Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

বাড়ির কাছে গুলিতে খুন শিক্ষক, ধন্দ

শহরের ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের বারিকবাঁধ পাড়ার চিন্ময় মণ্ডল (২৮) শিক্ষকতা করতেন শহরেরই ঝান্ডাপাড়ার শুড়িকুলি প্রাথমিক স্কুলে। বছর চারেক আগে চাকরি পেয়েছিলেন। মাস সাতেক আগে সম্বন্ধ করে বিয়ে হয়। স্ত্রী পাপিয়া মণ্ডল রঘুনাথপুর শহরেরই ১ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা। রঘুনাথপুর সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে নার্সের চাকরি করেন।

ঘটনাস্থল: রঘুনাথপুর-চেলিয়ামা সড়কে। (ইনসেটে) চিন্ময়। নিজস্ব চিত্র

ঘটনাস্থল: রঘুনাথপুর-চেলিয়ামা সড়কে। (ইনসেটে) চিন্ময়। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
রঘুনাথপুর শেষ আপডেট: ২৫ নভেম্বর ২০১৮ ০১:৫৯
Share: Save:

রাত পৌনে ১০টা নাগাদ স্ত্রী যখন ফোন করেছিলেন, চিন্ময় মণ্ডল বলেছিলেন ‘‘খুব তাড়াতাড়ি ফিরছি।’’ কিন্তু বাড়ির কাছেই আততায়ীর গুলিতে খুন হলেন তিনি। রাত ১১টা নাগাদ পুলিশের ফোনে সেই কথা জানতে পারলেন পরিজনেরা। শুক্রবার রাতে খাস রঘুনাথপুর শহরের ঘটনা। খুনের কারণ নিয়ে ধোঁয়াশা কাটছে না। পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার আকাশ মাঘারিয়া বলেন, ‘‘প্রাথমিক তদন্তে মনে করা হচ্ছে, খুনের পিছনে ব্যক্তিগত আক্রোশ থাকতে পারে।’’

শহরের ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের বারিকবাঁধ পাড়ার চিন্ময় মণ্ডল (২৮) শিক্ষকতা করতেন শহরেরই ঝান্ডাপাড়ার শুড়িকুলি প্রাথমিক স্কুলে। বছর চারেক আগে চাকরি পেয়েছিলেন। মাস সাতেক আগে সম্বন্ধ করে বিয়ে হয়। স্ত্রী পাপিয়া মণ্ডল রঘুনাথপুর শহরেরই ১ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা। রঘুনাথপুর সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে নার্সের চাকরি করেন।

পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, শুক্রবার রাত ৮টা নাগাদ স্ত্রীকে হাসপাতাল থেকে বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে সাড়ে ৮টা নাগাদ আবার বেরিয়েছিলেন চিন্ময়। বাড়িতে জানিয়েছিলেন, শনিবার রঘুনাথপুর চক্রের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা রয়েছে। তার প্রস্তুতির জন্য সহকর্মীদের সঙ্গে কিছু কাজ সারতে হবে। বলেছিলেন, দ্রুত ফিরে আসবেন।

চিন্ময়ের কয়েক জন সহকর্মী জানান, রাত পৌনে ৯টা নাগাদ রঘুনাথপুর মহকুমা স্টেডিয়ামে এসেছিলেন তিনি। কাজকর্ম সেরে সেখানে খিচুড়িও খেয়েছিলেন। তার পরে স্কুটার নিয়ে বাড়ির দিকে রওনা দেন। বাড়ি থেকে পাঁচ-ছ’শো মিটার দূরে রঘুনাথপুর-চেলিয়ামা রাস্তার পাশে বারিকবাঁধের অদূরে একটি ফাঁকা জায়গায় তাঁকে গুলি করে খুন করে দুষ্কৃতীরা। পুলিশ জানিয়েছে, খুব কাছ থেকে পর পর মুখোমুখি গুলি করা হয়েছিল তাঁকে।

রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ পুলিশের টহলদারি গাড়ি রাস্তার পাশে রক্তাক্ত অবস্থায় তাঁকে পড়ে থাকতে দেখে। উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়া হয় সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে। চিকিৎসকেরা জানান, আগেই মৃত্যু হয়েছে যুবকের। প্রথমে পুলিশ ভেবেছিল, পথ দুর্ঘটনা। কিন্তু হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরেই দেখা যায়, বাঁ দিকের চোখের নিচে একটি আর দেহের উপরের দিকে আরও একটি গুলির ক্ষত।

এলাকায় জনপ্রিয় ছিলেন চিন্ময়। সামাজিক কাজকর্মের সঙ্গেও জড়িত থাকতেন। কে বা কারা তাঁকে খুন করতে পারে, সেটাই ভেবে পারছেন না পরিজনেরা। প্রায় আকাশ থেকে পড়েছেন পড়শিরাও। শনিবার বারিকবাঁধ পাড়ায় চিন্ময়ের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, বড় ছেলের মৃত্যুতে শোকে স্তব্ধ হয়ে গিয়েছেন দীপককুমার মণ্ডল ও মমতাদেবী। দীপকবাবু রঘুনাথপুর থানার মৌতোড় গ্রামের মানদাসুন্দরী হাইস্কুলে শিক্ষকতা করেন। দুই ছেলে, চিন্ময় ও তন্ময়। তন্ময় ভিনরাজ্যে থেকে পড়াশোনা করেন।

দীপকবাবু জানান, রাত সাড়ে ১০টা বেজে গেলেও ছেলে ফিরছে না দেখে বার বার ফোন করেছিলেন তাঁরা। কেউ ফোন ধরেনি। রাত ১১টার পরে পুলিশের থেকে খবরটা আসে। মমতাদেবী বলেন, ‘‘কোন ঝুটঝামেলায় জড়াত না। কারও সঙ্গে শত্রুতাও ছিল না। কী করে এমনটা হতে পারে, সেটাই বুঝে উঠতে পারছি না।’’ একই কথা বলছেন চিন্ময়ের স্ত্রী পাপিয়াও।

শনিবার সকালে দীপকবাবু রঘুনাথপুর থানায় অজ্ঞাতপরিচয় দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে ছেলেকে খুনের অভিযোগ দায়ের করেছেন। এ দিন তদন্ত করতে রঘুনাথপুরে যান পুরুলিয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার চন্দ্রশেখর বর্ধন ও এসডিপিও (রঘুনাথপুর) সত্যব্রত চক্রবর্তী। চিন্ময়ের পরিবারের সমস্ত সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন তাঁরা।

পুলিশের অনুমান, ব্যক্তিগত আক্রোশ বা বিবাদের জেরেই খুন হতে পারে। এই ব্যাপারে প্রাথমিক কিছু তথ্যও মিলেছে বলে দাবি করা হচ্ছে। তবে আর বেশি কিছু ভেঙে বলতে চাইছেন না তদন্তকারীরা। ঘটনাস্থল থেকেই চিন্ময়ের স্কুটার, মোবাইল, মানিব্যাগ পাওয়া গিয়েছিল। কয়েক হাজার টাকা ছিল মানিব্যাগে। যেটা দেখে পুলিশ মনে করছে, ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্য নিয়ে খুনটা করা হয়নি। প্রাথমিক তদন্তে জানা যাচ্ছে, খুনে ব্যবহার করা হয়েছে দেশি পিস্তল।

শিক্ষকের মৃত্যুতে শনিবার রঘুনাথপুর চক্রের বার্ষিক ক্রীড়া স্থগিত করে দেওয়া হয়। দুপুরের চক্রের শিক্ষকেরা মৌনী মিছিল করে রঘুনাথপুর থানায় যান। ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্তের দাবিতে স্মারকলিপিও দেওয়া হয়। চিন্ময় তৃণমূলের প্রাথমিক শিক্ষা সেলের সদস্য ছিলেন। দলের জেলা সাধারণ সম্পাদক নবেন্দু মাহালি জানান, ঘটনার তদন্ত দ্রুত মেটানোর জন্য তাঁরা দলগত ভাবে পুলিশকে অনুরোধ করেছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Death Firing Teacher
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE