Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

রাতে বাড়িতে বাবা, মেয়ের রহস্য-মৃত্যু

পুলিশ ও পরিবার সূত্রে জানা যায়, পেশায় চাষি কিশোর মণ্ডলের আসল বাড়ি রামপুরহাট থানার নাইশর গ্রামের বুনচুনপাড়ায়। বছর তিনেক থেকে তিনি রামপুরহাট শহরের ইরিগেশন কলোনিতে বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকতেন।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
রামপুরহাট শেষ আপডেট: ০৮ অগস্ট ২০১৯ ০০:১৮
Share: Save:

রহস্যজনক ভাবে একই রাতে মৃত্যু হল বাবা ও মেয়ের। মঙ্গলবার গভীর রাতে রামপুরহাট পুরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের ইরিগেশন কলোনি এলাকায় ঘটনাটি ঘটে। পুলিশ জানায়, মৃতেরা হলেন কিশোর মণ্ডল (৫৫) ও স্মৃতি মণ্ডল (২৬)। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, কীটনাশক খেয়ে বাবা ও মেয়ের মৃত্যু হয়েছে। ঘটনায় এখনও পর্যন্ত কোনও অভিযোগ দায়ের হয়নি। পুলিশ একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করেছে। ওঁরা দু’জন আত্মঘাতী হয়েছেন না মৃত্যুর পিছনে অন্য কোনও কারণ রয়েছে, তা ময়নাতদন্তের রিপোর্ট ছাড়া ঠিকঠাক বলা যাবে না বলে পুলিশ জানিয়েছে।

পুলিশ ও পরিবার সূত্রে জানা যায়, পেশায় চাষি কিশোর মণ্ডলের আসল বাড়ি রামপুরহাট থানার নাইশর গ্রামের বুনচুনপাড়ায়। বছর তিনেক থেকে তিনি রামপুরহাট শহরের ইরিগেশন কলোনিতে বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকতেন। কিশোরবাবু ছাড়াও বাড়িতে থাকতেন তাঁর স্ত্রী মাধবী মণ্ডল এবং ছোট মেয়ে, স্থানীয় বৈধড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা স্মৃতি। কিশোরবাবুর বড় মেয়ে প্রীতির বছর আটেক আগে মুর্শিদাবাদের সাগরদিঘিতে বিয়ে হয়। ছোট মেয়ে স্মৃতি তাঁর কর্মস্থল বৈধড়ায় রোজদিন গাড়িতে বাবার সঙ্গে যাতায়াত করতেন। পরিবারের লোকজন জানিয়েছেন, বাবা অন্ত প্রাণ ছিলেন স্মৃতি।

ঠিক কী ঘটেছিল? মাধবীদেবী বুধবার বলেন, ‘‘কেন এমন হল বলতে পারছি না। রাতে আমি ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। হঠাৎই পাশে শুয়ে থাকা মেয়ের চিৎকার শুনতে পেলাম। পরে বুঝতে পারলাম মেয়ে কীটনাশক খেয়েছে। ওর মুখ থেকেই জানতে পারলাম আমার স্বামীও কীটনাশক খেয়েছেন।’’ তাঁর দাবি, কিশোরবাবু আগে কীটনাশক খেয়েছেন দেখেই ছোট মেয়ে নিজেকে ঠিক রাখতে না পেরে কীটনাশক খান। কিন্তু, কেন বাবা-মেয়ে কীটনাশক খাবেন, সে প্রশ্নের জবাবে মাধবীদেবী কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘‘আমি কিছু জানি না। আমি কিছু বলতে পারব না।’’

ঘটনার খবর পেয়ে মঙ্গলবার গভীর রাতেই কিশোরবাবুদের ভাড়া বাড়িতে ছুটে যান তাঁর দাদা, রামপুরহাটের নিশ্চিন্তপুর এলাকার বাসিন্দা শিবপ্রসাদ মণ্ডল এবং তাঁদের খুড়তুতো ভাই ও ভাগ্নে। অবসর প্রাপ্ত শিক্ষক শিবপ্রসাদবাবু বলেন, ‘‘স্মৃতিই বাবা ও নিজের কীটনাশক খাওয়ার কথা প্রথমে ওর দিদিকে ফোনে জানিয়েছিল। পরে আমরা খবর পেয়ে রাত দেড়টা নাগাদ এখাসে এসে দেখি, ভাই নিজের বিছানায় ছটফট করছে। ভাইঝিও বারবার বমি করছে।’’ দু’জনকেই রাতে রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। কিন্তু, বাঁচানো সম্ভব হয়নি। হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, আগে মারা যান কিশোরবাবু। কিছু পরে মৃত্যু হয়েছে স্মৃতির।

পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, স্মৃতির বিয়ের জন্য যোগাযোগ চলছিল। এই নিয়ে পরিবারে কোনও অশান্তি ছিল না বলে দাবি করেন শিবপ্রসাদবাবু। মাধবীদেবীরও দাবি, তাঁদের সংসারে কোনও অশান্তি ছিল না। তবে যে বাড়িতে কিশোরবাবুরা ভাড়া থাকতেন, তার সদস্যেরা জানিয়েছেন, প্রায় রাতেই মা-মেয়ে এবং বাবার মধ্যে ঝগড়া হত। তবে, তাঁরা গুরুত্ব দিতেন না। মাধবীদেবী বলেন, ‘‘সংসারের ছোটখাট ঝামেলা কোন বাড়িতে নেই?’’ শিবপ্রসাদবাবু অবশ্য জানিয়েছেন, তাঁর ভাইয়ের মদ খাওয়া নিয়ে পরিবারের আপত্তি ছিল। তা নিয়ে ঝগড়া হত। তবে সেই কারণেই ভাই এবং ভাইঝি কীটনাশক খেয়েছেন কিনা, তা বলতে পারবেন না। কিশোরবাবুর বাজারে কিছু ধার দেনা ছিল বলে ওতাঁর দাদা জানান।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Unnatural Death Police
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE