Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
ধরলেন ব্লাড ব্যাঙ্কের কর্মীরাই

রোগীর আত্মীয় সেজে গ্রেফতার দুই দালাল

বোলপুর হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে  এবি পজ়িটিভ রক্তের প্রয়োজন আছে জানিয়ে শনিবার রাতে দুই ব্যক্তি হাসপাতালের ব্লাডব্যাঙ্কে উপস্থিত হন। ব্লাডব্যাঙ্ক থেকে রোগীর  নাম জিজ্ঞেস করায় তাঁরা ঠিকঠাক নাম বলতে পারছিলেন না।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বোলপুর শেষ আপডেট: ১২ অগস্ট ২০১৯ ০২:২০
Share: Save:

রোগীর আত্মীয় সেজে ব্লাডব্যাঙ্ক থেকে রক্ত নেওয়ার জন্য এসেছিলেন দু’জন। শেষ রক্ষা অবশ্য হয়নি।

ব্লাডব্যাঙ্কের কর্মীদের তৎপরতায় ধরা পড়ে গেলেন দু’জনই। তাঁরা দু’জনেই হাসপাতালের দালালচক্রে জড়িত বলে পুলিশ জেনেছে। শনিবার রাতে ঘটনাটি ঘটেছে বোলপুর মহকুমা হাসপাতালে। এই ঘটনায় হাসপাতালে দালালচক্রের দাপটের বিষয়টা আরও একবার সামনে এল।

বোলপুর হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে এবি পজ়িটিভ রক্তের প্রয়োজন আছে জানিয়ে শনিবার রাতে দুই ব্যক্তি হাসপাতালের ব্লাডব্যাঙ্কে উপস্থিত হন। ব্লাডব্যাঙ্ক থেকে রোগীর নাম জিজ্ঞেস করায় তাঁরা ঠিকঠাক নাম বলতে পারছিলেন না। এতেই সন্দেহ হয় ব্লাডব্যাঙ্কের কর্মীদের। তাঁরা বিষয়টি ব্লাডব্যাঙ্কের কর্তব্যরত চিকিৎসক সুধাকর মণ্ডল এবং বীরভূম ভলান্টারি ব্লাড ডোনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক নুরুল হককে জানান। ওই চিকিৎসক এবং নুরুল হক ব্লাডব্যাঙ্কে পৌঁছে ওই দুই ব্যক্তিকে চেপে ধরতেই বেরিয়ে আসে সব সত্য। তাঁরা জানতে পারেন, ওই দুই ব্যক্তি দালাল।

রাতেই শান্তিনিকেতন থানার পুলিশকে খবর দেওয়া হয়। পুলিশ উজ্জ্বল দাস এবং শম্ভু মাহাতো নামে ওই দুই দালালকে গ্রেফতার করে। ধৃত দু’জনেরই বাড়ি সিউড়িতে। পুলিশ জানিয়েছে, ওই দুই দালাল সিউড়ি থেকে টাকার বিনিময়ে বোলপুর ব্লাডব্যাঙ্কে রক্ত নিতে এসেছিলেন। ওই রোগীর পরিবারের এক জন রবিবার বলেন, ‘‘আমাদের রোগীকে বাঁচাতে রক্তের দ্রুত প্রয়োজন ছিল। সিউড়িতে রক্ত পাচ্ছিলাম না। তাই টাকার বিনিময়ে আমরা ওদের সঙ্গে যোগাযোগ করি। অগ্রিম এক হাজার টাকা দিয়েছিলাম। কথা ছিল, রক্ত পেলে বাকি টাকা দেওয়া হবে।’’ পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ধৃতদের মধ্যে এক জন কিছুদিন আগে একই কায়দায় বোলপুর ব্লাডব্যাঙ্ক থেকে রক্ত নিয়ে গিয়েছিলেন। সে বার অবশ্য তিনি ধরা পড়েননি। সেই রক্তের বিনিময়ে সিউড়ি সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এক রোগীর পরিবারের কাছ থেকে ২ হাজার টাকা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল ওই দালালের বিরুদ্ধে।

শুধু বোলপুর মহকুমা হাসপাতালই নয়, জেলার বিভিন্ন হাসপাতালের ব্লাডব্যাঙ্কে দালালচক্রের দৌরাত্ম্য নজরে এসেছে আগেও। রোগী এবং তাঁদের পরিজনেদের অভিযোগ, পুলিশ-প্রশাসনের সক্রিয়চতার অভাবে দালালদের এত রমরমা। কিছুদিন আগে রামপুরহাটে মোটরবাইকের পিছনে ফোন নম্বর দিয়ে রক্তের দালালেরা লিখে দিয়েছিলেন, যে কোনও গ্রুপের রক্তের প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন। একই অভিযোগ উঠেছিল সিউড়ি সদর হাসপাতালের ব্লাডব্যাঙ্কেও। বছর তিনেক আগে ব্লাডব্যাঙ্কের বোর্ডে রক্তের তালিকার পাশে ফোন নম্বর দিয়ে লেখা ছিল, রক্তের প্রয়োজনে যোগাযোগ করতে। সে খবর সংবাদপত্রে উঠে আসার পরে নড়েচড়ে বসে স্বাস্থ্য দফতর। রক্তের তালিকার বোর্ডটি পাল্টে ফেলেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। শনিবার রাতে বোলপুরের ঘটনা আর একবার প্রমাণ করে দিল, বীরভূমের সরকারি হাসপাতালে দালালচক্রের বাড়বাড়ন্ত ঠেকানো যায়নি।

সুধাকরবাবু বলেন, ‘‘বোলপুর ব্লাডব্যাঙ্ক কখনওই দালালদের প্রশ্রয় দেয় না। কর্মীদের তৎপরতাতেই ওই দালালদের চিহ্নিত করা গিয়েছে। ভবিষ্যতেও কর্মীদের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।’’ জেলা ভলান্টারি ব্লাড ডোনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক নুরুল হক বলেন, ‘‘আমরা রক্তদান আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত। গোটা রাজ্যেই এর কাজ করে থাকি আমরা। জেলার বিভিন্ন ব্লাডব্যাঙ্কে দালালচক্রের অভিযোগ বারবার উঠেছে। এই চক্র কোনও ভাবেই যাতে মাথাচাড়া দিয়ে না উঠতে পারে, সে জন্য আমরা প্রশাসনের কাছে অনুরোধ করব বিষয়টি দেখার জন্য।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Crime Middleman Arrest Police Blood Bank
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE