Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

এক থাকতে হবে, ভিড়ে ঠাসা সভায় বার্তা দিলেন শুভেন্দু

দুপুর ৩টেয় যতটা ভিড় ছিল, বিকেল ৫টায় সভা শেষের পরেও তা টাল খায়নি। অনেক দিন পরে বলরামপুরের মানুষ এমন ভিড় দেখলেন। বারবার হাততালি দিলেন। যা দেখতে-দেখতে মঞ্চে দাঁড়িয়ে তৃণমূল সাংসদ শুভেন্দু অধিকারী বলেই ফেললেন, ‘‘এত গরমের মধ্যেও এত মানুষ এসেছেন, এত মহিলা এসেছেন, আমি খুশি।’’ কিছু দিন আগেও অযোধ্যা পাহাড়ে মাওবাদী ডেরার দৌলতে ভয়ের রাজ্য ছিল পুরুলিয়ার বলরামপুর।

কড়া নিরাপত্তায় মোড়া জনসভা। সভায় বক্তব্য রাখছেন তৃণমূল সাংসদ শুভেন্দু অধিকারী। শনিবার বলরামপুরে সুজিত মাহাতোর তোলা ছবি।

কড়া নিরাপত্তায় মোড়া জনসভা। সভায় বক্তব্য রাখছেন তৃণমূল সাংসদ শুভেন্দু অধিকারী। শনিবার বলরামপুরে সুজিত মাহাতোর তোলা ছবি।

প্রশান্ত পাল
বলরামপুর শেষ আপডেট: ০৫ এপ্রিল ২০১৫ ০২:৫৯
Share: Save:

দুপুর ৩টেয় যতটা ভিড় ছিল, বিকেল ৫টায় সভা শেষের পরেও তা টাল খায়নি।

অনেক দিন পরে বলরামপুরের মানুষ এমন ভিড় দেখলেন। বারবার হাততালি দিলেন। যা দেখতে-দেখতে মঞ্চে দাঁড়িয়ে তৃণমূল সাংসদ শুভেন্দু অধিকারী বলেই ফেললেন, ‘‘এত গরমের মধ্যেও এত মানুষ এসেছেন, এত মহিলা এসেছেন, আমি খুশি।’’

কিছু দিন আগেও অযোধ্যা পাহাড়ে মাওবাদী ডেরার দৌলতে ভয়ের রাজ্য ছিল পুরুলিয়ার বলরামপুর। শনিবার সেই বলরামপুর বাসস্ট্যান্ডেই থিকথিকে মাথার ভিড়ের দিকে চেয়ে শুভেন্দু বললেন, ‘‘জঙ্গলমহলে অস্ত্র শেষ কথা বলে না। উন্নয়নই শেষ কথা। এই শান্তিকে চিরশান্তিকে পরিণত করতে হবে আপনাদেরই।’’

কেন্দ্রের বিরুদ্ধে নানা প্রকল্পে বঞ্চনার অভিযোগে এ দিন তৃণমূল এই সমাবেশের আয়োজন করেছিল। এর আগে দীর্ঘদিন এই এলাকায় শাসকদল বড় কোনও সভা করেনি। বস্তুত, সে কারণেই আদিবাসী সমর্থন ধরে রাখতে শুভেন্দুকে আনা হয়েছিল বলে তৃণমূল সূত্রের খবর। দলের তরফে এলাকার একশো আদিবাসী দলকে ধামসা-মাদল ও নাচের পোশাক দেওয়া হয়। রথতলা থেকে সভাস্থল পর্যন্ত প্রায় দু’কিলোমিটার রাস্তায় শুভেন্দুর পথে ফুল ছড়ান আদিবাসীরা।

আদিবাসীদের বড় অংশই যে এখনও তৃণমূলের সঙ্গে আছেন, শুভেন্দুর সভায় উপচে পড়া ভিড়েই তার প্রমাণ রয়েছে। পুলিশের হিসেবে, প্রায় ১০ হাজার মানুষ এ দিন সমাবেশে এসেছিলেন। সভা শুরুর কথা ছিল দুপুর ৩টেয়। তার ঢের আগে থেকেই গেঁড়ুয়া, বেলা, ঘাটবেড়া-কেড়োয়া, উরমা, অযোধ্যা পাহাড় সংলগ্ন বিভিন্ন গ্রাম থেকেও লোকজন সভায় আসতে শুরু করেন। একদা মাওবাদীদের মুক্তাঞ্চল ঘাটবেড়া-কেড়োয়ার যশুডি থেকে এসেছিলেন বিপদতারণ মাঝি, চিত্ত মুর্মুরা। মহিলারাও এসেছিলেন দল বেঁধে।

কিছু বছর আগে এ সব এলাকার মানুষই দুপুর না গড়াতেই ঘরে ঢুকে যেতেন। ২০০৯-এ মাওবাদীদের অযোধ্যা স্কোয়াড গড়ে ওঠার দু’বছরের মধ্যে এলাকায় ২৩ জন সিপিএম নেতা-কর্মী খুন হন। পালাবদলের পরে খুন হন তিন তৃণমূল কর্মীও। বিপদতারণ-চিত্তরা বলেন, ‘‘দিনকাল অনেক পাল্টেছে। শুভেন্দুবাবু বারবার এসে সাহস দিচ্ছেন। তাই রোদ মাথায় নিয়ে এতটা পথ হেঁটে তাঁর কথা শুনতে এসেছি।’’ ফেরার পথে নীলমণি টুডু, সুখি মাঝিরা বলেন, ‘‘এখন বাড়ির ছেলেরা সন্ধ্যার পরেও না ফিরলে ভয় করে না। নিশ্চিন্তে জঙ্গলে পাতা কুড়োতে যাই।’’

শুভেন্দুর বক্তব্যেও এসেছে সেই বদলের কথা। তাঁর দাবি, ‘‘এখানে এক দিকে মাও সন্ত্রাস, অন্য দিকে পুলিশের সন্ত্রাস ছিল। চার বছরেরও কম সময়ে মুখ্যমন্ত্রী চল্লিশ বার জঙ্গলমহলে এসেছেন। দু’টাকা কিলো চাল দেওয়া হচ্ছে। এই শান্তিকে চোখের মণির মতো রক্ষা করতে হবে।’’ দলের তরফে জঙ্গলমহলের দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে বলরামপুরে এই নিয়ে পাঁচ বার এলেন শুভেন্দু। প্রথম বার এসেছিলেন মাওবাদীদের গুলিতে নিহত দলীয় কর্মী অজিত সিংহ সর্দার ও তাঁর ছেলের বাকুর দেহ নিয়ে। শুভেন্দু বলেন, ‘‘আর যেন অজিত-বাকুর মতো কারও প্রাণ না যায়। গ্রামে গ্রামে মানুষকে এক থাকতে হবে।’’

তবে কি ফের মাওবাদী আতঙ্ক ফিরে আসতে পারে বলরামপুরে? শুভেন্দু তেমন কোনও ইঙ্গিত দেননি। তবে তাঁর আশ্বাস, ‘‘অযোধ্যায় যদি আবার গুলি চলে, খুন হয়, আমি আবার বলরামপুরে ফিরে আসব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE