চন্দ্রপুর বিট অফিসে তৈরি হচ্ছে চারা। ছবি: দয়াল সেনগুপ্ত।
শেষমেশ চিনপাইয়ের বন্ধ হয়ে যাওয়া বারুদ কারখানার সীমানার মধ্যে থাকা বন দফতরের জমিতে বৃক্ষরোপণের কাজ শুরু হতে চলেছে। এ বারের বর্ষায় মোট ১০০ হেক্টর জমিতে ১ লক্ষ ৬০ হাজারটি বিভিন্ন প্রজাতির গাছের চারা লাগানো হবে বলে জানিয়েছেন খোদ ডিএফও সন্তোষা জি আর।
গত নভেম্বরে ওই জমিতে গাছ লাগানোর জন্য জরিপের কাজ শুরু হতেই বাধার মুখে পড়েছিলেন বন দফতরের কর্মীরা। বাধা দিয়েছিলেন কারখানার প্রাক্তন কর্মীরা। এ বার বর্ষায় সেখানে চারা লাগানোর জন্য ইতিমধ্যেই সব রকমের প্রস্তুতি সেরে ফেলেছে দফতর। দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজনগরের চন্দ্রপুর বিট অফিসে উন্নত প্রযুক্তিতে চারা তৈরির কাজ চূড়ান্ত পর্যায়ে। সেখানে বেড়ে উঠেছে শিরিষ, শিশু, পলাশ, শিমূল, তেঁতুল, বহেরা, হরিতকি, কদম-সহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছের চারা।
দফতর ও স্থানীয় সূত্রের খবর, ‘ইস্টার্ন এক্সপ্লোসিভ কেমিক্যালস্ লিমিটেড’ নামে চিনপাইয়ে ওই বারুদ কারখানার সূচনা হয়েছিল ১৯৮৩ সালে। ওই বছর পরীক্ষামূলক ভাবে উৎপাদন শুরু হওয়ার পরে ১৯৮৪ সাল থেকে বাণিজ্যিক ভাবে উৎপাদন শুরু হয়। যে জমির উপর কারখানা ছিল, তার পরিমাপ প্রায় ১,২৩৬ একর। কারখানার ৫০ শতাংশ শেয়ার হোল্ডার ছিল ডাব্লিউবিআইডিসি এবং বাকি আইডিএল কেমিক্যালসের। ব্যক্তিগত মালিকানা, পাট্টা মিলিয়ে ৪২০ একর এবং বন দফতর লিজ দিয়েছিল বাকি ১২০০ একর জমি। ১৯৯৬ সালে হঠাৎ-ই কারখানার উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। তার পর এত বছরে কারখানা মাটিতে মিশেছে। অব্যবহৃত থেকে গিয়েছিল জমিটাই। গত বছর সেই জমিতেই গাছ লাগানোর সিদ্ধান্ত নেয় বন দফতর।
যদিও ওই জমিতে চারা রোপণের ক্ষেত্রে প্রাথমিক ভাবে বারুদ কারখানার প্রাক্তন শ্রমিকেরা বন কর্মীদের বাধা দেন। তাঁদের দাবি ছিল, ‘লিক্যুইডেশনে’ চলে যাওয়ায় কারখানা থেকে তাঁদের পাওনা-গণ্ডা অনেক বাকি। ইতিমধ্যেই সম্পূর্ণ কারখানা ধুলোয় মিশেছে। চুরি গিয়েছে সব যন্ত্রপাতিও। এমন অবস্থায় যদি বন দফতর গাছ লাগিয়ে দেয়, তা হলে জমিও গেল। সে ক্ষেত্রে তাঁদের আইনি লড়াই চালিয়ে যাওয়ার শেষ সুযোগও হারিয়ে যাবে বলেই ওই শ্রমকদের দাবি। বন দফতর অবশ্য সে যুক্তি মানতে চায়নি। ডিএফও তখনই জানিয়ে দিয়েছিলেন, জমি বন দফতরের। কাজেই সেখানে গাছই লাগানো হবে। তখন থেকেই প্রস্তুতি শুরু।
ডিএফও এ দিনও দাবি করেন, ‘‘ওই জমি নিয়ে কোনও আইনি জটিলতা নেই। তাই ওই জমি ফেলে না রেখে গাছ লাগিয়ে আশপাশের দু’চারটি গ্রামের বাসিন্দাদের বনসুরক্ষা কমিটির জন্য মনোনীত করা হয়েছে। যাতে তাঁদেরও কিছুটা আর্থিক উন্নয়ন হয়। কিছু যুবককে বৃত্তিমূলক ট্রেনিংও করানো হয়েছে, যাতে গাছ দেখভালের ক্ষেত্রে তাঁদের এবং পরিবারের আন্তরিকতা থাকে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy