Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

কাটল জট, দু’মাসেই কাজ শাল সেতুর

দেরিতে হলেও শেষ পর্যন্ত প্রশাসনিক তৎপরতায় জটিলতা কেটেছে। জেলা প্রশাসন ও জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের তরফে জানানো হয়েছে, পুজোর ঠিক আগেই সব পক্ষের মধ্যে আলোচনা সাপেক্ষে সমস্যা মিটেছে।

অসম্পূর্ণ: এ ভাবেই কাজ থেমে রয়েছে সেতুর। নিজস্ব চিত্র

অসম্পূর্ণ: এ ভাবেই কাজ থেমে রয়েছে সেতুর। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
দুবরাজপুর শেষ আপডেট: ০৭ নভেম্বর ২০১৯ ০০:১৬
Share: Save:

রানিগঞ্জ মোরগ্রাম ৬০ নম্বর জাতীয় সড়কে শাল সেতু নির্মাণের জন্য নির্দিষ্ট সময় অতিক্রান্ত। কিন্তু অভিযোগ, সেতুর ৮০ শতাংশ কাজ হয়ে যাওয়ার পরে এক নার্সারি মালিকের আপত্তিতে বছর দেড়েক থমকে গিয়েছিল সেতু নির্মাণের কাজ।

দেরিতে হলেও শেষ পর্যন্ত প্রশাসনিক তৎপরতায় জটিলতা কেটেছে। জেলা প্রশাসন ও জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের তরফে জানানো হয়েছে, পুজোর ঠিক আগেই সব পক্ষের মধ্যে আলোচনা সাপেক্ষে সমস্যা মিটেছে। শীঘ্রই কাজ শুরু হবে সেতুর।

পশ্চিম বর্ধমানের সঙ্গে বীরভূম, উত্তরবঙ্গ ও পূর্ব ভারতের যোগাযোগের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পথ রানিগঞ্জ মোরগ্রাম ৬০ নম্বর জাতীয় সড়ক। রাজ্য সড়ক থেকে ২০০৬ সালে ওই রাস্তাটি জাতীয় সড়কে উন্নীত হওয়ার পরে প্রতিনিয়ত যানবাহনের চাপ বেড়েছে। কিন্তু ওই রাস্তায় যাতায়াতের মূল সমস্যা ছিল পাণ্ডবেশ্বর পেরিয়ে অজয় এবং খয়রাশোলে থাকা শাল ও হিংলো নদীর কজওয়েগুলিই। প্রথমত অত্যন্ত সঙ্কীর্ণ ছিল সেতু দু’টি। দুই খয়রাশোল বা ঝাড়খণ্ডে বেশি বৃষ্টি হলেই ভেসে যেত দু’টি কজওয়ে।

এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি মেনে ওই জাতীয় সড়কে থাকা খয়রাশোলের শাল ও হিংলো নদীর সঙ্কীর্ণ কজওয়ের পরিবর্তে দু’টি সেতুর অনুমোদন মেলে ২০১৫ সালে। সেই বছরই দু’টি সেতু তৈরির বরাত পায় কলকাতার একটি ঠিকাদার সংস্থা। সমস্ত পর্ব মিটিয়ে ২০১৫ সালের অক্টোবরে দু’টি সেতুর কাজে হাত দেয় ঠিকাদার সংস্থা।

সময়সীমা নির্দিষ্ট ছিল ৩০ মাস। প্রস্তাবিত সেতুর পাশে উঁচু করে কজওয়ে গড়ে সেতু তৈরিতে হাত দেয় নির্মাণকারী সংস্থা। কাজ যে ভাবে এগোচ্ছিল তাতে দুর্ভোগ ২০১৮ সালেই পাকাপাকি ভাবে মিটে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তা হয়নি। হিংলো সেতুর কাজ প্রায় শেষ হলেও থমকে গিয়েছিল শাল সেতুর একাংশের কাজ।

জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গিয়েছে, সেতুটি শেষ করতে হলে দুবরাজপুরের দিকে গড়গড়া ঘাটের দিকে থাকা নার্সারি মালিকের জমি (যা দু’টি মৌজায় বিভক্ত) অধিগ্রহণ করতে হতো। কিন্তু যে পরিমাণ জমি জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ অধিগ্রহণ করবেন, তার জন্য নির্ধারিত ক্ষতিপূরণ ‘পছন্দ’ হয়নি নার্সারি মালিকপক্ষের। অভিযোগ, কাজে বাধা দেওয়া হয়। সেতু শেষ করতে নার্সারির জায়গায় আরও একটি স্তম্ভ তৈরি করার কথা। তার জেরে ২০১৮ সালের গোড়া থেকেই থমকে গিয়েছিল সেতু তৈরির কাজ।

নার্সারি মালিক সঞ্জয় মণ্ডল, কাঞ্চন পালের দাবি ছিল, তাঁদের প্রায় ২ বিঘা জায়গা চলে যাচ্ছে সেতু তৈরির জন্য। কিন্তু উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ ও নার্সারিতে ঢোকার পথ চাই বলে দাবি জানালেও সুরাহা হয়নি বলেই আপত্তি তোলা হয়েছিল বলে তাঁদের বক্তব্য।

অন্য দিকে অনেক আগেই সেতুর কাজ শেষ করার কথা থাকলেও কেন প্রশাসন ও জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছেন না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছিলেন সাধারণ মানুষ।

জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিলেন, জমি অধিগ্রহণ ও ক্ষতিপূরণ তাঁরা দেন ঠিকই। কিন্তু কী দর হবে, তা ঠিক করে জেলা প্রশাসন। একটি অঙ্কও ঠিক করা হয়েছিল। শতক প্রতি ৩৩ হাজার টাকার একটু বেশি। অভিযোগ, সেই অঙ্ক অন্যরা মানলেও মানছিলেন না নার্সারি মালিক। প্রশাসন তৎপর হওয়ায় পরে অবশ্য প্রশাসনের কথা মেনে নেন নার্সারির মালিকপক্ষ। তাঁদের একটাই দাবি— সেতু হোক, কিন্তু নার্সারিতে ঢোকার রাস্তা করে দিতে হবে।

অতিরিক্ত জেলাশাসক (ভূমি ও ভূমি সংস্কার) পূর্ণেন্দু মাজি বলছেন, ‘‘সকলে মানলে কেন তাঁরা মানছেন না তা নিয়ে সওয়াল করার পরে সমস্যা কেটেছে।’’ জাতীয় সড়কের ডিভিশন ১২-এর এগজিকিউটিভ ইঞ্চিনিয়ার নিশিকান্ত সিংহ জানিয়েছেন, ঝামেলা যখন মিটেছে, দু’একদিনের মধ্যে কাজ শুরু হওয়ার কথা। দু’মাসের মধ্যেই সেতুর কাজ শেয হবে আশা করা যায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Dubrajpur NH60 Bridge
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE