প্রতীকী ছবি।
তৈরি হয়েছে পাম্প হাউস। পাড়ায় পাড়ায় পৌঁচ্ছে গিয়েছে জল সরবরাহের পাইপ। হয়েছে বৈদ্যুতিক সংযোগও। তবুও প্রশাসনের উদাসীনতায় দীর্ঘ ৯ বছরেও চালু হয়নি লাভপুরের ঠিবা গ্রামের জল সরবরাহ প্রকল্প।
ওই গ্রামে প্রায় ৬৬০টি পরিবারের বাস। নলকূপ রয়েছে ৪০টি। কিন্তু গ্রামবাসীদের সারাবছরই জলযন্ত্রণা ভোগ করতে হয়। কারণ অদূরেই বয়ে গিয়েছে কুঁয়ে নদী। রয়েছে লাঙ্গলহাটার বিলও। বর্ষায় নদী এবং বিলের জলে গ্রামের বড়ো অংশই দিনের পর দিন জলমগ্ন হয়ে থাকে। রাস্তা-ঘাটের পাশাপাশি তলিয়ে যায় নলকূপও। তখন প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে মহিলাদেরও লোহার কড়াইয়ে অন্যপাড়া থেকে জল আনতে হয়। গ্রীষ্মকালেও জলস্তর নেমে যাওয়ায় অকেজো হয়ে পড়ে বহু নলকূপ। মাঠের সাবমার্শিবল পাম্পই তখন অন্যতম ভরসা। অথচ ওই গ্রামেই ৯ বছর ধরে অসম্পূর্ণ হয়ে পড়ে রয়েছে একটি সজলধারা প্রকল্প।
প্রশাসন এবং স্থানীয় সূত্রেই জানা গিয়েছে, ২০০৮ সালে সংশ্লিষ্ট ব্লক প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে ওই গ্রামে প্রায় ১৮ লক্ষ ৬২ হাজার টাকা ব্যয়ে পরিশ্রুত পানীয় জল সরবরাহের উদ্দেশ্যে একটি সজলধারা প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। গ্রামের তিনটি পাড়ায় তৈরি হয় তিনটি পাম্প হাউস। তার মধ্যে একটি সরকারি জায়গায় হলেও বাকি দুটির জন্য জায়গা দান করেন দু’জন গ্রামবাসী। পাম্প বসানোর পাশাপাশি পাড়ায় পাড়ায় পৌঁচ্ছে যায় মূল জল সরবরাহ পাইপও।
প্রায় ৫ লক্ষ ৪৩ হাজার টাকা দিয়ে নেওয়া হয় বিদ্যুৎ সংযোগও। তারপরই দেখা দেয় বিপত্তি। প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনায় গ্রামে রাস্তা তৈরির সময় খোঁড়াখুড়ি জন্য কোথাও মাটির নীচে পাইপ ভেঙে যায়, আবার কোথাও বা অনেক নীচে চলে যায়। তখন মাঝপথে হাত গুটিয়ে নেয় ঠিকাদার। ওই প্রকল্পের উপভোক্তা কমিটির সভাপতি রথীন্দ্রনাথ মণ্ডল এবং সভাপতি সন্তোষ মণ্ডল জানান, সিডিউল অনুযায়ী তিনটি জলাধার-সহ আরও কিছু কাজ করার কথা থাকলেও ঠিকাদার মাঝপথে হাত গুটিয়ে নেওয়ায় আজও ওই প্রকল্প চালু করা যায়নি। প্রশাসনের সকলস্তরে জানিয়েও কোনও সুরাহা হয়নি।
এই পরিস্থিতিতে প্রকল্পটির ভবিষৎ নিয়েই অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। সংযোগ দেওয়ার পরেও প্রকল্প চালু না হওয়ায় বকেয়া বিলের জন্য বরাদ্দ ট্রান্সফর্মারটি খুলে নিয়ে চলে গিয়েছে বিদ্যুৎ দফতর। অন্যদিকে মাটির তলায় এবং পাম্প হাউসে অব্যবহারে নষ্ট হতে বসেছে মূল্যবান যন্ত্রাংশও। ওই প্রকল্পের ঠিকাদার কাজী মেহেরুদ্দিন বলেন, ‘‘টাকা নিয়ে হাত গুটিয়ে নেওয়ার অভিযোগ ঠিক নয়। আমি চুক্তিমাফিক কাজ করেই প্রাপ্য টাকা নিয়েছি।’’
এতে রীতিমতো ক্ষুব্ধ গ্রামের মানুষ। শিখা বাগদি, কৃষ্ণা বাগদি, সরস্বতী বাগদিরা বলেন, ‘‘বছরের বেশ কয়েকটা মাস আমরা জলবন্দি থাকি। সেইসময় কড়াই নিয়ে অন্যপাড়া থেকে জল আনতে হয়। ভেবেছিলাম সজলধারা প্রকল্প চালু হলে দুর্ভোগ ঘুচবে। কিন্তু কোথাই কী।’’ জেলা পরিষদের সভাধিপতি বিকাশ রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘প্রকল্পটির বিষয়ে খোঁজ নিয়ে যত দ্রুত সম্ভব পদক্ষেপ নিচ্ছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy