Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

বালি খাদানে যন্ত্র, তাজ্জব মহকুমাশাসক

বৈধ খাদান। কিন্তু, সেখানেই নদী থেকে দ্রুত বালি তুলতে সার সার যন্ত্রপাতি বসানো হয়েছিল। যা একেবারেই বেআইনি। আবার ইজারা দেওয়া নেই, এমন নদী ঘাট থেকেও বালি তোলা হচ্ছিল যন্ত্রপাতি দিয়ে। দিনের পর দিন পাত্রসায়রের বিভিন্ন এলাকা থেকে অভিযোগ আসছিল।

পাত্রসায়রের মামুদপুর গ্রামে দামোদরে। নিজস্ব চিত্র

পাত্রসায়রের মামুদপুর গ্রামে দামোদরে। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা 
পাত্রসায়র শেষ আপডেট: ২৪ ডিসেম্বর ২০১৮ ০১:০৬
Share: Save:

বৈধ খাদান। কিন্তু, সেখানেই নদী থেকে দ্রুত বালি তুলতে সার সার যন্ত্রপাতি বসানো হয়েছিল। যা একেবারেই বেআইনি। আবার ইজারা দেওয়া নেই, এমন নদী ঘাট থেকেও বালি তোলা হচ্ছিল যন্ত্রপাতি দিয়ে। দিনের পর দিন পাত্রসায়রের বিভিন্ন এলাকা থেকে অভিযোগ আসছিল। রবিবার ভোরে অভিযান চালিয়ে কাণ্ডকারখানা দেখে তাজ্জব হয়ে গেলেন আধিকারিকেরা। আটক করা হল বালি তোলার অবৈধ যন্ত্রপাতি, গাড়ি। তবে, তাঁদের দেখে কর্মীরা পালিয়ে যাওয়ায় কাউকেই গ্রেফতার করা যায়নি।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জেলা সফরে এসে অবৈধ বালি খাদান বন্ধ করতে কড় পদক্ষেপ করতে প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়ে যান। কিন্তু, তার পর প্রায় এক মাস হতে চলল, এত দিনেও পাত্রসায়রের ওই এলাকায় কী ভাবে অবৈধ কারবার চলছিল, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বিভিন্ন মহলে।

এ দিন ভোরে এসডিও (বিষ্ণুপুর) মানস মণ্ডল, এসডিপিও (বিষ্ণুপুর) সুকোমলকান্তি দাস বাহিনী নিয়ে রওনা দেন পাত্রসায়রে। পাত্রসায়রে তাঁদের সঙ্গে যোগ দেন বিডিও অজয় ঘোষ ও থানার ওসি অতনু কাঞ্জিলাল।

পাত্রসায়র ব্লকের বেলুট-রসুলপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের মামুদপুর মৌজায় ইজারাপাওয়া এক বালি খাদানে গিয়ে তাজ্জব হয়ে যান তাঁরা। এসডিও-র কথায়, ‘‘ওটি বৈধ খাদান হলেও বালি যে কত রকম যন্ত্র দিয়ে নদী থেকে তোলা যায়, সেখানে না গেলে বুঝতে পারতাম না। বালি তুলতে তুলতে ওরা উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন বিদ্যুৎবাহী তারের খুঁটির কাছে পর্যন্ত চলে গিয়েছে। যা খুবই বিপজ্জনক।’’

ঘটনা হল, শিবরাত্রির আগের ভোরে সোনামুখীর রাঙামাটিতে দামোদরে স্নান করতে গিয়ে ডুবে দু’জনের মৃত্যু হয়েছিল। বাসিন্দাদের অভিযোগ ছিল, যন্ত্র দিয়ে বালি তোলায় যত্রতত্র গভীর গর্ত হয়ে যাচ্ছে। জলের নীচে গর্ত ঠাহর করতে না পারায় অনেকেই সেখানে পড়ে গিয়ে আর উঠতে পারছেন না। তখনই এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি করেছিলেন তাঁরা।

এসডিপিও বলেন, ‘‘নিয়ম ভেঙে বালি তোলার অভিযোগে ঝাড়খণ্ডের বাসিন্দা ইজারাদার সন্তোষ যাদবের বিরুদ্ধে ফৌজদারী মামলা রুজু করা হয়েছে। একটি পে লোডার, একটি ট্রাক্টর, ছ’টি বালি তোলার যন্ত্র লাগানো নৌকা বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।’’ পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে বেশ কয়েকটি অতিরিক্ত বালি বোঝাই ট্রাকও আটক করে।

এসডিও বলেন, ‘‘বিশেষ সুত্রে খবর পেয়ে মামুদপুর ঘাটে অভিযান চালাই। সেখানে খবর পাই, পাত্রসায়র ব্লকের বেলুট-রসুলপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের সাতখোলা এলাকায় বৈধ বালি খাদান না থাকলেও সেখানে দামোদর থেকে বালি তোলা হচ্ছে।’’ সঙ্গে সঙ্গে তাঁরা সাতখোলা ঘাটে হানা দেন। সেখান থেকেও তাঁরা তিনটি পে লোডার, সাতটি ট্রাক, সাতটি যন্ত্র লাগানো নৌকা বাজেয়াপ্ত করেন।

স্থানীয় শালখাড়া, বৈকুণ্ঠপুর, ভগবতীপুর, গোস্বামী গ্রামের বাসিন্দাদের অভিযোগ, যন্ত্রে বালি তোলায় নদীর বুকে মরণ ফাঁদ তৈরি হয়েছে। সে জন্য নদীতে অনেকে স্নান, মাছধরা বন্ধ করে দিয়েছেন। অনেকের আক্ষেপ, যন্ত্রেই বেশির ভাগ কাজ হয়ে যাচ্ছে বলে স্থানীয় লোকেরাও খাদানে কাজ পাচ্ছেন না। অপরিকল্পিত ভাবে বালি তোলায় বন্যায় নদী গতিপথ পাল্টে পাড় ভাঙতে শুরু করেছে। চাষজমি তো বটেই, ভিটেও চলে যাচ্ছে।’’ দামোদারের তীরে সোনামুখী ব্লকের রাঙামাটি গ্রামের এক কৃষক বলেন, ‘‘বন্যায় নদী উপচে জল গ্রামে ঢুকে পড়ায় বিঘার পর বিঘা জমি বালির নীচে চাপা পড়েছিল। তখন প্রশাসন বালি কারবারিদের বিরুদ্ধে একটা কড়া হয়নি। এ বার প্রশাসনকে সক্রিয় হতে দেখে আশা জাগছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Sand Mining Illegal Sand Mining Patrasayer
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE