Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

নেশা ছাড়াতে পুলিশি নিদান কাউন্সেলিং

বোলপুরের বিভিন্ন প্রান্তে চলে হেরোয়িন, কোডিন, চরসের নেশা। প্রতি মাসের প্রথম ও তৃতীয় সোমবার সকাল হলেই পুলিশের গাড়ি বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে মাদকাসক্তদের ধরে নিয়ে আসে শান্তিনিকেতন থানায়।

পাঠ: শান্তিনিকেতন থানায় কাউন্সিলিং চলছে। নিজস্ব চিত্র

পাঠ: শান্তিনিকেতন থানায় কাউন্সিলিং চলছে। নিজস্ব চিত্র

বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী
শান্তিনিকেতন শেষ আপডেট: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০৭:০০
Share: Save:

কারও নেশা না করলে ঘুম আসে না, কারও গায়ে ব্যথা করে। কারও আবার কাজ করার জন্য নেশা করতে হয়!

সবার জন্য সমাধান রয়েছে পুলিশের কাছে। উত্তম মধ্যম নয়, কাউন্সেলিং। সম্প্রতি এলাকার নেশাড়ুদের এনেছিলেন পুলিশ কর্মীরা। লকআপ-এ নয়, তাঁদের নিয়ে যাওয়া হয় শান্তিনিকেতন থানার কাউন্সেলিং শিবিরে।

ড্রাগের নেশা থেকে মুক্তি দিতে পুলিশের উদ্যোগে শান্তিনিকেতন থানায় চলছে নেশাগ্রস্তদের চিকিৎসা ও কাউন্সিলিং-এর শিবির। প্রতি মাসের প্রথম ও তৃতীয় সোমবার মনোরোগ বিশেষজ্ঞ কেদাররঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের তত্ত্বাবধানে কাউন্সেলিং করা হচ্ছে। গড়ে ১৫ থেকে ২০ জন নেশাগ্রস্তকে ওই দিনগুলিতে জীবনের মূল স্রোতে ফেরানোর চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

বোলপুরের বিভিন্ন প্রান্তে চলে হেরোয়িন, কোডিন, চরসের নেশা। প্রতি মাসের প্রথম ও তৃতীয় সোমবার সকাল হলেই পুলিশের গাড়ি বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে মাদকাসক্তদের ধরে নিয়ে আসে শান্তিনিকেতন থানায়। প্রয়োজনে তাদের ওষুধ দেওয়া হয়। আর চলে টানা কাউন্সিলিং।

এ দিনের শিবিরেও নতুন অভিজ্ঞতা হয়েছে পুলিশকর্মীদের। শ্রীনিকেতন সংলগ্ন মোলডাঙা গ্রামের বছর বাইশের এক যুবক জানায়, চার বছর ধরে সে গাঁজার নেশা করেছে। পরে শুরু করে হেরোয়িনের নেশা। চিকিৎসকদের আন্তরিক ব্যবহারে মনের কথা খুলে বলতে শুরু করে সে। বলে, “নেশা না করে কোনও কাজ করতে পারি না স্যার! ছেড়ে দিতে চাইলেও পারি না। পাশে কেউ খেলেই খেতে ইচ্ছা করে।” শিবিরে এসেছিল বোলপুর কলেজের তৃতীয় বর্ষের এক ছাত্র। ঘণ্টা দু’য়েক আগে ড্রাগের নেশা করেছে। ঘোর তখনও কাটেনি। তার বক্তব্য, ‘‘নেশা না করলে ঘুম আসে না। কোনও কাজ করতে পারি না।’’

ধীরে ধীরে কী ভাবে নেশার থেকে পুরোপুরি মুক্তি মিলতে পারে, তাদের সেই পথ বাতলে দেন চিকিৎসকেরা। চিকিৎসকেরা জানান, কত দিন ধরে কতটা করে নেশা করছে, বয়স কত— এই সমস্ত দিক খতিয়ে দেখে নেশা ছাড়ার এক এক রকমের পথের হদিস দিচ্ছেন তাঁরা। মনোরোগ বিশেষজ্ঞ কেদাররঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “ড্রাগের নেশা থেকে কাউকে বের করে আনা খুব সহজ কাজ নয়। এসডিপিও (বোলপুর) অম্লানকুসুম ঘোষের প্রচেষ্টায় আমরা এই শিবির খুলেছি। এখানে পুলিশ নেশাগ্রস্তদের ধরে আনে, আমরা তাদের সমাজের মূলস্রোতে ফিরিয়ে দেবার চেষ্টা করি।’’

তিনি জানান, রোজই নতুন নতুন অভিজ্ঞতা, নতুন নতুন নেশার কথা জানতে পারছেন এই শিবির থেকে। এই ব্যাপারে এলাকায় সচেতনতা প্রচারের উপরেই বেশি করে জোর দেওয়ার কথা বলেন কেদারবাবু। তাঁর মতে, সেটা হলেই সমাজ থেকে নেশা দূরে সরিয়ে দেওয়া সম্ভব। দিন কয়েক আগে নেশা-মুক্তির দিশা দিতে সিউড়ি জেলা সংশোধনাগারে নাটক করেছিল লাভপুরের বীরভূম সংস্কৃতি বাহিনী।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Couselling Intoxication Addiction Police
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE