্তান্তর কেবল সময়ের অপেক্ষা। বাকি যে যে ওয়ার্ডগুলিতে পানীয় জলের পৌঁছতে সমস্যা রয়েছে, সেটি দ্রুত যাচাই করে দেখবে পুর কারিগরি দফতর।’’ পুরপ্রধানের আরও যুক্তি, আগে পুরানো প্রকল্পের মাধ্যমেই গোটা শহরে জল সরবরাহ করা হতো। তাই সব এলাকায় সমান ভাবে জল পৌঁছত না। কিন্তু, নতুন প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার পরে পুরানো সংযোগ কেটে নতুন সংযোগ বাড়ি বাড়ি দেওয়া হয়েছে। তবে দুটি লাইন এখনও পৃথক করা হয়নি। তাই কিছু সমস্যা রয়েছে। দ্রুত গোটা শহরে জল সরবরাহের সমস্যা মিটবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy