Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

আবেদনকারী কম, ‘আপনার জন্য’ পুস্তিকা নিয়ে হাজির প্রশাসন

 ‘আপনার জন্য’ নামে সে পুস্তিকা জেলার প্রতিটি পরিবারের কাছে ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে পৌঁছে দিতে বিডিওদের নির্দেশ দিয়েছেন জেলাশাসক রাহুল মজুমদার।

‘আপনার জন্য’

‘আপনার জন্য’

শুভ্রপ্রকাশ মণ্ডল
রঘুনাথপুর শেষ আপডেট: ১৭ ডিসেম্বর ২০১৯ ০২:১৪
Share: Save:

সচেতনতার অভাবে অনেক সরকারি প্রকল্পেই আবেদনকারী খুব কম। উন্নয়নমূলক কাজকর্ম ও সরকারি প্রকল্পগুলির সুফল সমাজের নিচুতলার বাসিন্দারা কতটা পাচ্ছেন, তা দেখতে গ্রামে ঘুরে এমনই অভিজ্ঞতা পুরুলিয়া জেলা প্রশাসনের অনেক কর্তার। তাঁদের দাবি, তাই দু’মলাটের মধ্যে এগারো রকমের সরকারি সুবিধার তথ্য পুরুলিয়ার প্রায় ছ’লক্ষ পরিবারের দোরগোড়ায় বিনামূল্যে পৌঁছে দেবে প্রশাসন।

‘আপনার জন্য’ নামে সে পুস্তিকা জেলার প্রতিটি পরিবারের কাছে ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে পৌঁছে দিতে বিডিওদের নির্দেশ দিয়েছেন জেলাশাসক রাহুল মজুমদার। জেলাশাসক বলেন, ‘‘ওয়াকিবহাল না হওয়ায় অনেকে প্রকল্পগুলির সুফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। আমরা পুস্তিকা ছাপিয়ে বাসিন্দাদের সচেতনতা তৈরি করতে উদ্যোগী হয়েছি।”

পুস্তিকায় রয়েছে ‘ফসল বিমা যোজনা’, ‘স্বাস্থ্যসাথী’, ‘শিক্ষাশ্রী’, ‘আদিবাসী বার্ধক্যভাতা’, ‘একশো দিনের কাজের প্রকল্প’, ‘কন্যাশ্রী’, ‘রূপশ্রী’, ‘খাদ্যসাথী’, ‘বাংলার আবাস যোজনা’, ‘মানবিক’ ও ‘কৃষকবন্ধু’— এই এগারোটি প্রকল্প সম্পর্কে প্রয়োজনীয় তথ্য। এ সব প্রকল্পে কী সুবিধা পাওয়া যায়, কারা সুবিধা পেতে পারেন, প্রাপক বাছাইয়ের মাপকাঠি কী, কী ভাবে, কোথায় আবেদন করতে হবে—যাবতীয় খোঁজখবর থাকছে। ‘পশ্চিমবঙ্গ জন পরিষেবা আইন’ (২০১৩) অনুযায়ী, ১২টি ক্ষেত্রে বাসিন্দারা সরকারের কাছ থেকে কী-কী পরিষেবা পাবেন, কোথায় আবেদন করলে, কত দিনে পরিষেবা মিলবে, থাকছে সে তথ্যও। পরিষেবা না পেলে যে ফোন নম্বরে অভিযোগ জানাতে হবে, তা-ও রয়েছে।

প্রশাসনিক এই উদ্যোগের উদ্দেশ্য সম্পর্কে সন্দিহান বিজেপির জেলা সভাপতি বিদ্যাসাগর চক্রবর্তী। তিনি বলছেন, ‘‘লোকসভা ভোটে জেলার ন’টি বিধানসভার মধ্যে আটটিতে এগিয়ে আমরা। তৃণমূলের লোকেদের কথা মানুষ বিশ্বাস করছে না বলেই ওদের হয়ে প্রশাসন প্রচারে নেমেছে।’’ পুরুলিয়া জেলা পরিষদের সভাধিপতি তথা জেলা তৃণমূলের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায় মানছেন, ‘‘আমাদের দলের জন প্রতিনিধিদের একাংশের সরকারি প্রকল্পগুলির প্রচার করায় কিছু খামতি আছে। তাই পুস্তিকা দিয়ে মানুষকে সচেতন করাটা প্রশাসনের তরফে ভাল উদ্যোগ।’’ বিজেপির ‘কটাক্ষ’ প্রসঙ্গে তাঁর বক্তব্য, ‘‘সাম্প্রতিক তিনটে উপনির্বাচনের ফলে প্রমাণিত, মানুষ কাদের প্রত্যাখান করেছেন। যারা হেরেছে তারা এখন ভাল কাজেও খুঁত বার করবে।’’

পক্ষান্তরে, প্রশাসন সূত্রের দাবি, নিচুতলা পর্যন্ত সরকারি প্রকল্পের সুবিধা কতটা পৌঁছনো গিয়েছে তা দেখতে জেলাশাসক যেমন বিভিন্ন প্রত্যন্ত এলাকায় যাচ্ছেন, তাঁর নির্দেশে প্রতি সপ্তাহের শুক্রবার ব্লকের কোনও একটি পিছিয়ে পড়া গ্রামে যাচ্ছেন বিডিওরাও। গ্রামে ঘুরে প্রশাসনের কর্তারা বুঝেছেন, সরকারি প্রকল্পগুলি সম্পর্কে যথেষ্ট সচেতন নন অনেকে।। পরিস্থিতির জন্য সরকারি কর্মীদের পাশাপাশি, পঞ্চায়েত স্তরের জনপ্রতিনিধিদের একাংশেরও ‘গরজ’-এর অভাব রয়েছে বলে মনে করছেন প্রশাসনের কর্তারা। সব দিক ভেবে প্রতি কপি গড়ে দু’থেকে আড়াই টাকা ব্যয়ে ওই পুস্তিকা ছাপানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE