Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

শিশুর ডেথ সার্টিফিকেট নিয়ে ধন্দ

সদ্যোজাত কন্যা শিশুর মৃত্যু হয়েছে বলে ‘ডেথ সার্টিফিকেট’ দিয়েছিল হাসপাতাল। পরের দিনে সেই শিশুকেই দুধ খাওয়ালেন মা! তখনই জানতে পারেন, মেয়ে নয়। মারা গিয়েছে তাঁর যমজ সন্তানের অন্য পুত্র সন্তানটি। পুরুলিয়া সদর হাসপাতাল থেকে এই ভুল ‘ডেথ সার্টিফিকেট’ দেওয়া নিয়ে হইচই বাধল বৃহস্পতিবার।

ডেথ সার্টিফিকেট হাতে শিশুর বাবা ফুলচাঁদ মাহাতো। নিজস্ব চিত্র

ডেথ সার্টিফিকেট হাতে শিশুর বাবা ফুলচাঁদ মাহাতো। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ০৩ মার্চ ২০১৮ ০১:৪৬
Share: Save:

সদ্যোজাত কন্যা শিশুর মৃত্যু হয়েছে বলে ‘ডেথ সার্টিফিকেট’ দিয়েছিল হাসপাতাল। পরের দিনে সেই শিশুকেই দুধ খাওয়ালেন মা! তখনই জানতে পারেন, মেয়ে নয়। মারা গিয়েছে তাঁর যমজ সন্তানের অন্য পুত্র সন্তানটি। পুরুলিয়া সদর হাসপাতাল থেকে এই ভুল ‘ডেথ সার্টিফিকেট’ দেওয়া নিয়ে হইচই বাধল বৃহস্পতিবার। মৃত শিশুর পরিবার অভিযোগ তুললেন, তাঁদের পুত্রসন্তানটি মারা যায়নি, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের গাফিলতিতে উধাও হয়ে গিয়েছে। অভিযোগের তদন্তের আশ্বাস দিয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, আড়শা থানার সোদপুয়াড়া গ্রামের বাসিন্দা ফুলচাঁদ মাহাতো তাঁর সন্তানসম্ভবা স্ত্রী সুলেখা মাহাতোকে ২৫ ফেব্রুয়ারি পুরুলিয়া দেবেন মাহাতো হাসপাতালে ভর্তি করেন। ফুলচাঁদ জানান, সে দিন রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ তাঁর স্ত্রী প্রথমে একটি কন্যা সন্তানের জন্ম দেন। আধ ঘণ্টা পরে তিনি একটি পুত্র সন্তানের জন্ম দেন। সদ্যোজাত শিশু দু’টির ওজন কম থাকায়, তাদের নবজাত শিশু পরিচর্যা কেন্দ্রে (এসএনসিইউ) রাখা হয়।

তাঁর কথায়, ‘‘বুধবার দুপুরের দিকে হাসপাতাল থেকে প্রথমে জানানো হয়, শিশুকন্যাটির শারীরিক অবস্থা খারাপ। সে দিনই বিকেল পৌনে ৪টে নাগাদ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আমাদের জানান, কন্যা শিশুটি মারা গিয়েছে। কাপড়ে মোড়া একটি দেহও দেখানো হয়। কিন্তু, বৃহস্পতিবার এসএনসিইউ ওয়ার্ড থেকে স্ত্রীকে ডেকে পাঠানো হয়, শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানোর জন্য। স্ত্রী গিয়ে দেখেন, পুত্র সন্তানের বদলে একটি কন্যা সন্তান বেডে রয়েছে। পুত্র সন্তানটির কোনও খোঁজ নেই।’’ তাঁর দাবি, খোঁজ করতে তখন জানানো হয়, যে তাঁদের কন্যা শিশুটি জীবিত রয়েছে। পুত্র সন্তানটিরই মৃত্যু হয়েছে।

সুলেখার কাকা চন্দ্রমোহন মাহাতো বলেন, ‘‘ডেথ সার্টিফিকেটের ভুল নাকি শিশু পুত্রকে বদলে দেওয়া হয়েছে, তা স্পষ্ট নয়। তদন্ত চাই।’’ ফুলচাঁদ বলেন, ‘‘হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, তাঁরা ভুল ডেথ সার্টিফিকেট দিয়েছিলেন। সে কারণেই এই গণ্ডগোল। কিন্তু একটা শিশু বেঁচে থাকা সত্ত্বেও তাকে মৃত বলে কী ভাবে লিখে দিতে পারে? আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস, পুত্র সন্তানটি ওয়ার্ড থেকে রহস্যজনক ভাবে নিখোঁজ হয়ে গিয়েছে। সেই বিষয়টি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আমাদের কাছে চেপে যাচ্ছেন।’’

বৃহস্পতিবার ঘটনা জানাজানি হওয়ার পরে হাসপাতালে উত্তেজনা ছড়ায়। শহরের তৃণমূল কাউন্সিলর বিভাস দাস প্রসূতির পক্ষ নিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে একই প্রশ্ন তোলেন। আত্মীয় স্বজনেরা শুক্রবার বিধায়ক নেপাল মাহাতোর সঙ্গে যোগাযোগ করে পুরো ঘটনাটি জানান। নেপালবাবু বলেন, ‘‘এই হাসপাতালে আগেও শিশু চুরির ঘটনা ঘটেছে। আমি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত দাবি করেছি। তদন্তে যাঁদের গাফিলতি প্রমাণিত হবে, তাঁদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।’’

হাসপাতালের সহকারী সুপার তথা এসএনসিইউ-র নোডাল অফিসার রাজীব মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘শিশু উধাওয়ের অভিযোগ উঠেছে। সুপার যা বলার বলবেন।’’ হাসপাতালের সুপার শিবাশিস দাস বলেন, ‘‘রোগীর পরিবারের তরফে এ রকম একটি অভিযোগ উঠেছে। প্রাথমিক ভাবে মনে হচ্ছে, ওয়ার্ড থেকে ভুল ডেথ সার্টিফিকেট দিয়েছে। তবে তা কাম্য নয়। তদন্ত কমিটি গড়া হচ্ছে। প্রয়োজনে শিশুর ডিএনএ পরীক্ষাও করানো যেতে পারে। তবে তার জন্য আদালতের নির্দেশ প্রয়োজন।’’

ফুলচাঁদবাবু বলেন, ‘‘ডিএনএ পরীক্ষার রিপোর্টে যদি প্রমাণিত হয়ে যে ওই মৃত পুত্র সন্তানটি আমাদেরই, তাহলে আমাদের কিছু বলার নেই। কিন্তু সেই পরীক্ষা তো আদালতের নির্দেশ সাপেক্ষ। সে জন্য পুলিশের কাছে অভিযোগ জমা দিয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Death Certificate Hospital Newborn Twins
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE