রাজমিস্ত্রির কাজ করে সংসার চালাই। যখন কাজ থেকে, তখনই রোজগার হয়। পাইকর, মিত্রপুর, নয়াগ্রাম, রুদ্রনগর— এই সমস্ত এলাকায় কাজ করি। লকডাউনের পর থেকে কোনও কাজ হচ্ছে না। শবেবরাত গেল। রোজগার বন্ধ। আগে পরবের দিন বাড়িতে ভাল রান্না হতো। কিন্তু এখন রোজ ডাল-ভাতের জোগান কী ভাবে হবে, তাই নিয়ে চিন্তায় ঘুম উড়েছে। বাড়িতে বাবা-মা, তিন ভাই, স্ত্রী, দুই মেয়ে, এক ছেলে। সবাই একসঙ্গে থাকি। এতগুলো লোকের রোজের অন্নসংস্থান রাজমিস্ত্রির কাজ করে হতো।
কাজ থাকলে রোজন সাড়ে তিনশো টাকা পেতাম। তা দিয়ে কোনও ভাবে চলে যাচ্ছিল। কিন্তু, লকডাউনের পর থেকে সব কাজ বন্ধ। আমার সঙ্গে আরও ত্রিশ জন শ্রমিক কাজ করেন। আমি এলাকায় ঘুরে ঘুরে কাজ ধরে আনি ওদের জন্য। ওদের সঙ্গে আমিও কাজ করি। এখন কাজ করতে বাইরে যেতে পারছি না। আমার উপরে আরও ত্রিশ শ্রমিকের পরিবার নির্ভরশীল হয়ে আছে। শ্রমিকরা আমাকে কাজ করতে যাওয়ার জন্য বলছেন। কিন্তু এই পরিস্থিতিতে সিমেন্ট থেকে লোহার রডের দোকান সব বন্ধ। কাজ করতে গেলে বেশি দামে সিমেন্ট কিনতে হবে। আর বাইরে কাজ করতে গেলেও পুলিশ ধরপাকড় করছে।
এই অবস্থায় হাতে কাজ থাকা সত্ত্বেও বাড়ি থেকে বেরোতে পারছি না। ঘরে বসেই কাটাতে হচ্ছে। কোনও কাজ না থাকার জন্য ওই শ্রমিকেরা আমার কাছে টাকা চেয়ে তাঁদের সংসার চালাচ্ছে। পরিস্থিতি বিবেচনা করে আমার সঞ্চয়ের টাকা থেকে শ্রমিকদের কিছু টাকা দিয়েছি। ফলে আমার সঞ্চয়ও শেষ। এ দিকে, আমার পরিবারে এত জনও আমার উপরেই নির্ভরশীল।
সরকার থেকে রেশনে খাদ্যসামগ্রী দিয়েছে। তাতে মেরেকেটে এক মাস চলবে। চারদিকে শুনছি, লকডাউন আর বাড়বে। সে ক্ষেত্রে আমাদের মতো দিন আনি দিন খাওয়া লোকেদের পরিস্থিতি খুবই খারাপ হবে। বাড়িতে টাকাও শেষ হয়ে যাবে দ্রুত। সামনে রমজান মাস। ওই দিনগুলোতে কী ভাবে সংসার চালাব, তাই নিয়ে চিন্তা হচ্ছে। আমার সঙ্গে যাঁরা কাজ করেন, তাঁদের কথাও তো ভাবতে হচ্ছে।
উৎসব এক দিকে, অন্য দিকে করোনাভাইরাস মোকাবিলায় বাড়িতে বসে থেকে লড়াই চালাতে হচ্ছে। এই অসম লড়াই কতদিন চালাতে পারি, দেখা যাক।
লেখক পেশায় রাজমিস্ত্রি
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy