Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

নাবালিকাদের এনে গ্রেফতার

পুলিশ ও স্থানীয় সুত্রে জানা গিয়েছে, ইন্দকুড়ির বাসিন্দা তাপস কলকাতায় দমদমে একটি গেঞ্জি কারখানায় কাজ করেন। মাস তিনেক আগে তিনি বন্ধু সম্রাটকেও গেঞ্জি কারখানায় নিয়ে যান। পুলিশের দাবি, জেরায় দুই যুবক এবং কিশোরীরা তাদের জানিয়েছেন, তাদের মধ্যে ভালবাসার সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। কিন্তু, কিশোরীদের পরিবারের তাতে আপত্তি। তাই তারা পুরুলিয়ায় পালিয়ে এসে বিয়ে করতে চেয়েছিল। কিন্তু, নাবালিকা বিয়ে যে বেআইনি, তা তাদের জানা ছিল না।

নিজস্ব সংবাদদাতা
মানবাজার শেষ আপডেট: ১০ অগস্ট ২০১৮ ০৭:৫০
Share: Save:

দেড় মাসের প্রেম। তাতেই দমদমের দুই বোন ভরসা করে প্রেমিকদের হাত ধরে পা বাড়িয়েছিল পুরুলিয়ার মানবাজারের ইন্দকুড়ির উদ্দেশে। কিন্তু, তারা ঘুণাক্ষরেও টের পায়নি, ফোনের টাওয়ার লোকেশন ধরে তাদের ধরতে সেখানে ওঁত পেতে রয়েছে পুলিশ। বুধবার রাতে দুই কিশোরীকে নিয়ে দমদমের গেঞ্জি কারখানার দুই কর্মী ইন্দকুড়িতে নিজেদের বাড়িতে ঢুকতেই পুলিশের হাতে ধরা পড়ে গেলেন। উদ্ধার হলেন বছর পনেরোর দুই কিশোরীও। বৃহস্পতিবার ভোররাতে দমদম জিআরপি থানার পুলিশ মানবাজার থানায় হাজির হয়ে নাবালিকা ফুঁসলে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগে দুই যুবককে গ্রেফতার করে। ধৃতদের সঙ্গে দুই কিশোরীকে নিয়ে বৃহস্পতিবার সকালে তারা কলকাতায় রওনা দেয়। ধৃতেরা হলেন সম্রাট কালিন্দী ও তাপস নামাতা।

পুলিশ ও স্থানীয় সুত্রে জানা গিয়েছে, ইন্দকুড়ির বাসিন্দা তাপস কলকাতায় দমদমে একটি গেঞ্জি কারখানায় কাজ করেন। মাস তিনেক আগে তিনি বন্ধু সম্রাটকেও গেঞ্জি কারখানায় নিয়ে যান। পুলিশের দাবি, জেরায় দুই যুবক এবং কিশোরীরা তাদের জানিয়েছেন, তাদের মধ্যে ভালবাসার সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। কিন্তু, কিশোরীদের পরিবারের তাতে আপত্তি। তাই তারা পুরুলিয়ায় পালিয়ে এসে বিয়ে করতে চেয়েছিল। কিন্তু, নাবালিকা বিয়ে যে বেআইনি, তা তাদের জানা ছিল না।

কী ভাবে পরিচয় হয়েছিল?

পুলিশের দাবি, যুবকেরা জানিয়েছে, বাজারে ঘোরাঘুরি করতে গিয়ে কয়েক মাস আগে দুই বোনের সঙ্গে তাদের পরিচয় হয়। মাস দেড়েক আগে তা ঘনিষ্ঠতায় পরিণত হয়। এ দিকে, দুই নাবালিকার আচরণের পরিবর্তন বাড়ির লোকের নজর এড়ায়নি। তাদের বকুনিও দেওয়া হয়। শোধরাতে না পেরে, শেষে বাড়ির এক সদস্যের সঙ্গে দুই বোনকে উত্তরপ্রদেশে নিজেদের গ্রামে পৌঁছে দেওয়ার পরিকল্পনা করেন পরিবারের লোকেরা। বুধবার সকালে দমদম স্টেশনে তারা হাজির হয়।

সে খবর আগেই সম্রাট ও তাপসকে জানিয়ে রেখেছিল দুই বোন। পুলিশ জানাচ্ছে, স্টেশনে পৌঁছে শৌচালয়ে যাওয়ার নাম করে দুই বোন বাড়ির লোকেদের চোখে ধুলো দিয়ে ওই দুই যুবকের সঙ্গে পালায়। দীর্ঘক্ষণ তারা না ফেরায় খোঁজ শুরু হয়। পরে দুপুরে দমদম জিআরপি থানায় অভিযোগ দায়ের হয়। পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জিআরপি অনুমান করে, ওই যুবকদের সঙ্গে তারা পালাতে পারে। গেঞ্জি কারখানায় গিয়ে দুই যুবকের পরিচিতদের জিজ্ঞাসাবাদ করতে গিয়ে পুলিশ জানতে পারে, তারা মানবাজারের উদ্দেশে রওনা হয়েছে।

ততক্ষণে দুই যুবকের সঙ্গে দুই বোন ধর্মতলা থেকে বাসে চেপে পুরুলিয়ার দিকে রওনা দিয়েছে। রাত সাড়ে ন’টার তারা মানবাজারে পৌঁছয়। পুলিশও দুই বোনের মোবাইল ফোনের লোকেশন দেখে জানতে পারে, শক্তিগড়, দুর্গাপুর, বাঁকুড়া, হাতিরামপুর হয়ে তারা এগোচ্ছে। দমদম জিআরপি থানা মানবাজার থানাকে ঘটনাটি জানায়। তাই চার জন বাড়িতে ঢোকা মাত্রই পুলিশ গিয়ে হাজির হয়। পুলিশের দাবি, দুই নাবালিকা পুলিশকে জানিয়েছে, তারা স্বেচ্ছায় এসেছে। কেউ তাদের জোর করেনি।

সম্রাটের বাবা পাগল কালিন্দী পুলিশকে জানান, ছেলে যে অপরাধ করেছে, তিনি বুঝতে পেরে মেয়ে দু’টিকে পুলিশের কাছে দিয়ে আসার কথা ভেবেছিলেন। তার আগেই বাড়িতে পুলিশ গিয়ে হাজির হয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE