Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

বলরামপুরে দলবদল করে কুর্সিতে

ভোটে বলরামপুর সমিতিতে ১৭টি আসন পেয়েছিল বিজেপি। ৩টি তৃণমূল। পরে অভিষেকের দু’টি সভায় দু’দফায় দলবদলের পরে হিসেবটা হয়— বিজেপি: ৮, তৃণমূল: ১২।

বলরামপুরের রাস্তায় তরোয়াল এবং লাঠি হাতে জমায়েত।

বলরামপুরের রাস্তায় তরোয়াল এবং লাঠি হাতে জমায়েত।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বলরামপুর শেষ আপডেট: ০৪ জানুয়ারি ২০১৯ ০২:০৯
Share: Save:

বোর্ড হল বলরামপুর পঞ্চায়েত সমিতিতে। বৃহস্পতিবার সেখানে সভাপতির পদে নির্বাচিত হয়েছেন নিতাই মণ্ডল। সহ-সভাপতি প্রতিমা কিস্কু। দু’জনেই ভোটে বিজেপির টিকিটে জিতেছিলেন। গত ২০ ডিসেম্বর মৌতোড়ে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভায় তৃণমূলে যোগ দেন। দিনের শেষে পুলিশকে আক্রমণের অভিযোগ গ্রেফতার হয়েছেন ৯ জন। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন ওই সমিতিতে বিজেপির এক সদস্যও।

ভোটে বলরামপুর সমিতিতে ১৭টি আসন পেয়েছিল বিজেপি। ৩টি তৃণমূল। পরে অভিষেকের দু’টি সভায় দু’দফায় দলবদলের পরে হিসেবটা হয়— বিজেপি: ৮, তৃণমূল: ১২। বোর্ড গঠনের সভায় সেই হিসেবের আর কোনও নড়চড় হয়নি। কিন্তু কড়া পাহারার পরেও এড়ানো যায়নি গোলমাল।

পঞ্চায়েত সমিতির বোর্ড গঠন নিয়ে দিন কয়েক ধরেই টানটান ছিল বলরামপুরের পরিস্থিতি। রবিবার সেখানে ‘গণতন্ত্র রক্ষার’ দাবিতে বিজেপির মিছিল বেরোয়। সমিতির দলবদল করা লোকজনের বিরুদ্ধে স্লোগান ওঠে। উত্তেজনার পারদ চড়ছিল। সমিতি চত্বরে ১৪৪ ধারা জারি হচ্ছে বলে মাইক নিয়ে এলাকায় গত দু’দিন ঘোষণা করে বেড়িয়েছে প্রশাসন।

এ দিন সকাল থেকে ব্লক অফিসের সামনে থিকথিক করছিল পুলিশ। ওই এলাকা ঘেঁষে চলে গিয়েছে বলরামপুর-বরাবাজার রাস্তা। সেখানে জরুরি পরিষেবা ছাড়া অন্য অধিকাংশ গাড়ির চলাচলে রাশ টেনে দেওয়া হয়েছিল। এসেছিল ড্রোন-ক্যামেরা। মজুত ছিল জলকামান।

দু’দিকে যেখানে শেষ হয়েছে ১৪৪ ধারার লক্ষ্ণণরেখা— জমায়েত করেছিলেন দুই দলের কর্মীসমর্থকেরা। তৃণমূলের লোকজন ছিলেন কারবালার মাঠের কাছে বটতলায়। বিজেপির জমায়েত ছিল উল্টো দিকে, হাটের কাছে। ভিতরে বোর্ড গঠনের সভা শুরু হয়। বিজেপির জমায়েত সরিয়ে বাসস্ট্যান্ডের দিকে নিয়ে যায় পুলিশ। সেখানে তৃণমূলের একটি পার্টি অফিস রয়েছে। দুই দলের কর্মীসমর্থকদের মধ্যে কিছু কথা কাটাকাটি হয়। তবে জল বেশি দূর গড়ায়নি।

গোলমাল পেকে ওঠে তার পরে। তৃণমূলের বলরামপুর ব্লক সভাপতি অঘোর হেমব্রমের অভিযোগ, মোটরবাইকে দলের পতাকা বেঁধে আসছিলেন তাঁদের এক কর্মী। পোস্ট অফিসের কাছে ‘বিজেপির লোকজন’ তাঁর পথ আটকায়। ওই কর্মী পালিয়ে রক্ষা পান। তবে তাঁর মোটরবাইক ভাঙচুর করে ফেলে দেওয়া হয় নালায়। তৃণমূল কর্মীদের নিয়ে আসা একটি গাড়ির কাচও ভাঙচুর করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন তিনি। তবে, বিজেপি দাবি করেছে ওই সমস্ত ঘটনায় তাদের কেউ জড়িত নয়।

বোর্ড গঠনের প্রক্রিয়া মেটে। বিডিও (বলরামপুর) ধ্রুবপদ শাণ্ডিল্য বলেন, ‘‘শান্তিপূর্ণ ভাবেই সবকিছু হয়েছে।’’ সমিতির অফিস থেকে বিজেপির ৮ জন বেরিয়ে আসেন। জমায়েতের সঙ্গে তাঁরা যান সরাই ময়দানের কাছে পার্টি অফিসে। পুরুলিয়া-জামশেদপুর জাতীয় সড়কের ধারে সেই অফিস। কাছেই থানা। বিজেপির জেলা সভাপতি বিদ্যাসাগর চক্রবর্তীর অভিযোগ, ‘‘পার্টি অফিসের ভিতরে পুলিশ হঠাৎ ঢুকে পড়ে বিনা প্ররোচনায় আমাদের কর্মীদের মারধর করে। কয়েক জন জখম হন। ভাঙচুর করা হয় আসবাবপত্র।’’

যদিও পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার আকাশ মাঘারিয়া বলছেন, ‘‘পার্টি অফিস সামনে বিনা প্ররোচনায় পুলিশের উপরে আক্রমণ হয়েছিল। চার জন পুলিশ কর্মী জখম হন। তার পরেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ভিতরে ঢুকে কয়েক জনকে আটক করা হয়।’’ তিনি জানান, এই ঘটনায় ৯ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ধৃতদের মধ্যে রয়েছেন ওই সমিতির বিজেপি সদস্য বিরিঞ্চি কুমার।

এই সমস্ত গোলমালে এ দিন পুরুলিয়া-জামশেদপুর জাতীয় সড়কে বেশ কিছুক্ষণের জন্য যান চলাচল ব্যাহত হয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

violence Panchayat Board TMC BJP
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE