লোকসভা ভোটে সিউড়ি পুরসভার ওয়ার্ড ভিত্তিক ফলাফলই কাঁপুনি ধরিয়েছিল শাসক শিবিরে। সম্প্রতি সিউড়ি পুরসভার বর্তমান তৃণমূলশাসিত বোর্ডের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে সেটা কয়েকগুন বাড়িয়ে দিয়েছেন দলেরই বিধায়ক স্বপনকান্তি ঘোষ। সেই কাটা ঘায়ে আবার নুনের ছিটে লাগল ওয়ার্ড ভিত্তিক আসন সংরক্ষণের তালিকা প্রকাশিত হওয়ার পরই।
কেন না ওই তালিকা অনুযায়ী পুরপ্রধান ও উপ-পুরপ্রধান এই দুজনের আসনই এ বার সংরক্ষণের তালিকায় চলে গিয়েছে। তাই ওই ওয়ার্ডগুলি থেকে এ বার তাঁরা প্রার্থী হতে পারবেন না। তৃণমূল সূত্রের খবর, আসন্ন পুরভোটের আগে উদ্ভুত পরিস্থিতিতে কার্যত দিশেহারা অবস্থা দাঁড়িয়েছে। লড়াইটা যে ভীষণ কঠিন হয়ে দাঁড়াবে স্বীকার করে নিয়েছেন তৃণমূলের এক শীর্ষ নেতাও।
“নিয়ম মেনেই পুনর্বিন্যাস ও আসন সংরক্ষণ তালিকা প্রকাশ হয়।
এই নিয়ে ব্যক্তিগতভাবে আমার আপত্তির কোনও জায়গা নেই।”
—পুরপ্রধান উজ্জ্বল মুখোপাধ্যায়
প্রসঙ্গত, পুনর্বিন্যাসের ফলে সিউড়ি পুরসভার ওয়ার্ড সংখ্যা ১৮ থেকে বেড়ে ১৯ হচ্ছে বলে মঙ্গলবার জেলাশাসকের নির্বাচনী বিভাগ থেকে জানা গিয়েছে। ৩৫ হাজার থেকে ৮৫ হাজার জনসংখ্যার মধ্যে থাকা সিউড়ি পুরসভা ‘ডি’ ক্যাটাগরিতে পড়ে। এ বার পুরসভার ২ ও ১৬ নম্বর ভেঙে ১৯ নম্বর ওয়ার্ডটি গঠিত হতে চলেছে। যদিও সমস্যা ওয়ার্ড সংখ্যা বেড়ে যাওয়া নয়। সমস্যা আসন সংরক্ষেণের প্রকাশিত তালিকা নিয়ে। মোট ওয়ার্ডের মধ্যে যথাক্রমে ১৮ ও ১৯ তফসিলিজাতির জন্য সংরক্ষিত। ৪ ও ১৪ তফসিলি মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত। ২, ৫, 9, ১৩ ও ১৬ সাধারণ মহিলাদের জন্য এবং বাকি ১০টি ওয়ার্ড সর্বসাধারণের জন্য। পুরপ্রধান উজ্বল মুখোপাধ্যায় ও উপপুরপ্রধান উজ্বল চট্টোপাধ্যায় গতবার যথাক্রমে ১৬ নম্বর ও ২ নম্বর আসন থেকে জয়ী হয়েছিলেন। এ বার এই দু’জনের আসনই মহিলা সংরক্ষিত। ফলে এ বার তাঁদের অন্য ওয়ার্ড থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হবে। যেটা মোটেই সুবিধের হবে না বলেই ঘনিষ্ট মহলে বলেছেন তাঁরা। তার উপর লোকসভা ভোটে ১৮টির মধ্যে ১৫টি আসনেই বিজেপির এগিয়ে থাকা, পারিপার্শ্বিক অবস্থা, পুর-পরিষেবা নিয়ে নানান অভিযোগের মধ্যে অসমাপ্ত জলপ্রকল্প নিয়ে খোদ তৃণমূল বিধায়ক স্বপনকান্তি ঘোষের পুরবোর্ডের বিরুদ্ধে তোপ, দলেরই কাউন্সিলরদের একটা অংশের গতিবিধি এ সব মোটেও তৃণমূলের অনুকুলে নেই দাবি বিরোধীদের।
গত নির্বাচনে পুরভোটের ফালাফল ধরলে ১৮টি আসনের মধ্যে তৃণমূলের দখলে ছিল ১৫। বাকি তিনটি আসন পায় সিপিএম, কংগ্রেস ও ফরওয়ার্ড ব্লক। যদিও মাস কয়েক আগে দীপক দাস নামে এক তৃণমূল কাউন্সিলর বিজেপিতে যোগ দিলেও তৃণমূলের অনুকূলে ১৪ জন কাউন্সিলর ছিল। কিন্তু ওই সংখ্যক আসন তো নয়ই, বোর্ড ধরে রাখা এ বার সম্ভব হবে না বলে মত বিজেপি, সিপিএম, কংগ্রেসের মতো বিরোধী দলগুলির। কারণ, হিসেবে বিরোধী শিবিরের নেতারা বলছেন, “চূড়ান্ত অব্যবস্থার মধ্যে দিয়ে পরিচালিত হয়েছে বর্তমান বোর্ড। গত সাড়ে চার বছর পুর-পরিষেবা নিয়ে বিস্তর অভিযোগ পুরবাসীর এবং উন্নয়নও কার্যত স্তব্ধ ছিল সাড়ে চার বছর। পুজোর ঠিক আগে থেকে আসন্ন পুরভোটের কথা মাথায় রেখে রাস্তা, নিকাশি নালা-সহ কিছু উন্নয়নমূলক কাজে হাত দিলেও তা মানুষের মনজয় করার পক্ষে যথেষ্ট হবে না। বিরোধী শিবিরের আরও দাবি, বোর্ড কতটা কাজ করেছে তা তো দলের বিধায়কই বলে দিয়েছেন। তাতে পুরপ্রধান ও উপপুরপ্রধান কোথায় দাঁড়ালেন, না দাঁড়ালন সেটা খুব একটা বড় কথা নয়। তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়া কাউন্সিলর দীপক দাসের কটাক্ষ, “ঈশ্বর ওঁদের সম্মান বাঁচিয়েছেন। কেন না যেভাবে কাজ হয়েছে তাতে নিজেদের ওয়ার্ডে দাঁড়তে হলে সম্মানহানি হত বলেই আমি মনে করি।” প্রায় একই দাবি সিপিএমের টিকিটে জয়ী হয়ে বর্তমানে কংগ্রেস কাউন্সিলর ইয়াসিন আখতারও। যা কাজ হয়েছে গত কয়েক বছরে তাতে যে কোনও ওয়ার্ড থেকে তৃণমূল কাউন্সিলরদের জয়ী হওয়াই কষ্টকর হবে।” যদিও বিরোধীদের কটাক্ষ উড়িয়ে জেলা তৃণমূলের সহসভাপতি মলয় মুখোপাধ্যায় বলেন, “বর্তমানে যথেষ্ট ভাল কাজ করছে সিউড়ি পুরসভা। আর নির্বাচন নিয়ে এখন থেকে এ সব কথা বালার মানে নেই।” যদিও প্রকাশ্যে এই নিয়ে মন্তব্য করতে চাননি পুরপ্রধান উজ্বলবাবু। তবে শুধু বললেন, “নিয়ম মেনেই পুনর্বিন্যাস ও আসন সংরক্ষণ তালিকা প্রকাশ হয়। এই নিয়ে ব্যক্তিগতভাবে আমার আপত্তির কোনও জায়গা নেই।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy