Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

শৌচাগারে ঝুলছে তালা, নোংরা জলে ভাসে রাস্তা

সরকারি বি়জ্ঞাপনে বলা হয়, ‘যেখানে ভাবনা, সেখানে শৌচালয়।’ কিন্তু আদতে সরকার বা প্রশাসন নিজেরা বিষয়টি নিয়ে কতটা ভাবনা চিন্তা করে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন মানবাজারের বাসিন্দারা। মানবাজারকে মহকুমা শহর হিসাবে গড়ে তোলার প্রক্রিয়া চলছে। প্রায় নয় বর্গ কিলোমিটার জুড়ে থাকা মানবাজার সদরে বসতি বেড়ে চলেছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
মানবাজার শেষ আপডেট: ১৯ অক্টোবর ২০১৬ ০১:১৯
Share: Save:

সরকারি বি়জ্ঞাপনে বলা হয়, ‘যেখানে ভাবনা, সেখানে শৌচালয়।’ কিন্তু আদতে সরকার বা প্রশাসন নিজেরা বিষয়টি নিয়ে কতটা ভাবনা চিন্তা করে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন মানবাজারের বাসিন্দারা। মানবাজারকে মহকুমা শহর হিসাবে গড়ে তোলার প্রক্রিয়া চলছে। প্রায় নয় বর্গ কিলোমিটার জুড়ে থাকা মানবাজার সদরে বসতি বেড়ে চলেছে। কিন্তু অপরিকল্পিত ভাবে। পথঘাটে কিংবা বাজারের মধ্যে শৌচালয় নেই। স্কুল-কলেজ, ব্যবসা ও নিত্য প্রয়োজনে মানবাজারে গড়ে প্রতিদিন হাজারখানেক মানুষ যাতায়াত করেন। কিন্তু শহরের কোথাও ব্যবহারের উপযোগী শৌচালয় না থাকায় বহিরাগতেরা সমস্যায় পড়েন।

শহরে ঢোকার মুখে ইন্দকুড়িতে বামফ্রন্ট সরকারের সময়ে বন দফতরের মানবাজার রেঞ্জ অফিসের পাঁচিল ঘেঁষে একটি শৌচাগার তৈরি হয়েছিল। কিন্তু নির্মাণের পর থেকেই তা তালাবন্ধ। দফতরের কয়েকজন কর্মী জানিয়েছেন, নিকাশি ব্যবস্থা ঠিকঠাক না থাকায় তাঁরা আপত্তি তুলেছিলেন। এখন তালাবন্ধ সেই শৌচাগারের কাছেই লোকে প্রস্রাব করেন।

মানবাজার গ্রামীণ হাসপাতাল, ব্যাঙ্ক, পোস্ট অফিস ও স্কুলে যাওয়ার জন্য যাত্রীরা সাধারণত পোদ্দারপাড়া মোড়ে বাসে ওঠানামা করেন। ওই এলাকার বাসিন্দা জিতেন দত্ত, পশুপতি সেন, সুভাষ হালদারদের অভিজ্ঞতা, ‘‘কিছু লোক বাস থেকে নেমেই এখানে-ওখানে প্রাকৃতিক কাজ সারেন। অনেককে অনুরোধ করে অন্যত্র সরে যেতে বলা হয়। সব সময় নজর রাখা যায় না কি!’’

পুরনো বাসস্ট্যান্ড এলাকায় একটি প্রাথমিক স্কুলের সামনে এক দশক আগে কয়েক লক্ষ টাকা খরচ করে শৌচাগার তৈরি করা হয়েছিল। কিন্তু এখানেও নিকাশির বন্দোবস্ত ছিল না। জলের ব্যবস্থাও নেই। ফলে কয়েক লক্ষ টাকা কার্যত জলে গিয়েছে। ল্যাট্রিনের দরজায় তালা ঝোলে। বাজারের দোকানদার ও পথচারীরা বন্ধ দরজার সামনে প্রাকৃতিক কাজ সারেন। নোংরা জল রাস্তায় গড়ায়। সেই নোংরা জল মাড়িয়েই বাসিন্দাদের যাতায়াত করতে হয়। বাসিন্দাদের অভিযোগ, এ ভাবে যাতায়াত করতে তাঁদের গা ঘিনঘিন করে। কিন্তু প্রশাসনই সব জেনে নিরব থাকলে তাঁরা আর কি করবেন? কাছেই শিশুদের একটি স্কুল রয়েছে। সেখানেও দুর্গন্ধ ছড়ায় বলে অভিযোগ।

মানবাজারের যেখানে দৈনিক সব্জি বাজার ছিল, সেখানে রাস্তার উপরেই একটি শৌচাগার ছিল। সব্জি বিক্রেতাদের বসার জায়গা কম হওয়ায় সেই শৌচাগার প্রায় এক দশক আগে ভেঙে দেওয়া হয়। পরিবর্তে সব্জি বাজারের মধ্যে শৌচাগার তৈরির কাজ শুরু হয়েছিল। কিন্তু অসমাপ্ত অবস্থায় তা কয়েক বছর ধরে পড়ে রয়েছে। সেখানেই অনেকে শৌচকর্ম সারেন। ফলে এখানেও দূষণ ছড়াচ্ছে।

মানবাজার গ্রামীণ হাসপাতালে প্রতিদিন কয়েকশো রোগী এবং তাঁদের আত্মীয়েরা আসেন। হাসপাতাল চত্বরে দু’বছর আগে সুলভ শৌচালয় তৈরি হলেও চালু হয়নি। বাসস্ট্যান্ড এলাকায় কয়েকটি শৌচাগার তৈরি হলেও জলের সংস্থান নেই। যাত্রীরা নাক চেপে যাতায়াত করেন।

কিন্তু সমস্যা সমাধানের উপায় কী, তা নিয়ে জানতে চাওয়া হলে শাসক ও বিরোধী দলের নেতারা পরস্পরের বিরুদ্ধে চাপানউতোর করেছেন। মানবাজারে পঞ্চায়েত এবং পঞ্চায়েত সমিতি তৃণমূলের। যথারীতি বামফ্রন্ট সরকারকে দুষে তাদের অভিযোগ, শহরে কোথাও পরিকল্পনা মাফিক ইউরিন্যাল এবং ল্যাট্রিন গড়ে ওঠেনি। সিপিএম নেতারা লক্ষ লক্ষ টাকা নয়ছয় করেছেন। মানবাজারের বাসিন্দা সিপিএম নেতা প্রদীপ চৌধুরীর দাবি, ‘‘জায়গা না পাওয়াতেই শৌচাগার তৈরি করা যায়নি।’’ তাঁর পাল্টা অভিযোগ, পাঁচ বছর থেকে তৃণমূল সরকারই বা এই সমস্যা নিয়ে কী করেছে?

মানবাজার ১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি কবিতা মাহাতো বলেন, ‘‘শহরের কয়েকটি জায়গায় ইউরিন্যাল নির্মাণ করার পরিকল্পনা আছে। জায়গা পেলেই কাজ শুরু করব।’’ মানবাজার ১ বিডিও সত্যজিৎ বিশ্বাসের আশ্বাস, ‘‘জলের সংযোগ দিয়ে বাসস্ট্যান্ড এলাকার শৌচালয়গুলি চালুর ব্যবস্থা করা হবে।’’ আপাতত তাঁদের আশ্বাসেই আর কিছুদিন দুর্ভোগ সহ্য করবেন বাসিন্দারা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Public Toilet Road Flooded Dirty Water
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE