Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

শ্বশুরবাড়িতে দেহ তরুণীর, ধৃত স্বামী

বিয়ের মাত্র ১৪ দিনের মাথায় শ্বশুরবাড়িতে অস্বাভাবিক মৃত্যু হল এক তরুণীর। তাঁর বাপের বাড়ির অভিযোগ, খুন করা হয়েছে মেয়েকে।

সিউড়ির গ্রামে অঞ্জু বিবির(ইনসেট) মৃত্যুর পর গ্রামবাসীরা। —নিজস্ব চিত্র।

সিউড়ির গ্রামে অঞ্জু বিবির(ইনসেট) মৃত্যুর পর গ্রামবাসীরা। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
সিউড়ি শেষ আপডেট: ২৯ অক্টোবর ২০১৮ ০১:১১
Share: Save:

বিয়ের মাত্র ১৪ দিনের মাথায় শ্বশুরবাড়িতে অস্বাভাবিক মৃত্যু হল এক তরুণীর। তাঁর বাপের বাড়ির অভিযোগ, খুন করা হয়েছে মেয়েকে। প্রতিবাদ করতে গিয়ে মৃতার শ্বশুরবাড়ির হাতে বাপের বাড়ির লোকেদের নিগৃহীত হতে হয়েছে বলেও অভিযোগ। রবিবার সকালে সিউড়ি ১ ব্লকের ছোট আলুন্দার ঘটনা।

পুলিশ জানিয়েছে, মৃতার নাম আঞ্জু বিবি (২১)। তাঁর স্বামী, শ্বশুর ও শাশুড়ির বিরুদ্ধে লিখিত ভাবে খুনের অভিযোগ দায়ের করেছেন বধূর দাদা কুতুব মোমিন। মেয়েটির স্বামী শেখ গোলাম রসুল ওরফে চঞ্চলকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ঘটনার তদন্ত চলছে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, চলতি মাসের ১৪ তারিখ জুনিদপুর গ্রামের বাসিন্দা সেলিম মোমিনের মেয়ে আঞ্জুর সঙ্গে বিয়ে হয় ছোট আলুন্দার শেখ আসগরের ছেলে, পেশায় ইটভাটার শ্রমিক গোলাম রসুলের। মৃতার বাপের বাড়ির পক্ষ থেকে পুলিশের কাছে দাবি করা হয়েছে, বিয়ের পণ ও গয়না বাবদ ১ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছিল। এর পরেও বিয়ে সুখের হয়নি। আঞ্জু বিবির বাপের বাড়ির লোকজন দাবি করেছেন, গোলাম নিজে পাত্রী পছন্দ করে বিয়ে করলেও বিয়ের পর থেকে কোনও কারণে আঞ্জুকে তাঁর পছন্দ হয়নি। এই নিয়েই দই পরিবারে অশান্তি শুরু। দু’সপ্তাহের মধ্যেই বিষয়টি মিটমাটের জন্য দু’পক্ষের কথা হয়।

তার পরেও যে সমস্যা মেটেনি, রবিবার সকালে আঞ্জুর দেহ উদ্ধারের ঘটনা তা স্পষ্ট বলে তরুণীর পরিবারের দাবি। সকালে এই খবর ছড়িয়ে পড়তেই এলাকায় শোরগোল পড়ে। কুতুব মোমিনের দাবি, এ দিন সকাল ৬টা নাগাদ বোনের মৃত্যু সংবাদ পেয়ে ছোট আলুন্দা এসে দেখেন বিছানায় পড়ে রয়েছে দেহ। আঞ্জুর মুখের এক পাশ থেকে রক্ত বের হচ্ছিল। সারা শরীরে আঘাতের দাগ। বাড়িতে নেই তাঁর স্বামী, শ্বশুর ও শাশুড়ি। কুতুবের অভিযোগ, ‘‘বলেন, ‘‘বহু কষ্টে চেয়েচিন্তে বোনের বিয়ে দিয়েছিলাম। এ ভাবে ওর জীবন শেষ হয়ে যাবে, ভাবিনি। আমাদের সন্দেহ, যে কোনও ভাবে স্বামী-সহ শ্বশুরবাড়ির সদস্যেরাই ওকে শেষ করে দিয়েছে। আমরা এর বিচার চাই।’’

বধুর বাপের বাড়ির লোকেদের সঙ্গেই এ দিন এসেছিলেন জুনিদপুর গ্রামের বেশ কিছু বাসিন্দা। পরিস্থিতি দেখে তাঁরাও খেপে উঠেন। এক জন বললেন, ‘‘এ সব দেখে মাথায় রক্ত চড়ে গিয়েছিল। ইটভাটা থেকে ধরে নিয়ে আসা হয় গোলামকে। তাকে জিজ্ঞাসা করলে বলে , ‘আমি কিছু জানি না, নিজেই মুখে বালিশ চাপা দিয়ে মরেছে আঞ্জু।’ ওর কথা আমাদের কারওরই বিশ্বাস হয়নি।’’ গোলামকে আটকে রেখে পুলিশকে খবর দেওয়া হয়। অভিযোগ, সেই সময় গোলাম রসুলের পরিবারের পাশে থাকা ছোট আলুন্দার কিছু বাসিন্দা কুতুবদের উপর চড়াও হয়ে তাঁদের নিগ্রহ করেন। কুতুবের এক পড়শি পরে বলেন, ‘‘নিগ্রহ করার ঘটনাকে বড় করে দেখছি না। আমরা শুধু চাই, আমাদের গ্রামের মেয়ের খুনের বিচার।’’

এর পরেই ঘটনাস্থলে ছুটে আসে পুলিশ। দেহ উদ্ধার করে সিউড়ি জেলা হাসপাতালে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠায়। প্রাথমিক ভাবে পুলিশেরও অনুমান, ওই তরুণীকে খুন করা হয়েছে। জেলা পুলিশের এক কর্তা জানান, মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জনতে ময়না তদন্তের রিপোর্ট পাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। বিয়ের সময় থেকেই আঞ্জুর পরিবারের পাশে ছিলেন আলুন্দা গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান রুবিদা বিবি। খবর পয়ে এলাকায় ছুটে যান তিনিও। প্রধান বলছেন, ‘‘ওই পরিবারের জন্য খুব খারাপ লাগছে। ঘটনার জন্য যারা দায়ী, চাই তাদের কঠোর শাস্তি দাবি করছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Murder Suri সিউড়ি খুন
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE