চৈতন্যদেবের জন্মস্থান নবদ্বীপ ধাম স্টেশনের পরিকাঠামোয় নানা রদবদল ঘটিয়ে যাত্রী পরিষেবায় বড় মাপের পরিবর্তন আনতে চলেছে রেল কর্তৃপক্ষ। দিনকয়েক আগে নবদ্বীপ ধাম স্টেশন পরিদর্শনে এসে এমনই একগুচ্ছ পরিকল্পনার কথা জানালেন পূর্ব রেলের হাওড়া ডিভিশনের ডিআরএম আর বৈদ্যনারায়ন।
উৎসব পর্যটনে ক্রমশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে চৈতন্যধাম নবদ্বীপ। বারো মাসে তেরো পার্বণের শহরে প্রায় প্রতিদিনই দেশ-বিদেশ থেকে বহিরাগত পর্যটকেরা আসেন। নবদ্বীপের প্রধান দুটি উৎসব, রাস এবং দোলের মরসুমে নবদ্বীপে লক্ষ লক্ষ মানুষের ভিড় হয়। এছাড়াও রথ, ঝুলন, জন্মাষ্টমীর মতো উৎসবে উৎসাহী পর্যটকেরা ভিড় জমাচ্ছেন। প্রতি বছর লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে যাত্রী সংখ্যা। এই পর্যটকদের একাংশ যাতায়াতের মাধ্যম হিসেবে রেলপথকেই ব্যবহার করেন। কিন্তু নবদ্বীপ ধাম স্টেশনে ওই পর্যটকদের জন্য তেমন কোনও সুযোগ-সুবিধা নেই বললেই চলে।
এখানে নেই অনেক মানুষের থাকার জন্য উপযুক্ত বিশ্রামগার, রাত্রিবাসের ব্যবস্থা। নেই যথেষ্ট সংখ্যক পরিচ্ছন্ন শৌচালয়। টিকিট কাউণ্টারের সংখ্যা কম হওয়ায় ভিড়ের মরসুমে লম্বা লাইন বহু সময় ট্রেন ফেল করিয়ে দেয়। দুটি স্বয়ংক্রিয় টিকিট ভেন্ডিং মেশিনই অচল। কোনও অজ্ঞাত কারণে স্টেশনের ওভারব্রিজের সবটা যাত্রীদের ব্যবহারের জন্য খুলে দেওয়া হয় না। অনেক ঘুর পথে বার হতে হয় স্টেশন থেকে। চার নম্বর প্ল্যাটফর্মে কোন টিকিট কাউন্টার না থাকার ফলে বর্ধমানের শ্রীরামপুর এলাকার মানুষকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে লাইন পাড় হয়ে এক নম্বরে এসে টিকিট কাটতে হয়। অভিযোগের তালিকা দীর্ঘ। এ নিয়ে বিভিন্ন সময়ে নিত্যযাত্রী সংগঠন বা নাগরিক কমিটির তরফে রেলের কাছে দাবিপত্র পাঠানো হলেও কাজের কাজ কিছু হয়নি। এ নিয়ে স্থানীয় মানুষের যথেষ্ট ক্ষোভ রয়েছে। দিনকয়েক আগে নবদ্বীপ ধাম স্টেশন পরিদর্শন এসে পূর্ব রেলের হাওড়া ডিভিশনের ডিআরএম জানিয়েছেন, নবদ্বীপ ধাম স্টেশনে জরুরি ভিত্তিতে নানা কাজ শুরু হয়েছে। যার মধ্যে ওইসব দাবির অনেকগুলিই রয়েছে।
আর বৈদ্যনারায়ন ওইদিন স্টেশন এবং সংলগ্ন রেলের বিভিন্ন জায়গা ঘুরে দেখেন দীর্ঘ সময় ধরে। পরিদর্শন শুরু করেন স্টেশনের বাইরে উল্টো দিকের একটি পার্ক থেকে। সেটির দুরাবস্থা দেখে দায়িত্বপ্রাপ্ত ইঞ্জিনিয়ার অনিল কুমারকে আমূল সংস্কারের কাজ শুরু করার নির্দেশ দেন। ঘুরে দেখেন সবকটি প্ল্যাটফর্ম। ওভারব্রিজের সব গেট কেন খোলা হয় না তা জানতে চান স্টেশন ম্যানেজারের কাছে। নির্দেশ দেন ওভারব্রিজের সবটাই যাত্রীদের জন্য খুলে দিয়ে হবে। প্রয়োজনে গেটের মুখে টিকিট চেকার থাকবেন।
যাত্রীদের অভিযোগ এখানে পাঁচটি টিকিট কাউন্টার থাকলেও বেশির ভাগ সময় মাত্র দু’টি টিকিট কাউন্টার খোলা থাকে। স্টেশন ম্যানেজার রমেন্দ্রলাল সরকার বলেন, “উৎসবের মরসুমে টিকিট কাউন্টারের সংখ্যা বাড়ানো হয়। অন্য সময়ে দুটি কাউন্টারেই হয়ে যায়।” নবদ্বীপ স্টেশনে দীর্ঘদিন ধরে দু’টি অটোম্যাটিক টিকিট ভেন্ডিং মেশিন অকেজো হয়ে পড়ে রয়েছে। এ বিষয়ে তাঁর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে ডিআরএম বলেন “ওই দুটি মেশিনের বদলে আরও তিনটি মেশিন আসছে।”
শহরের দ্বিতীয় স্টেশন বিষ্ণুপ্রিয়া হল্টে অনেক লোকাল ট্রেন সকাল এবং রাতের দিকে থামে না। তিনি আশ্বাস দিয়েছেন আগামীতে যাতে বিষ্ণুপ্রিয়া হল্টে সব লোকাল ট্রেন থামে, সেই ব্যবস্থাও করা হবে। ৈসব মিলিয়ে আগামি উৎসব মরসুমের আগেই নতুন সাজে সেজে উঠছে নবদ্বীপ ধাম স্টেশন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy