Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
Belsulia Gram Panchayat

তৃণমূল দোষ পেল না বেলশুলিয়ায়

তবে শনিবার ওই এলাকায় গিয়ে পঞ্চায়েতের কিছু কাজে ‘বেনিয়ম’ নজরে এসেছে তাদের। তদন্তকারী দলের প্রতিনিধিদের দাবি, সে জন্য ‘দায়ী’ পঞ্চায়েতের কর্মীরা।

সরেজমিন: জবকার্ড খতিয়ে দেখছেন ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট। নিজস্ব চিত্র

সরেজমিন: জবকার্ড খতিয়ে দেখছেন ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
বাঁকুড়া ও বিষ্ণুপুর শেষ আপডেট: ১২ জুলাই ২০২০ ০১:৫৪
Share: Save:

এক বেলায় তদন্ত সেরে বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুরের বেলশুলিয়া পঞ্চায়েতের জনপ্রতিনিধিদের ‘ক্লিনচিট’ দিল বাঁকুড়া জেলা তৃণমূলের তদন্তকারী দল। তবে শনিবার ওই এলাকায় গিয়ে পঞ্চায়েতের কিছু কাজে ‘বেনিয়ম’ নজরে এসেছে তাদের। তদন্তকারী দলের প্রতিনিধিদের দাবি, সে জন্য ‘দায়ী’ পঞ্চায়েতের কর্মীরা। তবে প্রশাসনের তদন্ত এখনও শেষ হয়নি। এ দিনও দুই সদস্যের তদন্তকারী দল কিছু গ্রামবাসীর কাছে পঞ্চায়েতের কাজ সম্পর্কে খোঁজখবর করে।

তৃণমূলের অন্দরের খবর, দলের রাজ্য নেতৃত্ব বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখতে বলেছেন। এ দিন বেলশুলিয়ায় যান জেলা তৃণমূল সভাপতি শুভাশিস বটব্যাল। তাঁর সঙ্গে ছিলেন তৃণমূলের সংখ্যালঘু সেলের জেলা সভাপতি হবিবুর রহমান ও জেলা তৃণমূল নেতা জয়দীপ চট্টোপাধ্যায়। শুভাশিসবাবু বলেন, ‘‘বেশ কয়েকটি গ্রামের মানুষের সঙ্গে কথা বলেছি। কেউই আমাদের কাছে পঞ্চায়েতের জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে সরকারি প্রকল্পের বিনিময়ে টাকা নেওয়ার অভিযোগ তোলেননি। পঞ্চায়েত অফিসে প্রধান-সহ সমস্ত সদস্যদের নিয়ে বৈঠক করেছি। সেখানেও কেউ ‘কাটমানি’ নেওয়ার অভিযোগ তোলেননি।”

তা হলে বিতর্ক কেন?

শুভাশিসবাবু বলেন, “বেলশুলিয়া অঞ্চল তৃণমূল সভাপতির সঙ্গে প্রধানের ভুল বোঝাবুঝিতেই সমস্যা হয়েছিল। তবে পঞ্চায়েতের একশো দিনের কাজের প্রকল্পে কিছু অনিয়ম আমার নজরে এসেছে। সে জন্য দায়ী পঞ্চায়েতের সরকারি কর্মীরা। বিষয়টি আমি জেলা প্রশাসনকে জানাব।”

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পঞ্চায়েতের কর্মীদের একাংশের বক্তব্য, তাঁদের সঙ্গে তৃণমূল নেতৃত্ব কথা বলেননি। তাঁরা পঞ্চায়েতে যা যা সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, সেই অনুযায়ীই কাজ করেন। শুভাশিসবাবুর সংযোজন: ‘‘দলীয় তদন্ত শেষ। এই রিপোর্ট জেলার পর্যবেক্ষক তথা মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীর মাধ্যমে দলের রাজ্য নেতৃত্বের কাছে পাঠিয়ে দেব।’’

যদিও গত মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে তৃণমূল পরিচালিত বেলশুলিয়া পঞ্চায়েতের প্রধান-সহ কয়েকজন সদস্যের বিরুদ্ধে নিখরচার সরকারি প্রকল্পের সুবিধা দেওয়ার বিনিময়ে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে ‘কাটমানি’ নেওয়ার কয়েকটি অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে পর-পর চারটি অভিযোগ জমা পড়েছে বিডিও (বিষ্ণুপুর)-এর কাছে। স্থানীয় বাসিন্দা থেকে তৃণমূলের স্থানীয় বুথ কমিটি এবং কয়েকজন পঞ্চায়েত সদস্যও অভিযোগপত্র জমা দেন। তারই মধ্যে ‘মর্জিমাফিক’ কাজ না করায় এক পঞ্চায়েত কর্মীর হাত-পা ভেঙে দেওয়ার হুমকির অভিযোগও উঠেছে এক পঞ্চায়েত সদস্যের বিরুদ্ধে।

বেলশুলিয়া পঞ্চায়েত এলাকায় এ হেন ‘দুর্নীতি’ ও ‘দাদাগিরি’-র অভিযোগের ঘটনা সামনে আসতেই শুক্রবার থেকে তদন্তে নেমেছে বাঁকুড়া জেলা প্রশাসনও।

শুক্রবারের পরে শনিবারও বেলশুলিয়ায় যান বিষ্ণুপুরের ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট দেবর্ষি মুখোপাধ্যায় ও বিডিও (বিষ্ণুপুর) স্নেহাশিস দত্ত। তাঁরা বেলশুলিয়া পঞ্চায়েতের বাড়িশোল, আধকাটা-সহ কয়েকটি গ্রামে ঘোরেন। স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে তাঁরা জানতে চান— একশো দিনের কাজ পাচ্ছেন কি না, আবাস যোজনায় বাড়ি পেয়েছেন কি না, কেউ কোনও পরিষেবার বিনিময়ে টাকা চেয়েছেন কি না। তবে গ্রামবাসীরা কেউ কোনও রকম সমস্যার কথা তদন্তকারীদের জানাননি।

অথচ, সেখান থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে গুজিশোল গ্রামের বাসিন্দাদের আক্ষেপ, তাঁরা প্রশাসনের তদন্ত-দলের অপেক্ষায় রয়েছেন। তাঁদের তাঁরা অনেক কথা জানাতে চান। গুজিশোলের বাসিন্দা বদ্যিনাথ মুর্মু, সোমনাথ সরেন, মঙ্গল মান্ডিরা বলেন, “ঝড়ে বাড়ির চালা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পরে একটাও ত্রিপল দেয়নি পঞ্চায়েত। গ্রামের সবার কাঁচা বাড়ি। সরকারি প্রকল্পে কেউ বাড়ি পায়নি। দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকা এই সব সমস্যা প্রশাসনের আধিকারিকদের জানাব বলে ভেবেছিলাম। কিন্তু তাঁরা আমাদের গ্রামে এলেন না।”

বিষ্ণুপুরের বিজেপি সাংসদ সৌমিত্র খাঁয়ের কটাক্ষ, ‘‘আগেই বুঝেছিলাম, তদন্তের নামে মানুষকে মিথ্যা আশ্বাস দেওয়া হচ্ছে। তৃণমূল আমলে এর থেকে বেশি বিচার মানুষ পাবেন না।”

বিষ্ণুপুরের মহকুমাশাসক অনুপকুমার দত্ত বলেন, “তদন্ত প্রক্রিয়া সবে শুরু হয়েছে। বেলশুলিয়া পঞ্চায়েতে ফের প্রশাসনিক আধিকারিকেরা মানুষের সমস্যা শুনতে যাবেন।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Belsulia Gram Panchayat TMC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE